বেশিরভাগ ভারতীয় ভুগছেন ঘুমের সমস্যায়
শেষ আপডেট: 4 April 2025 15:36
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে পর্যাপ্ত ঘুম (sleep) অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। শুধু তাই নয়, কোন সময়ে এবং কতক্ষণ ঘুমোতে হবে সেই নিয়েও বিশেষজ্ঞদের সুস্পষ্ট মতামত রয়েছে। ব্যক্তিবিশেষে কিছু ঘণ্টার এদিক-ওদিকে তাঁরা মান্যতা দিলেও ঘুম নিয়ে কিছু নিয়মাবলি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে থাকেন তাঁরা। কিন্তু বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে, বেশিরভাগ ভারতীয়ই ঘুমের জন্য পর্যাপ্ত সময় বার করতে পারছেন না বা ঘুম-সংক্রান্ত সমস্যায় (sleep crisis) ভুগছেন।
সম্প্রতি ওয়েকফিটের ‘গ্রেট ইন্ডিয়ান স্কোরকার্ড ২০২৫’ সমীক্ষা (survey) থেকে জানা গেছে যে, ভারতীয়দের ঘুমের অভ্যাসে (sleep habit) মারাত্মক পরিবর্তন এসেছে। সমীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী, ভারতীয়রা রাতে ঘুমোতে যাওয়ার নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেক দেরি করে ঘুমোতে যায়।
৪,৫০০ জনের ওপর ওয়েকফিট ওই সমীক্ষা করেছিল (সময়সীমা: মার্চ ২০২৪-ফেব্রুয়ারি ২০২৫)। তথ্য বলছে, এর মধ্যে ৫৮ শতাংশ মানুষই রাতে ১১টার পর ঘুমোতে যান। কলকাতায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ ১১টার পর শুতে যান, যার হার ৭২.৮ শতাংশ, অন্যদিকে চেন্নাই এবং হায়দরাবাদে এই সংখ্যা কম (প্রায় ৫৫ শতাংশ)।
দেরি করে ঘুমোনোর নেপথ্যে কারণ কী বলছে সমীক্ষা?
অ্যাপ্লিকেশন বা মোবাইলের (mobile usage) অতিরিক্ত ব্যবহার একটা বড় কারণ। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ৮৪ শতাংশ মানুষ শোয়ার আগে ফোন ব্যবহার করে। বিশেষত ২৫-৩০ বয়সিদের মধ্যে ফোন ব্যবহারের হার বেশি, যাঁরা সাধারণত কাজের পর ব্যক্তিগত সময় কাটানোর জন্য এই সময় খরচ করেন। এটি ‘রিভেঞ্জ বেডটাইম প্রোক্রাস্টিনেশন’ নামে পরিচিত, যেখানে কর্মব্যস্ত দিনের শেষে নিজেদের জন্য কিছুটা সময় বিনোদনের জন্য রাখে এবং দেরি করে ঘুমোতে যায়।
এছাড়া, ৩৫ শতাংশ মানুষ ঘুমোনোর আগে ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করেন, ফলে শুতে যাওয়ার সময় ১১টা পেরিয়ে যায়। এটি মানসিক চাপের লক্ষণ, যা ঘুমের ওপর প্রভাব ফেলছে।
দেরি করে ঘুমানোর ক্ষতিকর প্রভাব কী হতে পারে?
ঘুমের সময়ের পরিবর্তনের সরাসরি প্রভাব শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যেও পড়ে। সমীক্ষা অনুযায়ী, ৪৪ শতাংশ মানুষ ঘুম থেকে ওঠার পরও অনুভব করেন যে তাঁরা পর্যাপ্ত বিশ্রাম পাননি, যা তাঁদের দৈনন্দিন কাজকর্মে প্রভাব ফেলছে। ঘুমের সমস্যা মানুষের কর্মক্ষমতাকেও প্রভাবিত করে।
ডাক্তার কী বলছেন?
মুম্বইয়ের নানাবতী ম্যাক্স সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ড: হেমলতা আরোরা বলেন, ‘ঘুমের আগে ফোনের ব্যবহার বিশেষত শিশু এবং কিশোরদের জন্য খুবই ক্ষতিকর হতে পারে। ব্লু লাইট (blue light) শুধু ঘুমের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং যখন আমরা উত্তেজক কনটেন্ট দেখি, তা মাথার ওপর প্রভাব ফেলে, যার ফলে ঘুম আসতে দেরি হয়। দীর্ঘদিন এটা চলতে থাকলে ঘুমের মান কমে যায়। অবসাদ দেখা দিতে পারে।’
ঘুম কম হলে বা না হলে তা মানুষের স্বাস্থ্যে বিভিন্ন জটিলতা তৈরি করতে পারে, যেমন মোটা হওয়া, অবসাদ, এবং হৃদরোগ। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য উচিত সঠিক ঘুমের অভ্যাস গড়ে তোলা এবং স্ক্রিন ব্যবহারের সময় (screen time) কমানোকে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।