শেষ আপডেট: 3rd December 2024 13:34
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ভারতকে ‘ল্যাবরেটরি’ বলে উল্লেখ করলেন মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস (Bill Gates)। সম্প্রতি একটি পডকাস্টে এমন মন্তব্য করার পরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। একটি ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এই মন্তব্য করে বসেন তিনি। এর ফলে অসংবেদনশীলতার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, লিঙ্কডইনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা রিড হফম্যানের সঙ্গে আলাপচারিতা চলছিল বিল গেটসের। সেখানেই ভারতের উন্নতির প্রশংসা করছিলেন তিনি। বলছিলেন, তাঁর ফাউন্ডেশন ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস’-এর সঙ্গে ভারতের জোট বাঁধার কথাও।
কিন্তু এই আলাপচারিতার মাঝে তিনি মন্তব্য করে বসেন এক পুরনো বিতর্কিত ভ্যাকসিন ট্রায়াল নিয়ে। ২০০৯ সালে গেটস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ওই ভ্যাকসিন ট্রায়াল হয়েছিল। সে প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বিল গেটস পডকাস্টে বলেন, ‘ভারত এমন একটি দেশ, যেখানে অনেক চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্য, পুষ্টি, এবং শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নতি হচ্ছে। ২০ বছরের মধ্যে এখানকার মানুষ আরও ভাল অবস্থায় থাকবে। ভারত আসলে একটি ল্যাবরেটরি, যেখানে নানারকম ট্রায়ালের পরে তার ফলাফল অন্যত্র প্রয়োগ করা যায়।’
এই প্রসঙ্গে স্কটল্যান্ডের ‘দ্য স্কিন ডক্টর’ নামে পরিচিত এক চিকিৎসক টুইটারে এই নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন। লিখেছেন, ‘গেটসের টাকায় আরও কত এনজিও এমন পরীক্ষা চালাচ্ছে তা কে জানে! এ ধরনের কার্যকলাপ উদ্বেগজনক।’
"It's a kind of laboratory to try things. When proven in India, they can then be taken to other places."
— THE SKIN DOCTOR (@theskindoctor13) December 2, 2024
— Bill Gates on India.
In 2009, the American NGO PATH (Program for Appropriate Technology in Health), in collaboration with the ICMR, conducted clinical trials of a cervical… pic.twitter.com/66aFVrxCiM
২০০৯ সালের বিতর্কিত ট্রায়াল
২০০৯ সালে PATH নামের একটি এনজিও, দেশের ১৪ হাজার জন আদিবাসী স্কুলছাত্রীর উপর জরায়ুমুখের ক্যানসারের ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালায়। গেটস ফাউন্ডেশনের টাকায় চলেছিল এই ট্রায়াল। তেলেঙ্গানার খাম্মাম এবং গুজরাতের ভাদোদরাতে এই পরীক্ষা হয়েছিল।
অভিযোগ, ট্রায়াল শুরুর কয়েক মাসের মধ্যেই বেশ কয়েকটি মেয়ে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শিকার হয় এবং সাতজনের মৃত্যু ঘটে। যদিও মৃত্যুগুলি সে সময়ে অন্যান্য কারণে ঘটেছে বলেই চিহ্নিত হয়েছিল, কিন্তু সেই তদন্তেও অস্বচ্ছতার অভিযোগ ওঠে।
জানা গেছে, ওই কিশোরীদের মৃত্যুর তদন্তে উঠে আসে, যে এই ট্রায়ালকে স্বাস্থ্য প্রকল্প হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি ছিল একটি গবেষণা। এমনকি অংশগ্রহণকারীদের সম্মতির জন্য অভিভাবকদের না জানিয়ে, হোস্টেলের ওয়ার্ডেনদের দিয়ে সরাসরি সই করিয়ে নেওয়া হয়। এতে পরিবারের কেউ ঝুঁকির কথা জানতেই পারেননি।
শুধু তাই নয়, এই পরীক্ষা পরিকল্পিত ভাবেই মূলত স্বাস্থ্যসেবা ও সচেতনতার অভাব থাকা আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে চালানো হয়েছিল, যাতে তেমন জানাজানি না হয়। অভিযুক্ত এনজিও অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, মৃত্যুগুলি সংক্রমণের কারণে ঘটেছিল এবং কেউ কেউ আত্মহত্যাও করেছিলেন।
সমালোচকদের দাবি, সাম্প্রতিক পডকাস্টে বিল গেটস এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে, ভারতকে ‘ল্যাবরেটরি’ বলে উল্লেখ করে বস্তুত সমস্ত অভিযোগই সত্যি বলে মেনে নিলেন।
ফলে নতুন করে অভিযোগ উঠেছে, গেটস ফাউন্ডেশনের মতো সংস্থাগুলি ভারত এবং আফ্রিকার মতো উন্নয়নশীল দেশগুলিকে গবেষণার জন্যই ব্যবহার করে।