শেষ আপডেট: 26th October 2024 14:47
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ইরানকে 'অনুতাপ' করতে হবে, সেই হুমকিই সফল করলেন ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। ইহুদি রাষ্ট্রকে লক্ষ্য করে ২০০ ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার বদলায় তেহরানের ২০টি সেনা ও ড্রোন ঘাঁটিকে নিশানা করে ইজরায়েলের ১০০ অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান বোমাবর্ষণ করে। তিন দফায় খোদ নেতানিয়াহুর নেতৃত্ব ও নজরদারিতে চলা 'অনুতাপের অভিযান'-এর (অপারেশন ডে'জ অফ রিপেন্ট্যান্স) গোপন কর্মকাণ্ডগুলি কী ছিল, একবার চোখ বুলিয়ে দেখে নেওয়া যাক। জেনে নেওয়া যাক, কেনই বা এই সেনা অভিযানের এই নাম দিয়েছিল ইজরায়েলি বাহিনী?
শুক্রবার গভীর রাত থেকে ও শনিবারের ভোর হওয়ার আগে ইজরায়েলের শীর্ষসারির ফাইটার জেটগুলি একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ে ইরানের মাটিতে। কারণ, কিছুদিন আগেই প্যালেস্তাইনের হামাস ও লেবাননের হিজবুল্লা জঙ্গিদের খতম করতে একাধিক পান্ডাকে খতম করেছিল ইজরায়েল ডিফেন্স ফোর্স। হামাস-হিজবুল্লার নেপথ্য কারিগর শিয়া মুসলিম রাষ্ট্র ইরান যার প্রতিশোধে ইজরায়েলে ২০০ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। তখনই ইজরায়েল হুমকি দিয়ে রেখেছিল এই কাজের জন্য অনুশোচনা করতে হবে তেহরান সরকারকে।
কোন কোন বিমান ও কী কী অস্ত্র প্রয়োগ করেছিল ইজরায়েল?
অপারেশন ডে'জ অফ রিপেন্ট্যান্স-এ ইজরায়েল তার পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান এফ-৩৫ আদির ফাইটার জেটকে নামিয়েছিল। এছাড়াও ছিল এফ-১৫আই ব়্যাম ফাইটার জেট বিমান এবং এফ-১৬আই সুফা আকাশ প্রতিরক্ষা জেট বিমান, যা আনুমানিক ২০০০ কিমি এলাকা চষে ফেলতে পারে। পৃথিবীর মধ্যে সর্বশক্তিমান এই জেট বিমানগুলির সঙ্গে হামলার জন্য বাছাই করা হয়েছিল তাণ্ডব চালাতে সক্ষম দূরপাল্লার, শব্দের থেকে দ্রুতগতির ক্ষেপণাস্ত্র এবং 'রকস' নামে আকাশ থেকে ভূমিতে ছোড়া পরবর্তী প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্রগুলি। যার পরেও ইরান মুখ বাঁচাতে বলেছে, ইজরায়েলি হামলায় তাদের খুব সামান্য ক্ষতি হয়েছে।
যুদ্ধ কৌশল কী ছিল?
এই হামলা যাতে আরও বড় সংঘর্ষের রূপ না নিতে পারে সেকারণে ইজরায়েলি বাহিনী ইরানের পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র ও তেল ঘাঁটিগুলিকে ছাড় দেয়। তাদের নিশানায় ছিল মূলত ইরানের সেনা ঘাঁটিগুলি। এদিনের হামলায় মোট ১০০টি জেট ফাইটারকে নামানো হয়েছিল। মোট তিনটি স্তরে হামলা চালানোর কৌশল নিয়েছিল ইজরায়েল।
প্রথমে তাক করা হয়েছিল ইরানের রাডার এবং বিমান ধ্বংসকারী অস্ত্র-প্রযুক্তির উপর। যাতে পিছনে আসা বিমানগুলির রাস্তা পরিষ্কার হয়ে যায়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে একটি দলের লক্ষ্য ছিল ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র অস্ত্রাগার। অন্যটি তাক করে ড্রোন প্রযুক্তির ঘাঁটিকে। একেকটি দলে ২৫ থেকে ৩০টি যুদ্ধবিমানের ঝাঁক আক্রমণ চালায়। ১০টি জেট ছিল সকলের মধ্যে বোঝাপড়া বজায় রাখার জন্য এবং বাকিগুলি ছিল সকলকে কভার করা ও শত্রুপক্ষকে বিভ্রান্ত করে বিপথে পরিচালিত করার জন্য।
গত ১ অক্টোবর ইরানি হামলার পর থেকেই বিশ্ব অপেক্ষায় ছিল কবে ইজরায়েল পাল্টা হানাদারি চালাবে। এতদিন ইজরায়েল অপেক্ষা করছিল আবহাওয়া পরিষ্কার হওয়ার জন্য। কারণ তাদের ক্ষেপণাস্ত্রগুলিতে ক্যামেরা লাগানো রয়েছে। ফলে সেগুলি ছোড়ার পর 'লক' কিংবা অচ্যুত নিশানাভেদের জন্য আকাশ পরিষ্কার থাকা জরুরি।
'ডে'জ অফ রিপেন্ট্যান্স' নাম দেওয়া হয়েছিল কেন?
শব্দটি আসলে একটি প্রবচন। ইহুদি বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী ইয়ম কিপ্পুর হল পবিত্রতম দিন। এই দিন থেকে ১০ দিন পর পালিত হয় রোশ হাশানাহ্। যেদিনটিকে বলা হয় অনুশোচনা বা অনুতপ্ত হওয়ার দিন। জুডাইজম-এর ভক্তরা আগের বছরের সমস্ত অপরাধ, অনিয়ম, অবৈধ কাজের জন্য এই দিনটিতে অনুশোচনা প্রকাশ করেন ঈশ্বরের কাছে। অর্থাৎ নিজেকে সৎ ও পুনর্গঠনের পার্বণ। ইহুদিদের বিশ্বাস এই দিনগুলিতে স্বর্গের দরজা খোলা থাকে। মানুষকে এই সময়ের মধ্যে ক্ষমা চাইবার সুযোগ দেন ঈশ্বর এবং মূল্যবোধে চলার শপথ নিতে বলেন। তাই ইজরায়েল এই অভিযানের এমন নাম দিয়ে বোঝাতে চেয়েছিল স্বদেশভূমিকে রক্ষা করতে সরকার কতটা দায়বদ্ধ।
এছাড়াও এই নামের আরও সাঙ্কেতিক ইঙ্গিত রয়েছে। যেমন অভিযান চালানো হয়েছে সিমচাট তোরাহ্-র পরদিন। ওইদিনটি ছিল গত ৭ অক্টোবর, ইহুদি ক্যালেন্ডার অবশ্য আলাদা। গতবছর ৭ অক্টোবর ইজরায়েলে হামাসরা হামলা চালিয়েছিল। তারই বদলার প্রতীক এই প্রবচন।