ভারতে নারীদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে উঠছে হৃদরোগ। হার্ট অ্যাটাক বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণে প্রতি বছর ব্রেস্ট ক্যান্সারের চেয়েও ১০ গুণ বেশি মৃত্যু হয়।
শেফালি জরিওয়ালা
শেষ আপডেট: 30 June 2025 08:23
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ‘কাঁটা লাগা’ খ্যাত অভিনেত্রী শেফালি জরিওয়ালার আকস্মিক মৃত্যু শুধু বলিউডকে নয়, চিকিৎসা মহলকেও নাড়িয়ে দিয়েছে। মাত্র ৪২ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, হঠাৎ রক্তচাপ (BP) খুব কমে যাওয়াতেই এই হার্ট অ্যাটাক ঘটে।
ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে খুব কম জনই আছেন যাঁরা কোনও না সময় রক্তচাপজনিত সমস্যায় ভোগেননি। অনেকেই তা খুব একটা গুরুত্ব দেন না। কিন্তু এই ঘটনার পর স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগ বেড়েছে, বিশেষ করে অল্পবয়সি মহিলাদের মধ্যে বাড়তে থাকা হৃদরোগ এবং নিম্ন রক্তচাপের মতো সমস্যা নিয়ে।
পুনের রুবি হল ক্লিনিকের কার্ডিয়োলজিস্ট ডা. অভিজিৎ খদতারে ব্যাখ্যা করেছেন, ‘হঠাৎ করে রক্তচাপ মারাত্মকভাবে নেমে গেলে, যাকে ‘সিভিয়ার হাইপোটেনশন’ বলা হয়, তার যদি দ্রুত চিকিৎসা না হয়, তাহলে তা প্রাণঘাতী হতে পারে।’
যদি রক্তচাপ সবসময়ই কিছুটা কম থাকে এবং কোনও উপসর্গ না থাকে, তাহলে তা চিন্তার বিষয় নাও হতে পারে। কিন্তু হঠাৎ রক্তচাপ পড়ে যাওয়ার সঙ্গে উপসর্গ দেখা দিলে সেটিকে চিকিৎসার জরুরি অবস্থা হিসেবে দেখা উচিত। এই ধরনের পরিস্থিতিতে সময় মতো জরুরি চিকিৎসা না পেলে মৃত্যু অনিবার্য হয়ে ওঠে।
তিনি বলেন, ‘রক্তচাপ যদি ৯০/৬০ mm Hg-এর নিচে যায়, তাও সবসময় বিপজ্জনক নয়। কিন্তু যদি দ্রুত গতিতে রক্তচাপ পড়ে যায়, তাহলে মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্র, কিডনির মতো অঙ্গগুলোতে রক্ত পৌঁছায় না, ফলে গুরুত্বপূর্ণ ওই অঙ্গগুলোতে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়। এর ফলে অঙ্গ বিকল হওয়ার ঝুঁকি থাকে, এবং তা একরকম শকে পরিণত হতে পারে। তার প্রধান কারণই হল শরীর তার প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও পুষ্টি পায় না।’
হঠাৎ রক্তচাপ পড়ে যাওয়ার কারণ কী হতে পারে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়ার পেছনে একাধিক গুরুতর কারণ থাকতে পারে:
• মারাত্মক ডিহাইড্রেশন বা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ
• সংক্রমণের ফলে সেপটিক শক
• অ্যানাফাইল্যাক্সিস বা তীব্র অ্যালার্জি
• হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলিওর বা অনিয়মিত হার্টবিটের মতো হৃদরোগ
এই অবস্থায় শরীরে দেখা দিতে পারে ঘোর লাগা, ঘামতে থাকা ও গা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, দ্রুত ও হালকা শ্বাস, দুর্বল ও দ্রুত পালস, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া - যার সবই দ্রুত চিকিৎসা দাবির লক্ষণ।
ভারতে নারীদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে উঠছে হৃদরোগ। হার্ট অ্যাটাক বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণে প্রতি বছর ব্রেস্ট ক্যান্সারের চেয়েও ১০ গুণ বেশি মৃত্যু হয়।
গুরগাঁওয়ের প্যারাস হেলথ-এর কার্ডিয়োলজি বিভাগের প্রধান ডা. অমিত ভূষণ শর্মা বলেন, ‘আমি প্রায়ই দেখি, অনেক মহিলাই নিজেদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেন না। কেরিয়ার, পরিবার, সমাজের প্রত্যাশা - সব কিছু সামলাতে সামলাতে তাঁদের হার্ট হেলথ অবহেলায় চুপচাপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্ট্রেস, ঘুমের অনিয়ম, স্ক্রিনটাইম, হেলথ চেকআপ এড়িয়ে যাওয়া—এসবই ক্রমশ ক্ষতি করে চলে।’
তাঁর পরামর্শ, নিয়মিত হেলথ চেকআপ, হালকা শরীরচর্চা, পুষ্টিকর খাবার, এবং শরীর কোনও সতর্কবার্তা দিলে তা এড়িয়ে না গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। ‘প্রতিরোধই সবচেয়ে বড় চিকিৎসা। সমস্যা শুরুর আগেই ব্যবস্থা নিন,’ বলেন তিনি।