শেষ আপডেট: 7th February 2025 18:48
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ভারতে জন্মহার ক্রমশ নীচের দিকে নামছে। ১৯৬০-এর দশকে যেখানে গড় জন্মহার ছিল ৫.৯২, অর্থাৎ একজন নারী গড়ে ছয়টি সন্তানের জন্ম দিতেন, ২০২৩ সালে তা নেমে এসেছে ২-তে। এই সংখ্যা জনসংখ্যা ধরে রাখার প্রয়োজনীয় মাত্রার (২.১) সামান্য নিচে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সামান্য পার্থক্যও ভবিষ্যতে জনসংখ্যা হ্রাসের কারণ হতে পারে।
জন্মহারের এই পতনের পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। অনেক দম্পতি এখন সন্তান নিতে চাইছেন না। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতে বন্ধ্যাত্বের সমস্যাও বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী, এক বছর ধরে অনিরাপদ যৌনসম্পর্কের পরও গর্ভধারণ না হলে পুরুষ বন্ধ্যাত্বের শিকার বলে গণ্য করা হয়। ভারতে বর্তমান বন্ধ্যাত্বের ৪০-৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে পুরুষরাই দায়ী, যেখানে বিশ্বব্যাপী এই হার মাত্র ১৫ শতাংশ।
কেন বাড়ছে বন্ধ্যাত্ব?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এর প্রধান কারণ পরিবর্তিত জীবনযাত্রা। ওএসিস ফার্টিলিটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও মেডিক্যাল ডিরেক্টর ডা. দুর্গা জি. রাও বলেন, 'পরিবেশ দূষণ, খাদ্যে রাসায়নিক মিশ্রণ, স্ট্রেস, খারাপ খাদ্যাভ্যাস, অনিদ্রা—এসবই বন্ধ্যাত্ব বাড়াচ্ছে।'
জিন্দাল আইভিএফ-এর সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. শীতল জিন্দাল জানান, দেরিতে বিয়ে, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, স্থূলতা, ধূমপান, মদ্যপান ও মাদকের ব্যবহারও পুরুষদের প্রজনন ক্ষমতা কমাচ্ছে। বিশেষ করে ২০ থেকে ৪০ বছরের পুরুষদের মধ্যে শুক্রাণুর গুণমান ও সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
বিকল্প সমাধান - শুক্রাণু সংরক্ষণ
এই পরিস্থিতিতে শুক্রাণু সংরক্ষণ (sperm freezing) একটি গুরুত্বপূর্ণ সমাধান হয়ে উঠছে। চিকিৎসা সংক্রান্ত কারণে বা ভবিষ্যতে সন্তানধারণের সুযোগ রাখতে অনেক পুরুষ শুক্রাণু সংরক্ষণের পথে হাঁটছেন। প্রাইম আইভিএফ-এর প্রধান চিকিৎসক ডা. নিশি সিং বলেন, 'ক্যানসারের মতো চিকিৎসা বা ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় থাকা পুরুষদের জন্য শুক্রাণু সংরক্ষণ অত্যন্ত কার্যকরী হতে পারে।'
এই প্রক্রিয়ায় প্রথমে শুক্রাণু সংগ্রহ করে পরিশোধিত করা হয় এবং বিশেষ সংরক্ষণ দ্রব্যের সাহায্যে তরল নাইট্রোজেনে সংরক্ষণ করা হয়। এটি ২০ বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকে। ভারতে শুক্রাণু সংরক্ষণের খরচ প্রতি বছর ৮,০০০-১০,০০০ টাকা।
তবু কেন এখনও দ্বিধা?
শুক্রাণু সংরক্ষণ বাড়লেও ভারতের সামাজিক ট্যাবু এটিকে বাধা দিচ্ছে। অনেক পুরুষ একে ‘পুরুষত্বের সংকট’ মনে করেন, ফলে খোলাখুলি কথা বলতে ভয় পান। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেয়েরা যেমন ডিম্বাণু সংরক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের প্রজনন স্বাধীনতা রক্ষা করছেন, তেমনই পুরুষদেরও এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
নারীদের মধ্যেও জনপ্রিয় হচ্ছে ডিম্বাণু সংরক্ষণ
শুধু পুরুষ নয়, মহিলাদের মধ্যেও ডিম্বাণু সংরক্ষণের প্রবণতা বাড়ছে। শহরাঞ্চলে ক্যারিয়ার বা শারীরিক কারণে অনেকে মাতৃত্ব স্থগিত রাখতে চাইছেন। ডা. সুনীতা তান্ডুলওয়াডকর বলেন, 'নারীরা এখন ক্যারিয়ার ও স্বাস্থ্যের দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন। ফলে ডিম্বাণু সংরক্ষণ তাঁদের ভবিষ্যতের বিকল্প খুলে দিচ্ছে।' বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্ধ্যাত্বের হার বাড়ায় শুক্রাণু ও ডিম্বাণু সংরক্ষণ জনপ্রিয় হচ্ছে। পুরুষ-মহিলা উভয়ের জন্যই এটি ভবিষ্যতে সন্তানধারণের একটি নিরাপদ বিকল্প হতে পারে।