শেষ আপডেট: 19th February 2024 18:00
দ্য ওয়াল ব্যুরো: স্মৃতির পাতা কেন ঝাপসা হয়? কেন মলিন হয়ে যায় স্মৃতিরা? সদ্য ঘটা ঘটনাও কেন বেমালুব উবে যায় মস্তিষ্ক থেকে? এসবেরই কারণ লুকিয়ে রক্তে। প্লাজমায় এমন চার প্রোটিন আছে যাদের কমাবাড়াই মগজের অসুখের জন্য দায়ী। ডিমেনশিয়া, অ্যালঝাইমার্স কেন হয় তার গোড়ার কারণটা ধরলেন বিজ্ঞানীরা। ‘নেচার এজিং’ জার্নালে প্রথম এই নিয়ে গবেষণার খবর ছাপা হয়েছে। ঠিক কী কারণে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিনাশ নয় তার কারণ বের করেছেন বিজ্ঞানীরা। সেই পথ ধরেই ডিমেনশিয়াকে নির্মূল করার উপায়ও খুঁজে বের করা হচ্ছে।
চিনের ফুডান ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা গত ১০ বছর ধরে ডিমেনশিয়ার কারণ নিয়ে গবেষণা করছিলেন। হাজার পাঁচেক প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও নারীর ব্রেন নিয়ে গবেষণা হচ্ছিল। বিজ্ঞানীরা বলছেন রক্তের প্লাজমায় ১৪৬৩টি প্রোটিন নিয়ে তার কাটাছেঁড়া করে চারটি প্রোটিন খুঁজে বের করা হয়েছে যারা ব্রেনের জটিল অসুখের জন্য দায়ী। এই চার প্রোটিন হল-- GFAP, NEFL, GDF15 এবং LTBP2। এদের মধ্যে আবার GFAP প্রোটিনের মাত্রার কমাবাড়ার উপর নির্ভর করে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি আছে না নেই।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, শারীরিক নানা কারণ আছে যার জন্য় মানুষ ভুলতে শুরু করে। যদি দেখা যায় ব্রেনে ছোট ছোট স্ট্রোক অনেকবার হয়েছে তাহলেও ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি থাকে। বয়সকালে স্মৃতিনাশের ঝুঁকি অনেকটাই বাড়ে। কমবয়সিরাও বিপদের বাইরে নন। ইদানীংকালে অ্যালঝাইমার্স, ডিমেনশিয়ার মতো অসুখ নিয়ে বিশ্বজুড়েই সচেতনতা বাড়ানোর কাজ চলছে। প্রচণ্ড মানসিক চাপ, অ্যাংজাইটি, টেনশন বা মনোযোগের অভাবের কারণে ভুলে যাওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু যদি খুব ঘন ঘন এই ভুলে যাওয়ার সমস্যা তৈরি হয় তখন সাবধান হতে হবে। কিছুক্ষণ আগে শোনা কথা ভুলতে শুরু করতে পারেন, কিছুদিন আগের ঘটনাও স্মৃতি থেকে বেমালুম উবে যেতে পারে। নামধাম তো বটেই, গুরুত্বপূর্ণ যে কোনও বিষয়ই যদি স্মৃতির পাতা থেকে হারিয়ে যেতে শুরু করে তাহলে মুশকিল। একে বলে অ্যামনেশিয়া, যা ডিমেনশিয়ার পূর্ব লক্ষণ। চিনা বিজ্ঞানীরা বলছেন, GFAP ও LTBP2 প্রোটিনের মাত্রা যদি হঠার করে রক্তে বেড়ে যায়, তাহলে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে। ডিমেনশিয়া কেন হয় তা এতদিন অজ্ঞাতই ছিল। রক্তের এই চার প্রোটিন সেই কারণ বের করতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিনাশ হবে কিনা তা আগে থেকে বোঝারও উপায় ছিল না এতদিন। কিন্তু বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, যখনই ছোট ছোট উপসর্গগুলো দেখা দেবে তখনই যদি রক্তের পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে ডিমেনশিয়া হবে কিনা তার পূর্বাভাস পাওয়া সম্ভব। ৫২ হাজার ডিমেনশিয়া আক্রান্ত রোগীর উপর পরীক্ষা করে এই দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।
যে উপসর্গগুলো লক্ষ্য করা হয়েছিল?
দৃষ্টি ক্ষীণ হতে থাকে। কোনও লেখা পড়ে বুঝতে এবং লিখতে সমস্যা শুরু হয়। রোগী ঠিকমতো পড়তেই পারছে না। অথবা কোনও কিছু লিখতে গেলে সমস্যা হচ্ছে। অক্ষর, শব্দ, বাক্য তৈরি করতে পারছে না। নম্বর বুঝতে সমস্যা হচ্ছে। পর পর বাক্য লিখতে গেলেই সব তালগোল পাকিয়ে ফেলছে। যা লিখছে তার মানে দাঁড়াচ্ছে না। কোনও কিছু ভাষায় প্রকাশ করতে গেলেও সমস্যা হচ্ছে। গুছিয়ে কথা বলতে পারছে না।
শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবেন রোগী। রঙ চিনতে বা দূরত্ব বুঝতে সমস্যা হবে।
ডিলিউশন বা মনগড়া অলীক বিশ্বাস ও হ্যালুসিনেশন বা এমন কিছু দেখা যার বাস্তবে কোনও অস্তিত্বই নেই--এই দুই উপসর্গই দেখা দিতে থাকবে।
রোগী যা দেখবে তা মনে রাখতে পারবে না। কিছুক্ষণ আগে কোথায় ছিল, কার সঙ্গে দেখা হয়েছে, কী কথা হয়েছে ইত্যাদি মনে করতে পারবে না। জায়গার নাম ভুলে যাবে, এমনকী পরিচিতের নামও মনে থাকবে না। কিছুক্ষণ আগের ঘটনাও স্মৃতি থেকে বেমালুম উবে যাবে।