শেষ আপডেট: 14th January 2024 00:07
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সুখবর দিল অক্সোফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। নিপা ভাইরাসের ভ্যাকসিনের গবেষণায় চূড়ান্ত সাফল্য মিলেছে বলে দাবি। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে পরীক্ষামূলক প্রথম পর্বের ট্রায়াল। ট্রায়ালে অংশগ্রহণকারীদের প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে, চলতি বছরের শেষের দিকে অক্সফোর্ডের নিপা ভাইরাসের ভ্যাকসিন মিলতে পারে বাজারে।
করোনার থেকেও ভয়ঙ্কর নিপা ভাইরাস (Nipah virus)। কারণ, করোনার চেয়ে নয়া এই ভাইরাসে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ জানিয়েছে, করোনায় মৃত্যুর হার যেখানে ২-৩ শতাংশ ছিল, সেখানে নিপা ভাইরাসের ক্ষেত্রে বর্তমানে মৃত্যুর হার ৪০ থেকে ৭০ শতাংশ।
ইতিমধ্যে কেরলে নিপা আতঙ্ক ক্রমেই বাড়ছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠেছিল এক সময় যে কেরলের বেশ কিছু স্কুল ছুটি ঘোষণা করতে হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, নিপা ভাইরাস দ্রুত এক রোগীর দেহ থেকে অন্যের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
নিপা ভাইরাসকে (Nipah Virus) বলে জুনটিক ভাইরাস (Zoonotic Virus), অর্থাৎ পশুর থেকে মানুষের শরীরে ছড়াতে পারে। এই ভাইরাসের বাহক ফ্লাইং ফক্স (বৈজ্ঞানিক নাম পিটারোপাস মিডিয়াস) নামে একধরনের ফলভোজী বাদুড়। বাদুড় থেকে কুকুর, বিড়াল, ছাগল, ঘোড়া বা ভেড়ার শরীরে মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। আক্রান্ত পশুদের দেহের অবশিষ্টাংশ, বা মলমূত্র থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। করোনার মতোও নিপাও আরএনএ ভাইরাস।
অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স (এইমস), আইসিএমআর জানাচ্ছে, নিপা ভাইরাস আক্রান্ত হলে কোনও নির্দিষ্ট ওষুধ নেই, আক্রমণ প্রতিরোধ করার মতো কোনও টিকা এতদিন আবিষ্কৃত হয়নি। ফলে মৃত্যুর হার বিশ্বে গড়ে প্রায় ৭৫ শতাংশ। কিন্তু এবার বিশ্ব বাজারে টিকা আনতে চলেছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়।
২০০১ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছিল। ৬৬ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছিল। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছিল, সংক্রমণে মৃত্যুহার ৩ শতাংশের বেশি। মাঝের কয়েকটা বছর নিপার আতঙ্ক সেভাবে ছড়ায়নি। ২০০৭ সালে ফের নিপা ফিরে আসে ভারতে। বাংলাদেশের সীমান্ত সংলগ্ন নদিয়াতে ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ে। ২০০১ সালে বাংলাদেশেও নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছিল সাঙ্ঘাতিকভাবে। এর পর ২০০৩, ২০০৪, ২০০৫ থেকে ২০১১ সাল অবধি— প্রতি বছরই নিয়ম করে বাংলাদেশে এই ভাইরাস বিভীষিকা ছড়িয়েছে৷
রোগের লক্ষণ কী কী?
প্রথমে সাধারণ জ্বরই হয় রোগীর। এরপর শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে। মাথাব্যথা, বমি শুরু হয়। মাথায় পৌঁছে যায় সংক্রমণের রেশ। শুরু হয় খিঁচুনি। গলা ব্যথা, তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকে রোগী। বাড়াবাড়ি সংক্রমণে ২৪–৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রোগী কোমা স্টেজে চলে যেতে পারে।
মস্তিষ্কের প্রদাহ শুরু হয়, হৃদপেশিতেও প্রদাহ হয় অনেকের। এনসেফ্যালাইটিস ও মায়োকার্ডিটিসে আক্রান্ত হয় রোগী। আক্রান্ত মানুষকে দ্রুত এমন হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে, যেখানে রোগীকে সবার থেকে আলাদা রাখার ও ইনটেনসিভ সাপোর্টিভ কেয়ারের ব্যবস্থা আছে।
সাধারণ পরীক্ষায় নিপার সংক্রমণ ধরা পড়ে না৷ থ্রোট সোয়াব, অর্থাৎ গলা থেকে তরল নিয়ে রিয়েল টাইম পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন বা আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করে সংক্রমণ ধরতে হয়। কোভিডের মতোই আরএনএ ভাইরাস শণাক্ত করার জন্য আরটি-পিসিআর পরীক্ষাই সবচেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য। শিরদাঁড়ার তরল, ইউরিন ও রক্ত পরীক্ষাও করার ডাক্তাররা৷ ক্ষেত্রবিশেষে আইজিজি ও আইজিএম অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করেও দেখা হয়।