শেষ আপডেট: 30th January 2024 15:15
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বুকের এক্স-রে করতে গিয়ে ধরা পড়ে ব্যাপারটা। বাচ্চাটার হার্ট রয়েছে বুকের ডান দিকে। শারীরিক কোনও জটিলতা ছিল না ঠিকই, কিন্তু ওই কিশোরের চিকিৎসা করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হত ডাক্তারবাবুদের। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে এমন কয়েকটা মেডিক্যাল কেস সামনে এসেছে।
বুকের ডান দিকে যদি হার্ট থাকে, তাহলে ডাক্তারি ভাষায় এই অবস্থাকে বলে ‘ডেক্সট্রোকার্ডিয়া’ (Dextrocardia )৷ এমন কিছু মানুষকে দেখা গেছে যাদের হার্ট ডান দিকে রয়েছে, সেই সঙ্গে প্লীহা, ফুসফুস, যকৃতের অবস্থানও বদলে গেছে। একে বলে সাইটাস ইনভার্সাস, অর্থাৎ হার্ট ভুল দিকে থাকলে বাকি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অবস্থানও বদলে যাবে। এই ধরনের ব্যক্তির যদি হার্টের অসুখ করে বা বাইপাসের মতো সার্জারি করতে হয়, তাহলে ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়। কারণ, ডাক্তাররা তো সাধারণত বাঁ দিকে থাকা হার্টেরই অস্ত্রোপচার করে অভ্যস্ত৷ সেখানে সমস্ত অঙ্গ, শিরা-ধমনি সব উল্টো দিকে থাকলে ভুল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷ আর বাইপাস সার্জারির ক্ষেত্রে সামান্যতম ভুলই রোগীর ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী হতে পারে৷
ডেক্সট্রোকার্ডিয়া কেন হয়?
ডেস্কট্রোকার্ডিয়া কেন হয় তার সঠিক কারণ জানা যায়নি। ডাক্তারবাবুরা বলেন, অ্যানাটমির সমস্যা (Anatomical Problems)। জন্মগতভাবে এই অবস্থা তৈরি হয়। গর্ভে ভ্রূণ যখন বেড়ে উঠছে, তার শরীরের কাঠামো তৈরি হচ্ছে তখন হৃদযন্ত্রের গঠনে অস্বাভাবিকতা হলে এমন হতে পারে। হার্ট ঠিক যেদিকে তৈরি হওয়ার কথা তা না হয়ে উল্টো দিকে হয়। তখন একে ডেক্সট্রোকার্ডিয়া বলে। আবার আইসোলেটেড ডেক্সট্রোকার্ডিয়া (isolated dextrocardia) দেখা যায়। সেক্ষেত্রে, হৃদপিণ্ড তার ঠিক অবস্থানেই থাকে কিন্তু ডান দিকে মুখ করে থাকে। সেটাও একরকম অস্বাভাবিকতা।
ডেক্সট্রোকার্ডিয়া কেন হয় তার প্রাথমিক কিছু কারণ ডাক্তারবাবুরা বলে থাকেন। সেটা হল শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, কোষ-কলাগুলো তৈরির সময় যদি জটিলতা হয়। শরীরের অভ্যন্তরীণ গঠন যখন তৈরি হয়, তখন ফুসফুস, যকৃত, প্লীহা, খাদ্যনালি, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদ্রন্ত্র তার নিজের নিজের অবস্থানে পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়। হার্ট বাঁ দিকে তৈরি হবে, তাই সেই অনুযায়ী বাকি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, শিরা-ধমনী তাদের অবস্থান ঠিক করে নেবে। এই গোটা প্রক্রিয়াটা যদি ওলটপালট হয়ে যায়, তখনই অস্বাভাবিকতা তৈরি হয়। প্লীহা, যকৃত, ফুসফুস ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোও এই অস্বাভাবিকতার জন্য দায়ী হতে পারে। একে ডাক্তারি ভাষায় বলে মাল্টি-অরগ্যান ডিফেক্ট বা হেটেরোট্যাক্সি সিনড্রোম।
কী কী লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে?
ডেক্সট্রোকার্ডিয়ার তেমন কোনও বাহ্যিক লক্ষণ বোঝা যায় না। চেস্ট এক্স-রে, এমআরআই করলে অস্বাভাবিকতা ধরা পড়ে।
তবে আইসোলেটেড ডেক্সট্রোকার্ডিয়া থাকলে সেক্ষেত্রে সাইনাস, ফুসফুসের সংক্রমণ, নিউমোনিয়া হতে পারে। শ্বাসকষ্টও হতে পারে মাঝে মাঝে। ফুসফুসের সিলিয়া (চুলের মতো অংশ) তখন বাইরে থেকে ঢোকা ধুলো-ময়লা, ভাইরাস, প্যাথোজেনকে ফিল্টার করে বের করে দিতে পারে না। ফলে ঘন ঘন শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ হতে পারে।
অনেক সময় ডেক্সট্রোকার্ডিয়ার রোগীর হার্টের জটিল রোগ হতে দেখা যায়। সেক্ষেত্রে ত্বক ও ঠোঁটের রঙ নীলচে হয়ে যেতে পারে, মাঝেমধ্যেই অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে রোগী। সেই সময় হার্ট সার্জারি করার দরকার পড়ে।
চিকিৎসা কি সম্ভব?
চিকিৎসকদের মতে, বিরলতম এই রোগ জন্মগত। কিছু ক্ষেত্রে জিনগতও। তাই কার শরীরে বিশেষ এই লক্ষণ দেখা যাবে, তা আগে থেকে বোঝার কোনও উপায় থাকে না। ডেক্সট্রোকার্ডিয়ার জন্য যদি শরীরের অন্য অঙ্গগুলোর ক্ষতি হতে থাকে তখন পেসমেকার বসিয়ে বা সার্জারি করে রোগীকে তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন ডাক্তারবাবুরা।