মাত্র আট বছর বয়সে ডিম্বাশয়ের ক্যানসার হয়েছিল পৌলমী ঘোষের। দীর্ঘ চিকিৎসার পরে সুস্থ হয়ে উঠলেও তিনি কখনও ভাবেননি, একদিন স্বাভাবিকভাবে মা হতে পারবেন।
পৌলমী ঘোষ
শেষ আপডেট: 14 May 2025 12:38
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মুকুন্দপুরের মণিপাল হাসপাতালে ঘটল এক ব্যতিক্রমী ঘটনা। মাত্র আট বছর বয়সে ডিম্বাশয়ের ক্যানসার হয়েছিল পৌলমী ঘোষের। দীর্ঘ চিকিৎসার পরে সুস্থ হয়ে উঠলেও তিনি কখনও ভাবেননি, একদিন স্বাভাবিকভাবে মা হতে পারবেন। কিন্তু সেই অসাধ্যকে সম্ভব করে দেখালেন তিনি। ৩৫ বছর বয়সে কোনও চিকিৎসা সহায়তা ছাড়াই একটি সুস্থ কন্যাসন্তানের জন্ম দিলেন পৌলমী।
এই সফলতার পিছনে রয়েছেন মণিপাল হাসপাতালের চিকিৎসক ডঃ বিশ্বজ্যোতি গুহ। তাঁর তত্ত্বাবধানে পৌলমীর গর্ভাবস্থার প্রতিটি ধাপ খুব সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। এমন স্বাভাবিক গর্ভধারণ ক্যানসারজয়ী কারও ক্ষেত্রে খুবই বিরল ঘটনা। পৌলমীর ঘটনা ডঃ গুহ ও মণিপাল হাসপাতালের কাছে তৃতীয় সফল ক্যানসার সারভাইভার কেস হলেও, এটিই প্রথম যেখানে কোনও প্রজনন চিকিৎসার প্রয়োজন হয়নি।
যাদবপুরের বাসিন্দা পৌলমী ৩০ সপ্তাহের গর্ভবতী অবস্থায় পেটের ওপরের দিকে তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে প্রথমে একটি অন্য হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে অ্যাপেন্ডিক্সে সমস্যা সন্দেহ হওয়ায় তাঁকে মণিপাল হাসপাতালে পাঠানো হয়। ভর্তি হওয়ার পর চিকিৎসকরা প্রথমে ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা শুরু করেন। পরে এমআরআই করে দেখা যায়, অ্যাপেন্ডিক্স ঠিক আছে। ফলে অস্ত্রোপচারের দরকার পড়েনি।
ডঃ বিশ্বজ্যোতি গুহ জানান, এই গর্ভাবস্থা অনেক দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। আগে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস ছিল, আবার গর্ভাবস্থার শেষের দিকে তাঁর লিভারেও সমস্যা দেখা দেয়। ওষুধ দিয়ে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। কিন্তু এর মধ্যেও যেভাবে পৌলমী স্বাভাবিকভাবে গর্ভবতী হন এবং সুস্থ সন্তানের জন্ম দেন, তা চিকিৎসাক্ষেত্রে এক অনন্য ঘটনা।
নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে পৌলমী বলেন, “১৯৯৯ সালে মাত্র আট বছর বয়সে আমার ডিম্বাশয়ে ক্যানসার ধরা পড়েছিল। অস্ত্রোপচারের পর কেমোথেরাপিও নিতে হয়েছিল। সেই সময় মা হওয়ার স্বপ্নটাই কেটে গিয়েছিল। কিন্তু ২০২৪ সালে আমি হঠাৎ করেই গর্ভবতী হই। পরে যখন অ্যাপেন্ডিক্সের সমস্যা ধরা পড়ে, তখন খুব ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু ডঃ গুহ আমাকে সব সময় সাহস দিয়েছেন। তাঁর জন্যই আজ আমি মা হতে পেরেছি। ৩০ এপ্রিল আমি একটি সুস্থ মেয়ের জন্ম দিই।”
মণিপাল হাসপাতালের রিজিওনাল চিফ অপারেটিং অফিসার ডঃ অয়নাভ দেবগুপ্তা বলেন, “এই ঘটনা আমাদের সবার কাছে অনুপ্রেরণার। পৌলমীর সাহস, আত্মবিশ্বাস আর আমাদের চিকিৎসক দলের যত্ন ও নিষ্ঠা—সব মিলে এটি সম্ভব হয়েছে। আমরা খুবই গর্বিত।”