প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠা মানে যেন একটা যুদ্ধ। অ্যালার্মের ‘স্নুজ’ বাটন চেপে আরও যতটা পারা যায় টেনেটুনে ঘুমটাকে বাড়ানোর চেষ্টা!
বারবার অ্যালার্ম স্নুজ করার অভ্যাস রয়েছে আপনার?
শেষ আপডেট: 22 May 2025 13:39
দ্য ওয়াল ব্যুরো: প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠা মানে যেন একটা যুদ্ধ। অ্যালার্মের ‘স্নুজ’ বাটন (Alarm snooze button) চেপে আরও যতটা পারা যায় টেনেটুনে ঘুমটাকে বাড়ানোর চেষ্টা! শুনতে নিরীহ এক অভ্যাস মনে হলেও, গবেষণা কিন্তু বলছে এতে আখেরে ক্ষতিই হচ্ছে আপনার ঘুমের গুণমানের (quality of sleep)।
বিশ্বব্যাপী ৩ মিলিয়নেরও বেশি ঘুমের তথ্য (রাতের ঘুম) বিশ্লেষণ করে এক গবেষণায় দেখা গেছে- প্রায় ৫৬% মানুষ রাতের ঘুম শেষ করেন ‘স্নুজ’ বাটন চেপে। এটি এমন এক অভ্যাস, যা স্লিপ সাইকেলের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ রেম (REM- Rapid Eye Movement) সাইকেলকে ব্যাহত করে। আর এর ফলাফল- বেলা গড়িয়ে গেলেও মাথা ঝিমঝিম করা, মনোযোগে ঘাটতি ও সারাদিন ক্লান্তিভাব।
গবেষণা কী বলছে?
আমেরিকার এক হাসপাতাল-গবেষণা প্রতিষ্ঠান Mass General Brigham-এ হওয়া গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে Scientific Reports নামক জার্নালে। গবেষকরা জনপ্রিয় ঘুম পর্যবেক্ষণ অ্যাপ Sleep Cycle-এর মাধ্যমে বিশ্বের ২১,০০০ জন ব্যবহারকারীর ঘুম সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করেন। জানা গেছে,
• ৫৬% মানুষ ঘুম থেকে উঠার সময় অ্যালার্ম ‘স্নুজ’ করেন। গড় হিসেব বলছে, প্রথম অ্যালার্ম বন্ধ করে ১১ মিনিট ঘুম হয়।
• যাঁরা নিয়মিত স্নুজ ব্যবহার করেন (৮০% সময়), তাঁরা প্রায় ২০ মিনিট পর্যন্ত ‘স্নুজ সাইকেল’-এর ফাঁদে আটকে পড়েন।
• এই অভ্যাসের কবলে ঘুমের রুটিন গড়বড় করে। ছেঁড়া ছেঁড়া ঘুমে অভ্যস্ত হয়ে প্রতে পারেন। তাতে সামগ্রিকভাবে ঘুমের এবং শারীরিক নানা সমস্যা দেখা দেয়।
কেন ক্ষতি করছে স্নুজ?
ড. রেবেকা রবিন্স, ঘুম বিশেষজ্ঞ ও মুখ্য গবেষকের কথায়, ‘সকালের ঘুমের শেষ অংশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই REM ঘুমের সাইকেলে থাকেন মানুষ, যা স্মৃতি ও আবেগ প্রসেসিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। স্নুজ বাটন বারবার চেপে এই ঘুমকে মাঝপথে ছিন্ন করা মানে আমাদের মস্তিষ্ককে সম্পূর্ণ ঘুমের সুযোগ না দেওয়া। এ সময়ের ঘুম সবচেয়ে বেশি কার্যকর, অথচ স্নুজের মাধ্যমে আমরা তা ভেঙে দিচ্ছি। ফলে যেটুকু বাড়তি ঘুম পাই, সেটায় ঘুম পুষিয়ে নেওয়ার বদলে আদতে ক্ষতিই হয় বেশি।
• উইকডেজেই সাধারণত বেশি স্নুজ করেন মানুষ, বিশেষত সোমবার থেকে শুক্রবার।
• ছুটির দিনে স্নুজ কম হয়, কারণ অনেকেই হয়ত স্বাভাবিকভাবে জেগে ওঠেন।
• যাঁরা ৫ ঘণ্টার কম ঘুমান, তাঁদের স্নুজ ব্যবহারের প্রবণতা তুলনামূলকভাবে কম, সম্ভবত দায়িত্ববোধের কারণে
• আমেরিকা, সুইডেন ও জার্মানিতে সবচেয়ে বেশি স্নুজ হয়, অন্যদিকে জাপান ও অস্ট্রেলিয়ায় সবচেয়ে কম।
সমাধান কী?
ড. রবিন্সের মতে, ‘ঘুমের মান ও সারাদিনের পারফরম্যান্স ঠিক রাখতে চাইলে, অ্যালার্ম একবারই সেট করুন, যত দেরিতে সম্ভব। আবার স্নুজ করে শুয়ে না থেকে সঙ্গে সঙ্গে উঠে পড়ুন।’
তিনি আরও জানাচ্ছেন-
• ঘুমোতে যাওয়ার নির্দিষ্ট সময় ঠিক করুন।
• ঘুমানোর আগে মোবাইল, কম্পিউটার স্ক্রিন ও কফি থেকে দূরে থাকুন।
• সকালে ধীরে ধীরে ঘুম থেকে ওঠার মতো শান্ত রুটিন তৈরি করুন, যেমন হালকা স্ট্রেচিং, নরম আলো, সুদিং মিউজিক দিয়ে শুরু করুন সকাল।