শেষ আপডেট: 2nd October 2023 16:58
দ্য ওয়াল ব্যুরো: প্রতিদিন সব কিছু ভুলছেন? ছোট ছোট বিষয়গুলোও স্মৃতিতে থাকছে না? পরীক্ষার সময় লিখতে বসে দেখছেন কিছুই মনে নেই। অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাজ ভুলে যাচ্ছেন, দৈনন্দিন জীবনের ছোট ছোট প্রয়োজনগুলো মনে রাখতে পারছেন না। দুর্বল স্মৃতি শক্তি (Boost Memory) নিয়ে এক দিকে নাজেহাল, অন্য দিকে টেলিভিশনের হাজার খানেক প্রখর স্মৃতিশক্তির বিজ্ঞাপনে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছেন।
ভুলে যাওয়ার বা ভুলো মনের নির্দিষ্ট বয়স হয় না। বৃদ্ধ বয়সে গিয়েই ভুলো মন হবে এমনটা নয়। বরং এখনকার সেডেন্টারি লাইফস্টাইলে জীবনযাত্রায় এতটাই অনিয়ম যে কমবয়সিরাই বেশি ভুলে যাওয়ার সমস্যায় ভুগছেন। এমনকি কম বয়সেই হানা দিচ্ছে স্মৃতিনাশ (Boost Memory) বা ডিমেনশিয়ার মতো মানসিক অসুখ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্রেন তরতাজা রাখতে এবং বুদ্ধির বিকাশের জন্য কোনও থেরাপি বা ওষুধ খাওয়ার দরকার নেই। বরং ভারতীয় যোগাসনই পারবে মস্তিষ্কের সব জট খুলতে। নিয়মিত এই পাঁচ যোগাসন করলেই মগজাস্ত্রের ধার বাড়বে।
সুখাসন (Sukhasana): সংষ্কৃত শব্দ ‘সুখ’ এর অর্থ ‘সহজ’ বা ‘আরামদায়ক’। সহজ ও আরামদায়ক ভঙ্গিমায় করা হয় বলেই এই আসনের নাম সুখাসন। সুখাসন আসলে পা মুড়ে আরাম করে বসার এক চেনা ভঙ্গি। এটি অত্যন্ত প্রাচীন যোগাসন। মূলত ধ্যান করার সময় এই ভাবে বসা হয়। ম্যাটের উপর সোজা হয়ে বসুন। দুই পা সোজা করে সামনে ছড়িয়ে দিন। ডান পা হাঁটু থেকে ভাঁজ করে বাঁ ঊরুর নীচে রাখুন। একই ভাবে বাঁ পা মুড়ে ডান ঊরুর নীচে রেখে সোজা হয়ে বসুন। দু’হাতের আঙুল জ্ঞানমুদ্রার ভঙ্গিতে এনে দুই হাঁটুর উপর রাখুন।
এই আসন নিয়মিত করলে শরীর মনের ক্লান্তি ও চাপ দূর হয়। নিয়মিত সুখাসন অভ্যাস করলে মন শান্ত হয়। রাগ, ভয়, দুঃখ, উদ্বেগ ও মানসিক চাপ থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
শীর্ষাসন (Sirsasana): যাঁরা একটু কঠিন আসনে পিছপা হন না তাঁরা চেষ্টা করে দেখতে পারেন শীর্ষাসন। মাথা নীচে রেখে পা, হাত ও কুনুইয়ের সাহায্যে ভারসাম্য রেখে পা উলম্ব ভাবে উপরের দিকে রেখে এই আসন করতে হয়। সঠিক ভাবে করতে পারলে এই আসনে দেহের উপরের দিকের অঙ্গগুলিতে রক্তসঞ্চালন ভাল হয়। ফলে স্নায়ু, বিভিন্ন গ্রন্থি, চোখ, কান নাকের মতো ইন্দ্রিয় ভাল থাকে। জওহরলাল নেহেরু নিয়মিত অভ্যাস করতেন এই আসন। শীর্ষাসন আয়ত্ত করতে পারলে যেমন হার্টের সমস্যা দূর হয় তেমনই ব্রেন থাকে সুস্থ ও সতেজ। নিয়মিত অভ্যাস করতে পারলে অবসাদ, স্ট্রেস দূর হয়, স্মৃতিশক্তি বাড়ে, মনোসংযোগ কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
