শেষ আপডেট: 9th February 2024 11:27
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঋতু পরিবর্তনের সময়ে হাম ও বসন্তের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। তবে বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে এখন এই সব রোগ হওয়ারও কোনও নির্দিষ্ট সময় নেই। জলবায়ু যেভাবে বদলাচ্ছে, তাতে সংক্রামিত রোগগুলো ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। ইউনিসেফের সমীক্ষা বলছে, বিশ্বজুড়েই হাম, পক্সে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।
আইসিএমআরের বিজ্ঞানী ডা. অর্পণা মুখোপাধ্যায় বলছেন, স্মলপক্স ভ্যাকসিন যারা নেয়নি তাদের ভয় বেশি। তাই শিশুদের আগে এই ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। স্মলপক্স বা গুটিবস্ত যে ভাইরাস থেকে হয়, সেই ভাইরাস থেকেই মাঙ্কিপক্সও ছড়াচ্ছে। গত বছর এই মাঙ্কিপক্স নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। তাই এ বছর আগে থেকেই সাবধান করছেন ডাক্তারবাবুরা।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. সুবর্ণ গোস্বামী বলছেন, আগে ঘরে ঘরে হাম বা পক্সের প্রাদুর্ভাব দেখা যেত। এখন সেই হার কমেছে ঠিকই, কিন্তু একেবারে নির্মূল হয়নি। এখনকার বাবা-মায়েরা অনেক বেশি সচেতন। তাই বাচ্চাদের আগে থেকেই টিকা দিয়ে রাখে। সে জন্য এখন আর বসন্তের আগমনীতে ঘরে ঘরে হাম বা পক্স দেখা যায় না। তবে করোনার সময় থেকে দেখা গেছে, মাঙ্কিপক্স বা ওই জাতীয় ভাইরাস সংক্রমণের হার বেড়েছে। যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি কম তাদেরই বেশি দেখা যাচ্ছে এই রোগ।
অনেক দিন আগেই টিকাকরণের ফলে গুটি বসন্ত বা ‘স্মল পক্স’ সম্পূর্ণ রূপে আমদের দেশ থেকে নির্মূল হয়েছে। এখন যে বসন্ত দেখা যায়, তা জল বসন্ত বা ‘চিকেন পক্স’।
কী কী উপসর্গ দেখা দেবে?
ডাক্তারবাবু বলছেন, যদি মাঙ্কিপক্স হয় তাহলে কিছু বিশেষ উপসর্গ দেখা দেবে। যেমন-- লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাবে। তারপর সারা গায়ে চাকা চাকা র্যাশ বের হবে। সেই সঙ্গেই কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসবে।
সংক্রমণ বেশি ছড়ালে ফোস্কার মতো র্যাশ বের হবে
ত্বক শুকিয়ে খসখসে হয়ে যাবে, প্রচণ্ড চুলকানি, জ্বালা হবে
হাম বা পক্সের কী কী লক্ষণ দেখা যাবে
প্রাথমিক ভাবে জ্বর, সর্দি, হাঁচি, সারা শরীরে ব্যথা ইত্যাদি দেখা যায়। পরবর্তী পর্যায়ে গায়ে বিভিন্ন আকারের ফুসকুড়ির মতো দানা ও আরও পরে জলভর্তি ফোস্কার মতো বড় আকারের ফোঁড়ার মত দেখা দেবে।
হামের প্রাথমিক লক্ষণ জ্বর। সেই সঙ্গেই সর্দি, হাঁচি লেগেই থাকে। চোখ লাল হতে শুরু করে, অনবরত চোখ দিয়ে জল পড়ে, চোখের পাতা ফুলে যায়। বাচ্চাদের এই সময় কাশি হয়, গলা বসে যায়। এই উপসর্গগুলি দু-তিন দিন থাকে। মুখের ভিতরে দানা দানা ভাব দেখা দেয় এবং আস্তে আস্তে তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
হালকা গোলাপি র্যাশ ৫-৭ দিনের মধ্যে হালকা বাদামি হতে হতে আস্তে আস্তে মিলিয়ে যায়। সব মিলিয়ে রোগটা মোটামুটি সাত থেকে দশ দিন ভোগায়।
হাম বা পক্স থেকে অন্য কী কী রোগের সম্ভাবনা থাকে?
ডাক্তারবাবু বলছেন, হাম বা বসন্তের কারণে সাধারণত শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সাময়িক কমে যায়। সচেতন না হলে নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, কাশি, পেটের গোলমাল দেখা দিতে পারে। কোনও পুরনো বা জটিল রোগ থাকলে বসন্ত হওয়ার ফলে তা আরও বাড়তে পারে। সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে কোনও কোনও ক্ষেত্রে প্রাণহানির আশঙ্কাও থেকে যায়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনুযায়ী হাম বা বসন্ত কতটা প্রভাব ফেলবে, তা নির্ধারিত হয়। তবে উপসর্গ দেখা দিলেই দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
চিকিৎসা কী?
প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় উপায় টিকাকরণ। ডাক্তারবাবু বলছেন, মিসলস ভ্যাকসিন ৯ মাসের বাচ্চাদের দেওয়া হয়। এর পরে এমএমআর ভ্যাকসিন দিলে এই রোগ হয় না বললেই চলে। টিকাকরণ সঠিক সময় হলে বাচ্চাদের ভাইরাসের সংক্রমণ কম হয়। অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যেতে পারে। ‘সেকেন্ডারি ইনফেকশন’ হলে কিছু ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ওযুধও দেওয়া হয়।
খাওয়াদাওয়ার দিকে নজর দিতে হবে। হাম বা পক্স হলে জল বেশি করে খেতে হবে। জল ফুটিয়ে খাওয়াই ভাল। তেলমশলাদার খাবার না খাওয়া উচিত। এই সময় হজমশক্তি কমে যায়। তাই সহজপাচ্য খাবার খেলে পেটের সমস্যা হয় না। বেশি করে ফল খেলে ভাল। প্রাণীজ প্রোটিন খেলে চিকেন বা মাছ, ডিমের সাদা অংশ খাওয়া উচিত। তেল, সাবান ব্যবহার না করে মৃদু গরম জলে স্নান করা যেতে পারে।
দু’বছরের কম বয়স হলে মায়ের দুধ ঘন ঘন দিতে হবে। না হলে শিশু দুর্বল হয়ে পড়বে। হামে আক্রান্ত রোগীদের ভিটামিন এ-র অভাব হতে পারে। কোনও পরিস্থিতিতেই নিজেরা চিকিৎসা করতে যাবেন না। যদি বাড়ির বড় কারও হাম হয় তাহলে তার থেকে শিশুদের যতটা সম্ভব দূরে রাখতে হবে। হামের জীবাণু বাতাসে প্রায় এক ঘণ্টা সক্রিয় থাকে। বড়দের আইসোলেশনে রাখতেই হবে। শিশুদের হাম খুব মারাত্মক নয়, তবে চিকিৎসা না করালে নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে।