শেষ আপডেট: 4th August 2024 18:13
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বর্ষাকালে এমনিতেই নানারকম সংক্রমণ ও অসুখবিসুখের প্রকোপ বেড়ে যায়। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ারা অতি-সক্রিয় হয়ে উঠে নানারকম জ্বরজারি বাঁধায়। সঙ্গে দোসর হয়, জলবাহিত অসুখও। এরই মধ্যে ঝুঁকি বেড়ে যায় মারাত্মক ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ স্ক্রাব টাইফাসেরও। এক ধরনের ক্ষুদ্র মাইট বা আট পায়ের পোকার কামড়ে এই স্ক্রাব টাইফাস ব্যাকটেরিয়া মানুষের শরীরে ঢোকে। এর ফলে সাধারণভাবে জ্বর ও সংশ্লিষ্ট উপসর্গ দেখা দিলেও, অসুখ বাড়লে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে রোগীর।
সল্টলেক আইএলএস হাসপাতালের ডাক্তারবাবু সর্বজিৎ রায় জানাচ্ছেন, ঐতিহাসিকভাবে, স্ক্রাব টাইফাস নিরক্ষীয় অঞ্চলের প্রচলিত অসুখ ছিল না। এটি প্রধানত হিমালয় অঞ্চলে পাওয়া যেত, যেমন হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, নেপাল। তবে সম্প্রতি কয়েক বছরে আমাদের রাজ্যেও স্ক্রাব টাইফাসের একাধিক ঘটনা সামনে এসেছে। এটি রোগের চরিত্রের পরিবর্তনের ইঙ্গিত ছাড়া কিছু নয়। জলবায়ু পরিবর্তন, মানুষের বসবাসের এলাকা বদল এবং পরিবেশগত আরও বিভিন্ন পরিবর্তন-সহ নানা কারণই এই অসুখকে বাংলায় ডেকে এনেছে বলে মনে করা যেতে পারে।
স্ক্রাব টাইফাস সংক্রমণের উপসর্গ কী?
স্ক্রাব টাইফাস বহনকারী এই মাইটগুলি সাধারণত ঝোপজঙ্গলে বাস করে। এই অসুখ সৃষ্টিকারী জীবাণুর পোশাকি নাম হল, ব্যাকটেরিয়াম ওরিয়েন্টিয়া সুতসুগামুশি। আগে এটি রিকেটসিয়া সুতসুগামুশি নামে পরিচিত ছিল।
ডাক্তারবাবু বলছেন, সাধারণত শরীরের খোলা জায়গায় স্ক্রাব টাইফাস কামড় দেয়। এর ফলে ছোট্ট একটি ক্ষত তৈরি হয়, বা একটি কালো দাগ হয় কামড়ের জায়গায়।
সংক্রমণে আক্রান্ত হলে সাধারণত জ্বর, শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, ফুসকুড়ি এবং গ্ল্যান্ড ফোলার মতো কয়েকটি লক্ষণ দেখা দেয়। সাধারণত কামড়ের ৬ থেকে ২১ দিনের মধ্যে এই সমস্ত লক্ষণ বাড়ে। তবে সাধারণ জ্বরের সঙ্গে ফারাক করা খুবই মুশকিল। রক্ত পরীক্ষা করলে তবেই স্ক্রাব টাইফাস নির্ণয় করা যায়।
স্ক্রাব টাইফাসের চিকিৎসা কী?
স্ক্রাব টাইফাসে কেউ আক্রান্ত হলে, প্রাথমিক রোগ নির্ণয় এবং দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিকভাবে রোগ ধরা পড়ার পরে ডক্সিসাইক্লিন বা অ্যাজিথ্রোমাইসিনের মতো মৌখিক অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে এই রোগটির চিকিৎসা শুরু করা যেতে পারে। এই অ্যান্টিবায়োটিকগুলি অসুখের সিম্পটম্পের তীব্রতা দ্রুত দমন করে, রোগীর কষ্ট কমাতে পারে।
তবে বিপদের কথা হল, প্রাথমিকভাবে এই রোগ নির্ণয় না হলে, স্ক্রাব টাইফাসের সংক্রমণ ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে লিভার, কিডনি এবং ফুসফুসের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলিতে। বড় জটিলতা তৈরি হতে পারে শরীরে, যা বাড়তে থাকলে মাল্টিঅর্গান ফেলিওর এমনকি মৃত্যও হতে পারে।
স্ক্রাব টাইফাস কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়?
স্ক্রাব টাইফাস প্রতিরোধ করার জন্য পরিষ্কার পরিবেশ বজায় রাখতে হয়। পোকামাকড় কমাতে পার্ক, বাগান এবং যে কোনও ঝোপঝাড় নিয়মিত ছাঁটাই করার পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রকৃতির কাছাকাছি বা ঘন গাছপালা-সহ এলাকায় যাওয়ার সময়, ফুলহাতা জামা, প্যান্ট, মোজা পরা গুরুত্বপূর্ণ। শরীরের খোলা অংশে পোকামাকড় প্রতিরোধক স্প্রে ব্যবহার করা যায়।
অন্যান্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে খালি মাটিতে বসা বা শুয়ে থাকা এড়িয়ে চলা। বিশেষ করে, পোকামাকড় রয়েছে এমন কোনও জায়গায় গেলে, ক্যাম্পিং করলে বা জঙ্গলে বেড়াতে গেলে, ঘুমোনোর সময়ে উঁচু, বাঁধানো জায়গায় শুতে হবে। স্ক্রাব টাইফাসের ঝুঁকি এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতাও বাড়াতে হবে জনমানসে।