শেষ আপডেট: 6th February 2025 17:56
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সামরিক বিমানে চড়িয়ে বেআইনিভাবে বসবাসকারী ১০৪ জন ভারতীয়কে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। কিন্তু তাঁদের যেভাবে ফেরত পাঠানো হয়েছে তা নিয়ে ইতিমধ্যে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। একাধিক ছবি ভাইরাল হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে, তাঁদের সকলের কোমরে বাঁধা রয়েছে চেন, পরানো হয়েছে হাতকড়া।
আমেরিকা থেকে দেশে ফিরতেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা সামনে আসতে শুরু করেছে। কিন্ত এখন লাখ টাকার প্রশ্ন, এই ভারতীয়রা কীভাবে আমেরিকায় পৌঁছলেন? মাঝে কোন কোন দেশ হয়ে তাঁদের যেতে হয়েছিল? এর জন্য ঠিক কত টাকা খরচ করতে হয়েছিল? সেই প্রশ্নের উত্তর দিলেন হরিয়ানার করনাল এলাকার বাসিন্দা আকাশের পরিবার।
বুধবারই আকাশকে আমেরিকা থেকে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। দেশে ফেরত আসার পরদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার আকাশের ঝুঁকিপূর্ণ বিদেশ সফরের ভয়াবহ কাহিনী সামনে এনেছেন তাঁর পরিবার। সোশ্যাল মিডিয়ায় আকাশের পরিবারের শেয়ার করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, পানামার গভীর জঙ্গলে অনান্য সঙ্গীদের সঙ্গে ক্যাম্প করে রয়েছেন তিনি।
পরিবারের অভিযোগ, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মার্কিন মুলুকের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন আকাশ। কিন্তু যাত্রাপথে সোজা রাস্তা ছেড়ে ইচ্ছাকৃতভাবে পানামা খাল পেরোতে বাধ্য করা হয়েছিল তাঁদের। ১০ মাস আগে ভারত ছেড়ে আমেরিকায় পাড়ি দিলেও গত ২৬ জানুয়ারি মেক্সিকো সীমান্ত টপকে মার্কিন মুলুকে পৌঁছেছিলেন।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের দুটি অবৈধ রাস্তা রয়েছে। একটি সরাসরি মেক্সিকোর মাধ্যমে এবং অন্যটি ‘ডাঙ্কি রুট’ নামে পরিচিত। এই রাস্তায় যারা অবৈধ ভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে চান তাদের বিভিন্ন দেশ অতিক্রম করতে হয়। এই কাজের জন্য এজেন্ট থাকে। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এজেন্টরা জাহাজের কন্টেনার বা গাড়িতে গোপনে পাচার করা থেকে শুরু করে জাল নথি সরবরাহ, সবকিছুই করে।
আকাশের পরিবারের অভিযোগ, সরাসরি মেক্সিকোর মাধ্যমে আমেরিকায় পৌঁছনোর জন্য এজেন্ট মোটা টাকা নিলেও তাঁকে আরও দীর্ঘ ও বিপজ্জনক ডাঙ্কি রুট দিয়েই আমেরিকায় পাঠানো হয়।
পরিবার জানিয়েছে বুধবার বাড়ি ফেরার আগে ছেলের সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল ২৬ জানুয়ারী, মার্কিন মুলুকের চেকপোস্টে ধরা পড়ার পরপরই।
অল্প সময়ের জন্য আটক থাকার পর আকাশকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জোর করে যুবককে নির্বাসন পত্রে সই করতে বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ। আকাশকে বলা হয়েছিল যে নির্বাসন সংক্রান্ত কাগজে সই না করলে তাঁকে আমেরিকায় জেল খাটতে হবে।
এদিকে বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবারটির আর্থিক অবস্থা খারাপ বলেই দাবি করেছেন আকাশের দাদা শুভম। তিনি জানিয়েছেন, তবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় যখন ভাইয়ের জোরাজুরিতে ওকে বিদেশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিই।
তাঁর আরও অভিযোগ, এজেন্টদের প্রায় ৭ লক্ষ টাকা দিতে হয়েছিল। এছাড়া অবৈধভাবে বিদেশযাত্রার খরচ হিসেবে আরও ৬৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে তাঁদের। এর জন্য তাঁদের একমাত্র সম্বল আড়াই বিঘা জমিও বিক্রি করতে হয়েছে। ঋণ নেওয়া, জমি বিক্রি, এমনকি গয়না বন্ধকী রাখতে হয়েছে। সব হারিয়ে এখন তাঁদের পথে বসার অবস্থা। অবিলম্বে এজেন্টদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সরব হয়েছেন তিনি।