শেষ আপডেট: 30th January 2024 08:29
দ্য ওয়াল ব্যুরো: শরীরে যে কোনও সমস্যায় ডাক্তার দেখাতে গেলেই সবচেয়ে আগে পালস রেট দেখেন চিকিৎসকরা। হাতের কব্জির কাছে নাড়ি ধরে সেই রেট দেখে তবে শুরু হয় চিকিৎসা। তারপর বুকে স্টেথো রেখে হার্টবিট শোনেন ডাক্তারবাবুরা। হার্টরেট কেন এত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে বিশ্রামের সময় হার্টবিট দেখেই অনেক জটিল রোগের সম্ভাবনার কথা বলে দেওয়া যায়।
হৃদযন্ত্র তার নিজের মর্জিতে চলে। হার্টকে তাই বলে রিদমিক অর্গ্যান। তার ছন্দেই ছন্দ পায় সারা শরীর। সারাদিনের দৌড়ঝাঁপ, অফিসকাছারি সেরে সংসারের ভারী কাজ সামলানো—সবই ছন্দমাফিকই করতে পারি আমরা, হৃদপিণ্ড নিজস্ব ছন্দে সুস্থ ও চাঙ্গা থাকলে তবেই। কিন্তু এই ছন্দে যদি বদল আসে তখনই গণ্ডগোল। আমরা প্রায়ই ভুলে যাই, শরীরের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হার্টেরও বয়স বাড়ে। তাই দেখা যায় আচমকা একদিন চিনচিনে বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ থেকে হার্ট অ্যাটাকের কবলে ঢলে পড়া। তখন পরীক্ষা করালে ধরা পড়ে হৃদযন্ত্র এবার ছুটি নেওয়ার পথে। তার স্পন্দনেই গোলমাল হচ্ছে। হৃদস্পন্দনের যে অসুখ তা কিন্তু মারাত্মক, বলে কয়ে আসে না, তাই সতর্ক থাকা সবচেয়ে আগে দরকার। অনিয়মিত বা অনিয়ন্ত্রিত হৃদস্পন্দন যে কার্ডিওভাস্কুলার রোগের কারণ হয়ে উঠতে পারে তাই পইপই করে বোঝাচ্ছেন ডাক্তারবাবুরা।
পালস রেট কী ভাবে মাপা হয়?
প্রত্যেক মিনিটে হার্ট কত বার বিট করছে, সেটাই মাপা হয় পালস রেটের মাধ্যমে। পালস রেট প্রত্যেকের আলাদা হয়। একজন মানুষের বিশ্রামরত অবস্থায় ও শারীরচর্চার পরেও পালস রেট আলাদা হয়ে থাকে। শারীরচর্চার পরে বা খুব দৌড়ঝাঁপের কাজ করে এলে পালস বেড়ে যায়। হার্টের কোনও সমস্যা থাকলে অবশ্যই রোজ পালসে নজর রাখা উচিত। কারণ হার্টবিটই বলে দিতে পারে হার্টের স্বাস্থ্য কেমন আছে।
বিশ্রামের সময় হার্টবিট মাপা কেন জরুরি?
চিকিৎসকরা বলছেন, একজন প্রাপ্তবয়স্ত সুস্থ মানুষের পালস রেট ৬০ থেকে ১০০র মধ্যে থাকা উচিত। সত্তরের যত কাছাকাছি পালস রেট থাকে, ততই ভাল। কিন্তু ১০০ ছাড়িয়ে গেলে বুঝতে হবে, শরীরে কোনও সমস্যা হচ্ছে। বিশ্রামের সময় বা শরীর যখন রেস্টে আছে, তখন হার্টবিট থাকে মিনিটে ৪০ এর কাছাকাছি। খেয়াল করতে হবে, বিশ্রামের সময় হার্টবিট বাড়ছে কিনা। শরীর যখন নড়াচড়া করছে না বা পরিশ্রম হচ্ছে না অর্থা বসে বা শুয়ে থাকার সময়ও যদি হার্টবিট মিনিটে ১০০ বা তার বেশি হয়ে যায়, তাহলে বুঝতে হবে বিপদ বাড়ছে। হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হয়ে গেছে। যখন তখন হার্ট কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে।
কেন হার্টবিট বাড়ে বা কমে?