পদহস্তাসন (Padahastasana): দুই পা আরামদায়ক দূরত্বে রেখে শরীর শিথিল করে দাঁড়ান। হাত থাকুক পাশে। স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিন। শরীর টান টান করে ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে নিতে কানের পাশ দিয়ে দুই হাত সোজা করে মাথার উপরে তুলুন। এ বার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে মেরুদণ্ড দীর্ঘায়িত করে সামনের দিকে ঝুঁকতে থাকুন। আঙুল থাকবে মাটির দিকে। হাঁটু যেন বেঁকে না যায় খেয়াল রাখুন। নীচু হয়ে হাত দিয়ে পায়ের গোড়ালি জড়িয়ে ধরতে পারলে ভাল। না হলে হাত দিয়ে পায়ের পাতা ছুঁয়ে থাকুন। সেটাও না পারলে আরামদায়ক ভাবে যতটুকু ঝুকতে পারবেন ততটুকুও করুন।
ডায়াবিটিস, ক্ষুধামান্দ্য প্রভৃতি রোগের উপকার দিতে পারে এই আসন। পেটের অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে বেশ কার্যকর এই আসনটি। মানসিক উদ্বেগ কমাতেও সহায়তা করতে পারে এই আসন।
বৃক্ষাসন (Vrikshasana): সোজা হয়ে দাড়িয়ে নিজের দু’টি হাত নমস্কারের ভঙ্গিতে বুকের কাছে আনুন। তার পর শরীরের ভারসাম্য রেখে নিজের ডান পায়ের হাঁটু ভাজ করে পায়ের পাতাটি বাঁ পায়ের ঊরুর উপর আনুন। ধীরে ধীরে মেরুদণ্ড সোজা রেখে নিজের হাত নমস্কার ভঙ্গিতে সমান ভবে মাথার উপর নিয়ে যান ৩০ সেকেন্ড এই ভঙ্গিতে এক পায়ের উপর দাঁড়িয়ে থাকুন। স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুন ও পা বদল করে আবার করুন।
যোগাসন প্রশিক্ষকেরা বলছেন, নিয়মিত বৃক্ষাসন অভ্যাস করলে অনিদ্রার সমস্যা ধীরে ধীরে দূর হবে। তবে শুধু অনিদ্রা নয়, দেহের ভারসাম্য রক্ষা করা থেকে পায়ের পেশি মজবুত করা— সবই সম্ভব এই আসনের দৌলতে। সবচেয়ে বড় কথা হল বৃক্ষাসন নিয়মিত সঠিকভাবে করতে পারলে সবরকম উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা দূর হবে। ভুলে যাওয়ার প্রবণতা কমবে। শরীর ও মনের ভারসাম্য বজায় থাকবে। স্মতিশক্তি অনেক বেশি প্রখর হবে।
সর্বাঙ্গাসন (Sarvangasana): চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। পা দু’টি জোড়া করে উপরে তুলুন। এ বার দু’হাতের তালু দিয়ে পিঠ এমন ভাবে ঠেলে ধরুন, যেন ঘাড় থেকে পা পর্যন্ত এক সরলেরখায় থাকে। থুতনিটি বুকের সঙ্গে লেগে থাকবে। দৃষ্টি থাকবে পায়ের আঙুলের দিকে। স্বাভাবিক ভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ে মনে মনে তিরিশ গুনুন। এ ভাবে তিন বার অভ্যাস করুন। আসনটি প্রথম প্রথম দু’থেকে তিন বার করুন।
সর্বাঙ্গাসন থাইরয়েড গ্রন্থির কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে থাকলেই অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়৷ মানসিক অবসাদ দূর করে। অনিদ্রায় ভুগলে এই আসনটি বেশ উপকারী। শরীরকে সুস্থ সবল রাখে। মনে স্ফুর্তি আনে। বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য সেরে যায়। পেটের ও অন্ত্রের গোলযোগও দূর হয়।