শেষ আপডেট: 3rd October 2023 13:20
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সামান্য মাথা ব্যথা হলেই ট্যাবলেটের পাতা ছিঁড়ে একটা ছোট গুলি মুখের ভেতর চলে যায়। সর্দি-জ্বর, গায়ে ব্যাথা মানেই মুঠো মুঠো ট্যাবলেট (Pain Killer)। পিরিয়ডের সময় পেটে যন্ত্রণা কমাতে আগে থেকেই ওষুধের কৌটো হাতের কাছে রেডি। এই যে যখন তখন ব্যথা কমানোর ওষুধ খাওয়ার অভ্যাস, সেটা কিন্তু মোটেই ভাল কথা নয়। একটা ওষুধের নানা রকম কাজ থাকে, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও (Side Effects) থাকে, সেসব না জেনে বুঝে দুম করে পেইন কিলার খেয়ে ফেলার এই প্রবণতা শরীরে বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে অকালেই। সমীক্ষা বলছে, ভারতীয়রা নাকি পেইন কিলারে মারাত্মকভাবে আসক্ত হয়ে পড়েছে যার থেকে নানারকম অসুখবিসুখ বাড়ছে।
দিল্লি এইমসের ন্যাশনাল ড্রাগ ডিপেন্ডেন্স ট্রিটমেন্ট সেন্টারের (NDDTC)বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বললেন, ১০-১৫ বছর ধরে পেইন কিলারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নানা রোগ হচ্ছে ভারতীয়দের।
নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গোত্রের ওষুধ একদিকে যেমন দ্রুত শরীরের প্রদাহ বা ইনফ্ল্যামেশন কমাতে পারে, তেমনিই এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও অনেক আছে। ডাইক্লোফেনাক, অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন, ন্যাপ্রোক্সেন ইত্যাদি এনসেড গোত্রের ওষুধের মধ্যে পড়ে। প্যারাসিটামলও ব্যথা কমাতে পারে তবে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এনসেড ওষুধগুলোর মতো নয়। এই ওষুধে আরও দ্রুত কাজ দেয়, তাই রোগীরও বেশ মনে ধরে। সাইড এফেক্টসের কথা আর মাথায় থাকে না।
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই মারাত্মক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাপ্তবয়স্করা নানা রোগ বা শারীরিক কোনও জটিলতার জন্য এমন কিছু ওষুধ খান যার ‘অ্যাডভার্স সাইট এফেক্টস‘-এ শরীরে ডিহাইড্রেশন তৈরি হয়। শরীরে জল ও খনিজ লবনের মাত্রা কমে যায়। হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে পারে, হার্ট ফেলিওর হতে পারে। আলসার থাকলে এই ধরনের ওষুধ না খাওয়াই ভাল। হৃদযন্ত্রে সমস্যা যাঁদের রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে ব্যথার ওষুধ বেশ বিপজ্জনক।
আইবুপ্রোফেন যেমন ব্যথায় আরাম দেয়, তেমনি এটি বেশি খেয়ে ফেললে এবং নিয়ম করে খাওয়ার অভ্যাস করে ফেললে সমূহ বিপদ। প্রথমত, ওই ওষুধ রোজ খেলে ডায়েরিয়া হতে বাধ্য। এনসেড গোত্রের যে কোনও ওষুধই পেটের গোলমাল বাঁধাতে পারে। গ্যাসট্রোইন্টেস্টিনাল সমস্যাও হয় অনেকের। হার্ট অ্যাটাক, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির রোগ এমনকি লিভার টক্সিসিটি হতে পারে। শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা কমে যেতে পারে।
পেইন কিলার ডিপ্রেশনের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের কার্যকারিতা হ্রাস করে। তাই যাঁরা বিষণ্ণতায় ভুগছেন এবং অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট গ্রহণ করছেন, তাঁরা ঘন ঘন ব্যথা নাশক ওষুধ খাবেন না।
অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন এবং নেপ্রোক্সেন-এর মতো পেইন কিলার রক্ত পাতলা করে। যাঁদের রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা এবং হার্টের সমস্যা আছে, তাঁদের জন্য এই ওষুধগুলি উপকারি হতে পারে। তবে যাঁরা রক্ত পাতলা করার ওষুধ খান, তাঁদের যে কোনও ব্যথা নাশক ওষুধ(NSAIDs) এড়িয়ে চলা উচিত। এতে রক্ত বেশি পাতলা হয়ে যেতে পারে এবং অত্যধিক রক্তপাত হতে পারে।