সাধারণত কোনও অসুখের কারণেই পালস রেট কমে বা বাড়ে। জ্বরে শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ বেড়ে গেলে, থাইরয়েডের সমস্যায় দীর্ঘদিন ভুগলে বা ফুসফুসের অসুখ থাকলে পালস রেট বাড়তে পারে। আবার কিছু ক্ষেত্রে কমেও যেতে পারে। হার্ট রেট হঠাৎ খুব বেড়ে গেলে সেই অবস্থাকে বলে ট্যাকিকার্ডিয়া। তখন পালস থাকে প্রতি মিনিটে ১০০-র উপরে। বুক ধড়ফড় করে, বুকে ব্যথা হতে পারে রোগীর।
ট্যাকিকার্ডিয়া বিভিন্ন কারণে হতে পারে। স্ট্রেস, ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালান্স, জ্বর, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মতো বিভিন্ন ফ্যাক্টর কাজ করে। অন্য দিকে হার্ট রেট কমে ৬০-এর নীচে নেমে গেলে তাকে বলে ব্র্যাডিকার্ডিয়া। ট্যাকিকার্ডিয়া বা ব্র্যাডিকার্ডিয়ার মতো উপসর্গ যদি অনেক দিন ধরে দেখা দিতে থাকে, তা হলে সতর্ক হতে হবে। বুঝতে হবে, হার্ট তার স্বাভাবিক ছন্দ হারাচ্ছে। যে কোনও সময় কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হতে পারে।
অনিয়ন্ত্রিত হৃদস্পন্দন! হার্ট কিন্তু আগাম সঙ্কেত দেয়
হার্টের যে রোগই হোক না কেন, তা কিন্তু রাতারাতি বাসা বাঁধে না। হৃদযন্ত্রের যে বয়স বাড়ছে বা হার্ট তার ছন্দ হারাচ্ছে সে সঙ্কেত কিন্তু আগেভাগেই আসতে থাকে। শুধু সচেতনতার অভাবে তা বোঝা যায় না বা বুঝেও ডাক্তারের পরামর্শ নিতে দ্বিধা করা হয়। যে কারণে দেরি হয়ে যায় অনেকটাই। সুস্থ মানুষের হৃদযন্ত্র এক মিনিটে ৬০-৮০ বার পাম্প করে অক্সিজেনযুক্ত বিশুদ্ধ রক্ত শরীরের কোষে কোষে পৌঁছে দেয়। এই পাম্প করার ক্ষমতাকে চালনা করার জন্য হার্টের নিজস্ব পেসমেকার থাকে যাকে বলে সাইনাস নোড (এসএ নোড)। এই সাইনাস নোডের কাজ হল হার্টবিট তৈরি করা। ২৪ ঘণ্টাই কাজ করছে হার্টের এই নিজস্ব পেসমেকার। ইলেকট্রিক্যাল স্পন্দন তৈরি করছে, যে কারণে হৃদস্পন্দন তৈরি হচ্ছে এবং হার্ট পাম্প করে বিশুদ্ধ রক্ত সারা শরীরে ছড়িয়ে দিচ্ছে।
কোনও ভাবে যদি এই সাইনাস নোড ক্ষতিগ্রস্থ হয় তাহলে হৃদস্পন্দন তার স্বাভাবিক ছন্দ হারায়, কখনও বেড়ে যায় আবার কখনও কমে যায়। ডাক্তারি ভাষায় আমরা একে বলি অনিয়ন্ত্রিত হৃদস্পন্দন। অনেক সময়েই এই অনিয়ন্ত্রিত হৃদস্পন্দন বুঝতে পারি না আমরা, তবে কিছু আগাম ইঙ্গিত দেয় হার্ট। যেমন বুক ধড়ফড় করতে পারে, মাথা ঘোরা বা ব্ল্যাক আউট হতে পারে রোগীর, ঘনঘন সোডিয়াম-পটাশিয়াম লেভেলে বদল হতে পারে। পরীক্ষা করালে দেখা যাবে হার্টবিট হয়তো প্রতি মিনিটে বেড়ে ১৫০ থেকে ২০০-তে পৌঁছে গেছে। তখন সতর্ক হতে হবে। ইসিজি (ইলেক্ট্রোকার্ডিয়োগ্রাম)করিয়ে নিয়ে অনিয়মিত হার্টবিট ধরা পড়বে। বাড়িতে অক্সিমিটারে নজর রাখা যায়।