শেষ আপডেট: 6th February 2024 18:34
দ্য ওয়াল ব্যুরো: হিন্দুকুশ হিমালয় রেঞ্জের বাস্তুতন্ত্র ভেঙে পড়ছে। এমনটাই জানিয়েছেন 'দ্য ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেন ডেভলপমেন্ট' (আইসিআইএমওডি)-এর বিশেষজ্ঞ পরিবেশবিদরা। তাঁদের দাবি, বিশ্ব উষ্ণায়ণ এবং দূষণের মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে হিন্দুকুশ হিমালয়ের বিস্তীর্ণ এলাকার বাস্তুতন্ত্র বিপন্ন। হিন্দুকুশ পর্বতের পরিবেশ পৃথিবীর বায়োডাইভার্সিটি জোনগুলির অন্যতম। কাজেই সেখানে বাস্তুতন্ত্র ভেঙে পড়লে তা কোটি কোটি মানুষের বিপদের কারণ হয়ে উঠবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
'বায়োডাইভার্সিটি অ্যান্ড ইকোসিস্টেম সার্ভিসেস' (আইপিবিইএস)-এর গবেষকরদের বৈঠক চলছে। কীভাবে হিন্দুকুশ হিমালয়ের বসতি এলাকার বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণ করা যায় সে নিয়ে আলোচনা চলছে সেই বৈঠকে। পাশাপাশি, আসন্ন বিপদ নিয়েও চিন্তিত গবেষকরা।
হিন্দুকুশ রেঞ্জ প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত। ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, চিনের মধ্যে দিয়ে গেছে হিন্দুকুশ। বিশাল এলাকাজুড়ে এর ব্যপ্তি। গবেষকরা বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে পাহাড় পর্বতে জমে থাকা বরফ গলবে, এতে কোনও অস্বাভাবিকতা নেই। বরং, বরফ গলে যাওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু হিমালয়ের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি সবচেয়ে চিন্তার, তা হল গলনের এই গতি। এত দ্রুত এত বরফ হিমালয় থেকে গলে যাবে, তা আশা করেননি কেউ।
হিন্দুকুশ হিমালয়ের হিমবাহগুলি সরাসরি অন্তত ২৪ কোটি মানুষের প্রতি দিনের প্রয়োজনীয় জলের ঘাটতি মেটায়। এ ছাড়া, বিভিন্ন নদী উপত্যকায় বসবাসকারী আরও অন্তত ১৬৫ কোটি মানুষ পরোক্ষ ভাবে এই হিমবাহগুলির উপর নির্ভরশীল। বিজ্ঞানীদের অনুমান, এই শতাব্দীর শেষে হিমালয়ের হিমবাহগুলি ৮০ শতাংশ আয়তন হারাবে। তাতে অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে ওই এলাকা থেকে উৎপন্ন অন্তত ১০টি প্রধান নদী এবং তাদের যাবতীয় উপনদী ও শাখানদী। গঙ্গা, সিন্ধু, ব্রহ্মপুত্র, মেকং, ইয়েলো, ইরাবতীর মতো ভারত ও চিনের বহু গুরুত্বপূর্ণ নদীর জলের উৎস হিমালয়ের হিমবাহ। সেগুলি গলে গেলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেবে। নদীর উপত্যকায় বসবাসকারী বহু মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে উঠবে তাতে। উপত্যকার বাসিন্দাদের শুধু বাসস্থান নয়, খাবার, বিদ্যুৎ প্রভৃতি একাধিক প্রাথমিক চাহিদা মেটে নদীর জল থেকেই। কাজেই হিন্দুকুশের বাস্তুতন্ত্র ভেঙে পড়তে শুরু করলে সমূহ বিপদের মুখোমুখি হতে হবে ভারত ও তার প্রতিবেশী দেশগুলিকে।
হিন্দুকুশ অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ জলের পরিমাণ কতটা, কোন অঞ্চলের হিমবাহ দ্রুত গলছে, ভূমিকম্পে কোথায় নতুন জলাধার তৈরি হয়েছে, কোন কোন এলাকায় ধসের ফলে জনপদ নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে, তার একটা মানচিত্র তৈরি করেছে আইসিআইএমওডি। নেপালের ভূমিকম্পের পরে হিমালয়ের ওই অংশে ছোট ছোট বহু ফাটল দেখা দিয়েছে। ওই সব এলাকার সুনির্দিষ্ট মানচিত্র তৈরি করতে না পারলে ভবিষ্যতের বিপদ থেকে হিন্দুকুশ অঞ্চলকে বাঁচানো যাবে না বলে মনে করছেন আইসিআইএমওডি-র সমীক্ষকেরা।
২০৫০ সালের মধ্যে হিন্দুকুশ হিমালয় অঞ্চলে তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে। তার ফলে নষ্ট হয়ে যাবে গোটা এলাকার বাস্তুতন্ত্র। এতে বর্ষা দীর্ঘায়িত হবে, কিন্তু বৃষ্টি হবে সামঞ্জস্যহীন ভাবে। বৃষ্টিপাতের মাত্রা সম্পর্কে পূর্বাভাস দেওয়া যাবে না। বর্ষাকাল জুড়ে বৃষ্টি না হয়ে কয়েকটা পর্যায়ে অতিরিক্ত বৃষ্টি হবে। হিমবাহ গলতেই থাকবে। বেশি গলবে সিন্ধু অঞ্চলের হিমবাহগুলি। পাকিস্তানে সাম্প্রতিক সময়ে ভয়াবহ বন্যার কারণই ছিল এই বিপর্যয়। আগামীতে এমন ঘটনা ঘন ঘন ঘটতে থাকবে বলেই আশঙ্কা গবেষকদের।