শেষ আপডেট: 11th December 2023 18:04
দ্য় ওয়াল ব্যুরো: শীত পড়ছে ধীরে ধীরে। বাতাসে ঠান্ডা আমেজ। এই শীত শুরুর মুখেই নানারকম শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে থাকে। ফ্লু তো রয়েছেই, সেই সঙ্গে শ্বাসকষ্ট, গলাব্যথা মতো সমস্যাও কম নয়। সেই সঙ্গে আবার দোসর হিসাবে দেখা দেয় ‘ড্রাই আইজ’ বা শুষ্ক চোখের সমস্যাও। শীতকাল মানেই ত্বকের শুষ্কতার গল্প। ত্বক শুকিয়ে খসখসে হয়ে যায় এই সময়। ত্বকের কোমলতা ফেরাতে ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করা যায়। নানা বডি লোশনও আছে। কিন্তু শুষ্ক চোখের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাড়তি যত্নের প্রয়োজন। শীতকালে যদি ড্রাই আইজের সমস্য়া দেখা দেয়, তাহলে কী কী করতে হবে তার উপায় বললেন বিশেষজ্ঞ চক্ষু চিকিৎসকরা।
সাম্প্রতিক কালের বিভিন্ন সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, পেশার তাগিদে রোদে অতিরিক্ত সময় থাকার জন্য কর্নিয়ার সমস্যা বাড়ছে। যে কোনও ধরনের কাজে বাইরে ঘোরাঘুরি করার সময়ে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি সরাসরি চোখে লেগে ক্ষতি করছে রেটিনার। শুধু রেটিনা নয়, চোখের কেন্দ্রস্থলের লেন্স ম্যাকুলারও ক্ষতি করে এই রশ্মি। যার ফলে বিশেষ ধরনের ছানি ‘নিউক্লিয়ার ক্যাটারাক্ট’ হয়। পাশাপাশি ড্রাই আইজের সমস্য়াও দেখা দেয়।
শীতে কী কী কারণে হতে পারে ড্রাই আইজ?
অপথ্য়ালমোলজিস্ট ডা. রেশমি চক্রবর্তী বললেন, “শীতকাল বলে শুধু নয় এখন বাতাসে এত দূষণ যে ড্রাই আইজের সমস্যা ঘরে ঘরে। বায়ুদূষণের কারণে বিশেষ করে ধোঁয়াশার কারণে ড্রাই আইজ়, কনজাঙ্কটিভাইটিস, চোখের পাতা ফুলে যাওয়া, দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বাতাসে কার্বন-ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজ়েনের মতো গ্যাসের প্রকোপ বাড়লে চোখের প্রদাহ বাড়ে। ”
তবে কারণ আরও আছে। ডাক্তারবাবু বললেন, অনেকেই জানেন না যে, ভুল খাদ্য়াভাসও এর জন্য দায়ী। পুষ্টিবিদ বা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে নিজের ইচ্ছে মতো খাওয়াদাওয়া, জাঙ্ক ফুড খাওয়া ইত্যাদি অভ্যাসও ধীরে ধীরে বিপদ ডেকে আনে। খাদ্যাভ্যাসের কারণে বাড়ছে ডায়াবেটিস এবং হাইপার টেনশন। স্বাভাবিক ভাবেই যার জেরে চোখের নানা সমস্যাও বাড়ছে।
তাছাড়া আধুনিক স্মার্টফোন, ল্যাপটপ এবং কম্পিউটারের অতিরিক্ত ব্যবহার তো আছেই। ডা. রেশমি বলছেন, ল্যাপটপ, কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখের পলক ফেলতে ভুলে যাচ্ছেন মানুষ। আর তাতেই বাড়ছে ড্রাই আই-এর সমস্যা। চোখ দিয়ে অনবরত জল পড়া, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া, চোখ চুলকানোর মতো সমস্যাই বুঝিয়ে দেবে যে, চোখের জল শুকিয়ে যাচ্ছে।
কীভাবে সুরক্ষিত রাখবেন চোখ?
আসানসোল জেলা হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. অকুল সেন বলছেন, চোখে অতিরিক্ত ক্লান্তিভাব, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা ড্রাই আইজের প্রাথমিক লক্ষণ। তারপরেই চোখ কটকট করবে, চুলকানি হবে, অনবরত জল পড়তে থাকবে। চোখ থেকে জল পড়ার অর্থ হল ‘টিয়ার ফিল্ম’ চোখকে আর্দ্র রাখতে পারছে না। তাই চোখকে আর্দ্র রাখা জরুরি, পাশাপাশি চোখে ধুলোবালি লাগানো চলবে না। চোখ খুব শুকিয়ে গেলে আই ড্রপ ব্যবহার করতে পারেন, তবে অবশ্যই আপনার ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করে।
ডাক্তারবাবু বলছেন, রাস্তায় বেরোলে সানগ্লাস ব্যবহার করুন, চোখ সুরক্ষিত থাকবে। রাস্তায় বেশি ঘুরে বেড়াতে হয় যাঁদের, তাঁরা পোলারয়েড লেন্স ব্যবহার করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে অতি বেগুনি রশ্মি থেকে চোখকে আড়ালে রাখা সম্ভব হবে। ফলে তার ক্ষতিও কিছুটা এড়ানো সম্ভব। ‘ইউভি-বি প্রোটেক্টেড’ লেখা রোদচশমাই ব্যবহার করতে হবে।
শরীরে জলের ঘাটতি হলেও চোখের সমস্যা বেড়ে যায়। শীতকালে ডিহাইড্রেশন মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়। কারণ জল খুব কম খাওয়া হয়। শীতকালেও সারাদিনে তিন লিটার জল অন্তত খেতেই হবে। তাতেও চোখের আর্দ্রতা বজায় থাকবে।
খাওয়াদাওয়ায় নজর দিতে হবে একটু। চোখ যদি সতেজ ও আর্দ্র রাখতে হয় তাহলে বেশি করে শাকসব্জি, ফল খেতে হবে। শীতে নানা ধরনের সব্জি ওঠে বাজারে। হাল্কা রান্না করে খান, ফলের রস খান তাতেও চোখ ভাল থাকবে।
কনট্যাক্ট লেন্স যাঁরা ব্যবহার করেন তাঁদের বেশি সতর্ক হতে হবে। দিনে ৫-৬ ঘণ্টার বেশি লেন্স পরে না থাকাই ভাল। এতেও চোখের জল টেনে নেয়। লেন্স খোলার পরে চোখের সলিউশন থাকলে দিয়ে নেবেন।
ডাক্তারবাবু বলছেন, কালীপুজো আর দীপাবলির পর থেকে দূষণ বেড়ে গেছে। বাইরের ধোঁয়া, দূষিত গ্যাসও চোখের ক্ষতি করছে। এখন চেম্বারে ড্রাই আইজের সমস্যা নিয়ে বেশি রোগীরা আসছেন। এদের মধ্য়ে শিশুরাও রয়েছে। তাই চেষ্টা করতে হবে ধুলোবালি, যানবাহনের ধোঁয়া, বাতাসের দূষিত কণা থেকে চোখকে বাঁচাতে। অপরিষ্কার হাত চোখে দেবেন না। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা ভাল। রাস্তা থেকে ফিরে ভাল করে ঠান্ডা জলে চোখ ধুয়ে নিতে হবে। হাল্কা করে জলের ঝাপটা দিতে হবে চোখে। এতেও অনেক ধুলোবালি বেরিয়ে যায়।
চোখ লাল হলে, ফুলে গেলে, চুলকানি হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।