শেষ আপডেট: 26th September 2024 11:59
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ইজরায়েলি সেনা লেবাননের উপর বোমাবর্ষণ আরও তীব্র করল। নতুন করে হামলায় অন্তত ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে। মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৬২০ ছাড়িয়েছে। আনুমানিক ৫০০,০০০ মানুষ আতঙ্কে ঘরছাড়া। ইজরায়েলের সেনাপ্রধান হের্জি হালেভি জওয়ানদের বলেছেন, হিজবুল্লা পরিকাঠামো গুঁড়িয়ে দিতে বোমাবর্ষণ চলবে। তার সঙ্গে স্থলপথেও হামলা শুরু প্রস্তুতি নিতে।
এদিকে, এই সংঘর্ষের ফলে আঞ্চলিক শান্তি ও সুস্থিতির পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ায় দুই পক্ষকেই লেবাননে ২১ দিনে যুদ্ধবিরতির ডাক দিয়েছে ফ্রান্স, আমেরিকা, কাতার, আরব আমিরশাহি, সৌদি আরব। তারা একটি যৌথ বিবৃতিতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার আর্জি জানিয়েছে ইজরায়েল ও হিজবুল্লাকে। এই সংঘর্ষ নিয়ে রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদ জরুরি বৈঠক করেছে। বেইরুটস্থিত ভারতীয় দূতাবাস ভারতীয় নাগরিকদের লেবাননে যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধ করেছে।
হিজবুল্লার উপর আঘাত হানতে পেরে ইজরায়েলি নেতারা যখন 'চিয়ার্স' করছেন, তখনও তাঁরা বুঝতে পারছেন না যে, হিজবুল্লার উপর হামলা চালিয়ে তাঁরা জুয়োর ঘুঁটি নিয়ে নাড়াচাড়া করছেন। কারণ, যুদ্ধ সরঞ্জাম, জঙ্গি কৌশল, বিদেশি মদত, অত্যাধুনিক অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ এবং লোকসংখ্যা কোনও দিক থেকেই খাটো নয় হিজবুল্লা বাহিনী। ফলে ইজরায়েল যত সহজে কেল্লা ফতে করবে বলে মনে করছে, বিষয়টি তত সহজ হবে না। ইজরায়েলি সেনা লেবানন যুদ্ধে শুধু অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত একটি বাহিনীর প্রতিশোধ মনোবৃত্তির মুখোমুখি হবে তাই নয়, হিজবুল্লারা ভাঙবে তবু মচকাবে না আদর্শে চলায় এই জুয়া খেলার মুনাফা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।
সাম্প্রতিক সংঘর্ষে এখনও পর্যন্ত যতজন নিহত হয়েছেন, তা ২০০৬ সালের ইজরায়েল-হিজবুল্লা যুদ্ধে নিহতের অর্ধেক। ইজরায়েলের রাজনীতিক এবং সেনাপ্রধানরা চান যুদ্ধে বিজয়। কারণ প্রায় একবছরে বেশি ধরে হামাসদের পুরোপুরি কবজা করতে পারেনি ইজরায়েলি। তারা ইঁদুরের মতো গর্ত থেকে বেরিয়ে এসে ইজরায়েলি সেনাকে খতম করছে, জখম করছে এমনকী বন্দি করছে।
এই অবস্থায় ইজরায়েলি কমান্ডাররা ভালো করেই জানেন যে, লেবাননে ঢুকে যুদ্ধ করা সুকঠিন কারণ লেবানন গাজায় হামাসের সঙ্গে লড়াই করার সমতুল নয়। কারণ, ইজরায়েলের মতোই ২০০৬ সালের পর থেকে হিজবুল্লারাও প্রতিশোধ নেওয়ার ছক কষে চলেছে। বিশেষত হিজবুল্লা অধ্যুষিত দক্ষিণ লেবাননের রুক্ষ্ম, পার্বত্য তরাই এলাকার ভৌগোলিক চরিত্রটি তাদের গেরিলা যুদ্ধের সহায়ক।
ফলে গত ১৮ বছর ধরে কঠিন পাহাড়ের নীচে তারা সুড়ঙ্গ গড়ে রেখেছে। যেখান থেকে তাদের খুঁজে বের করে মারা বেশ কঠিন। কারণ এই জায়গাটা গাজার মতো বালির নীচে সুড়ঙ্গ কাটা নয়। তাছাড়া, হিজবুল্লা অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র পায় ইরান থেকে এবং স্থলপথে সিরিয়া থেকেও অস্ত্র আসায় কোনও সমস্যা নেই।
ওয়াশিংটনের একটি বিশেষজ্ঞ সংস্থার হিসাবে হিজবুল্লার কাছে রয়েছে আনুমানিক ৩০,০০০ সক্রিয় ও ২০,০০০ সংরক্ষিত জঙ্গি। যাদের অধিকাংশ যুদ্ধকৌশলে প্রশিক্ষিত। সিরিয়ার আসাদ জমানায় এদের অনেকেরই আবার কমব্যাট যুদ্ধের অভিজ্ঞতাও আছে। অধিকাংশ সংস্থারই ধারণা হিজবুল্লার কাছে ১২০,০০০ ক্ষেপণাস্ত্র ও ২০০,০০০ রকেট আছে। যার মধ্যে কিছু অব্যর্থ নিশানাভেদে সক্ষম এবং কিছু দূরপাল্লার, যা ইজরায়েলের যে কোনও শহরে আছড়ে পড়তে পারে।
সেই কারণে অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করছেন, ইজরায়েল লেবাননে আক্রমণ চালিয়ে জুয়া খেলার ঝুঁকি নিয়েছে। কারণ তাদের অনুমান, হিজবুল্লা পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করবে না। গাজায় ইজরায়েল যা করেছে, তা এখানেও করতে পারবে। ইরান যে পরমাণু অস্ত্র দিয়ে হিজবুল্লার পাশে দাঁড়াবে না, তা নিয়েও জুয়ার বাজি ধরেছে ইজরায়েলি বাহিনী ও সরকার। সুতরাং, এখন ইজরায়েল একতরফা হামলা চালালেও হিজবুল্লা মনে মনে কী ফন্দি এঁটে রেখেছে তা খোদাই জানেন। আর সেটা যদি বেশি কিছু হয়, তাতে এই জুয়ার পরিণতি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের কাছাকাছি পৌঁছতে সময় নেবে না।