ক্রমশ নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছেন ইরানের ৮৬ বছর বয়সী সুপ্রিম লিডার তথা সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনি (Ayatollah Ali Khamenei)।
আয়াতোল্লাহ আলি খামেনি
শেষ আপডেট: 17 June 2025 18:16
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ক্রমশ নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছেন ইরানের ৮৬ বছর বয়সী সুপ্রিম লিডার তথা সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনি (Ayatollah Ali Khamenei)। ইজরায়েলের ধারাবাহিক বিমান হামলায় তাঁর প্রধান সামরিক ও নিরাপত্তা উপদেষ্টারা নিহত হওয়ায় ঘনিষ্ঠ বৃত্তে বড় শূন্যতা তৈরি হয়েছে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে কৌশলগত ভুলের ঝুঁকি বাড়ছে বলে জানিয়েছেন তাঁর সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত অন্তত পাঁচজন।
রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি নিহত হয়েছেন বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (রেভল্যুশনারি গার্ডস) শীর্ষ কমান্ডার হোসেন সালামি, বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র বিভাগের প্রধান আমির আলি হাজিজাদে এবং গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি। তাঁরা সবাই খামেনির ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন।
প্রায় ১৫ থেকে ২০ জনের একটি উপদেষ্টা দল নিয়মিত সময়ে খামেনির দপ্তরে মিলিত হতেন। এদের বেশিরভাগই বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা, ধর্মীয় নেতা এবং রাজনীতিক। খামেনির প্রতি তাঁদের নিঃশর্ত আনুগত্য ও ইসলামী প্রজাতন্ত্রের আদর্শ রক্ষায় দৃঢ় প্রত্যয়ই ছিল বৈশিষ্ট্য।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে খামেনির হাতে রয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়কত্ব, যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা এবং শীর্ষ বিচারক ও সামরিক কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও বরখাস্ত করার অধিকার। তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তিনি তাঁর উপদেষ্টাদের বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি শুনে থাকেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী অতিরিক্ত তথ্যও সংগ্রহ করেন।
সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে এক সূত্র বলেন, "দুইটি বিষয় খামেনিকে বুঝতে যথেষ্ট — তিনি অত্যন্ত একগুঁয়ে কিন্তু একই সঙ্গে খুবই সতর্ক। এ কারণেই তিনি এতদিন ক্ষমতায় টিকে আছেন।"
অর্থনৈতিক অবস্থা ক্রমশ খারাপ হওয়ায় দেশের ভেতরে অস্থিরতার ঝুঁকি বাড়ছে। তার ওপর ইজরায়েলের সঙ্গে চলমান সংঘাত আরও চাপ সৃষ্টি করছে। ইজরায়েল ইতোমধ্যে ইরানের পারমাণবিক ঘাঁটি, সামরিক ঘাঁটি ও কমান্ডারদের লক্ষ্য করে একাধিক হামলা চালিয়েছে। পাল্টা জবাবে ইরানও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
এদিকে, খামেনির সন্তান মুজতবা খামেনি ধীরে ধীরে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় আরও প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন। গত ২০ বছরে তিনি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করে ইরানের নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক কাঠামোয় উল্লেখযোগ্য নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন। অনেকেই মনে করেন, বয়সের ভারে নতজানু খামেনির পর তিনিই হতে পারেন সম্ভাব্য উত্তরসূরি।
এছাড়া তাঁর দপ্তরের রাজনৈতিক নিরাপত্তা বিষয়ক উপপ্রধান আলি আসগর হেজাজি, প্রধান সচিব মোহাম্মদ গোলপায়েগানি, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি আকবর ভেলায়াতি ও কামাল খারাজি এবং প্রাক্তন স্পিকার আলি লারিজানিও খামেনির গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শদাতা হিসেবে রয়েছেন।
তবে বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্বের এই বিপর্যয় ইরানের সামরিক ও আঞ্চলিক কৌশলগত অবস্থানকে স্পর্শকাতর করে তুলেছে। কারণ খামেনি ১৯৮৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এই বাহিনীকে আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব বিস্তারের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন।
সম্প্রতি ইরানের "অ্যাক্সিস অফ রেজিস্ট্যান্স" জোটও ইজরায়েলের হামলায় বড় ধাক্কা খেয়েছে। গত বছর সেপ্টেম্বরে ইজরায়েলের হামলায় হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হন। এছাড়া ডিসেম্বর মাসে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বিদ্রোহীদের হাতে ক্ষমতাচ্যুত হন। তার ফলে খামেনির খুঁটিগুলো আর নেই। ভিতটাই নড়বড়ে হয়ে গেছে। তবে কি এবার সত্যিই আত্মসমর্পণ করবেন তিনি। নাকি তাঁর আস্তিনে এখনও লুকনো আছে গোপন অস্ত্র। দেখা যাক।