মৃতের সংখ্যা নিয়ে এখনও মুখে কুলুপ মস্কোর।
শেষ আপডেট: 17th April 2024 21:05
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছিল, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে তাদের ৫৯৩৭ জন সৈন্য প্রাণ হারিয়েছে। তারপর থেকে আর মৃতের সংখ্যা নিয়ে বিশেষ উচ্চবাচ্য করেনি মস্কো। এমনিতেও রাশিয়ায় ভেতরের খবর পাওয়া মুশকিল। ফলে বিভিন্ন আন্দাজের ভিত্তিতেই এতদিন ভাবা হচ্ছিল হতাহতের হিসেব। এবার সংবাদসংস্থা বিবিসি একাধিক রুশ সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ও আরও নানা সূত্র হিসেব করে জানিয়েছে, এই মুহূর্তে মৃতের সংখ্যা ৫০ হাজারের কাছাকাছি! অর্থাৎ, ২০২২-এর সেপ্টেম্বরের হিসেবের চাইতে আটগুণ বেশি।
বিভিন্ন সূত্র ধরে তাদের অনুসন্ধান চালিয়েছে বিবিসি। দেখা হয়েছে সংবাদপত্রের রিপোর্ট, সরকারি প্রতিবেদন, পারিবারিক প্রতিক্রিয়া, সমাজমাধ্যমের পোস্ট এমনকি বিভিন্ন জায়গায় নতুন সমাধিস্থানের আকাশ থেকে তোলা (এরিয়াল) ছবি অবধি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই কাজে বিবিসির রাশিয়া শাখার সঙ্গে হাত মিলিয়েছে রুশ সংবাদসংস্থা মিডিয়াজোনা। জানা গিয়েছে, যুদ্ধের স্রেফ দ্বিতীয় বছরেই মারা গিয়েছে ২৭,৩০০ জন, যা প্রথম বছরের তুলনায় ২৫% বেশি।
এই বিপুল পরিমাণ প্রাণহানির ব্যাপারে কোনও সরকারি তথ্য দেয়নি রাশিয়া। মস্কোর কর্তারাও কোনও মন্তব্যে রাজি হ'ননি। তবে বিবিসির বক্তব্য, রাশিয়ার যুদ্ধ পরিকল্পনাতেই প্রাণহানির সংখ্যা এতটা বেড়ে গিয়েছে। মস্কোর সেনাকর্তাদের ভাষায়, সেই পরিকল্পনার পোশাকি নাম 'মিট গ্রাইন্ডার' বা 'মাংস পেষাইয়ের কল'। যেহেতু ইউক্রেন-রাশিয়া সীমান্তের এক বিরাট অংশ মাইলের পর মাইল সমভূমি, ফলে, প্রথম ধাক্কাতেই ইউক্রেনীয় সেনাকে অভিভূত করতে বিপুল পরিমাণ রুশ সেনাকে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে ফ্রন্টলাইনে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার নাৎসি 'ব্লিৎজক্রিগ' কৌশলের মত এই কৌশলে প্রথমেই গোলাগুলির সামনে পড়ে যাচ্ছে স্থলবাহিনী। যার ফলে প্রাণহানির ঘটনা রোখা যাচ্ছে না।
এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সৈন্যদের অনভিজ্ঞতা। এক বিশাল সীমান্ত জুড়ে প্রচুর পরিমাণ সৈন্য যুদ্ধে ব্যস্ত থাকায় টান পড়েছে সেনাবাহিনীর জোগানে। ফলে দেশের তরুণ প্রজন্মের এক বড় অংশকে বাধ্যতামূলকভাবে যুদ্ধে পাঠাচ্ছে মস্কো। নেওয়া হয়েছে জেলবন্দি কয়েদিদের। যাদের কার্যত যুদ্ধক্ষেত্রে থাকার কোনও পূর্ব অভিজ্ঞতাই নেই। রাতারাতি তাদের চুক্তিপত্রে সই করিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ফ্রন্টলাইনে। এমন একজনের মা জানিয়েছেন, তাঁর ২৫ বছরের ছেলে কখনও আগ্নেয়াস্ত্রই চালায়নি। তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সরাসরি গোলাবারুদের মাঝখানে। অনেকের জুটেছে মাত্র দিনপনেরোর প্রশিক্ষণ!
এতেই শেষ নয়। এই নবাগতরা যে সবসময় রুশ সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্তাদের অধীনেই লড়েছেন এমন নয়। রুশ সেনার সঙ্গে লড়ছে একাধিক ভাড়াটে বাহিনী। যেমন ইয়েভজেনি প্রাইগোজিনের 'ওয়াগনার' গোষ্ঠী! এদের না আছে কোনও নিয়ন্ত্রণ, না আছে কোনও সঠিক পরিকল্পনা। এঁদের অধীনেও লড়েছে অনেকে। কোনও হিসেব ছাড়াই যাদের রীতিমত কচুকাটা হতে হয়েছে। বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, এরকম ভাড়াটেদের অধীনে যারা লড়েছে, তাদের আয়ু ছিল গড়ে তিন মাস। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সরাসরি যাদের নিয়েছে, তাদেরও আয়ু মাসদুয়েকের বেশি টেকেনি!
কার্যত হাড়হিমকরা এই প্রতিবেদন ইতিমধ্যেই তোলপাড় ফেলেছে বিশ্বজুড়ে! যদিও, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়ায় এসবে অবাক হওয়ার মত কিছু নেই।