শেষ আপডেট: 19 February 2024 22:25
দ্য ওয়াল ব্যুরো: করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সবচেয়ে আগে আক্রান্ত হয়েছে ফুসফুস। সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, করোনা-উত্তরকালে ভারতীয়দের ফুসফুসের রোগই বেশি দেখা যাচ্ছে। চিনে যেমন কোভিড পরবর্তী পর্যায়ে প্রায় ৬০ শতাংশের মধ্যে ফুসফুসের জটিল রোগ দেখা গিয়েছিল, ভারতীয়দের ততটা না হলেও কমবেশি অনেকেই ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত। এই সমীক্ষার রিপোর্টও নাকি চমকে দেওয়ার মতোই। ঠিক কী কারণে ফুসফুস বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা হচ্ছে, তার কারণ জানালেন ডাক্তারবাবুরা।
ফুসফুসে কীভাবে করোনা ছড়াচ্ছে সে নিয়ে এতদিন গবেষণা করছিলেন নানা দেশের বিজ্ঞানীরা। সায়েন্স জার্নালে সম্প্রতি এ বিষয়ে রিপোর্ট সামনে এনেছেন ন্যাশনাল ইমার্জিং ইনফেকসিয়াস ডিজিজ ল্যাবোরেটরিজ, সেন্টার ফর রিজেনারেটিভ মেডিসিন ও সেন্টার ফর নেটওয়ার্ক সিস্টেম বায়োলজির গবেষকরা।
ফুসফুসের আস্তরণ নষ্ট করছে করোনা
মানুষের শ্বাসনালী দিয়ে ঢুকে ফুসফুসের আস্তরণ নষ্ট করে ফেলছে ভাইরাস। ক্ষতি হচ্ছে ফুসফুসের কোষগুলির। অক্সিজেন ঢোকা ও কার্বন ডাই অক্সাইড বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াটা বাধা পাচ্ছে। সে কারণেই রোগীর শ্বাসকষ্ট বাড়ছে। একই ভাবে কিডনিরও ক্ষতি করছে করোনাভাইরাস।
ডাক্তারবাবুরা বলছেন, যে কোনও দেহকোষে যাতে বার্তা ঠিকঠাকভাবে পৌঁছয়, কোষ সুস্থ ও সতেজ থেকে কাজ করতে পারে তার জন্য প্রোটিনের কার্যকারিতা বিশেষ ভূমিকা নেয়। প্রোটিনের নির্দিষ্ট বিন্যাস থাকে যা কোষকে ঠিকভাবে চালনা করে। ফুসফুসের কোষেও তেমনই থাকে। প্রোটিনের এই বিন্যাস ও কার্যকারিতাকে বলে প্রোটিন ফসফোরাইলেশন (Protein Phosphorylation) । সার্স-কভ-২ ভাইরাস এই প্রোটিনের বিন্যাসকেই নষ্ট করে দিয়েছে। ফলে কোষে বার্তা বা সিগন্যাল পৌঁছতে পারেনি সঠিকভাবে। প্রোটিনের কার্যকারিতা যদি নষ্ট হয়, তাহলেই ম্যালফাংশন তথা উল্টো ক্রিয়া-বিক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। কোষে প্রদাহ শুরু হবে, কোষ নষ্ট হতে থাকবে। কোভিড পরবর্তী সময়েও এটাই হয়েছে। যারা একবার বা দুবার কোভিডে আক্রান্ত হয়েছে, তাদের ফুসফুসে প্রোটিনের সাজসজ্জায় বড় বদল হয়েছে বলেই অনুমান বিশেষজ্ঞদের।
ফুসফুসের কোষে ঢুকে প্রথম ধাক্কাতেই প্রোটিনের সাজসজ্জা বদলে দিয়েছে ভাইরাস। যার ফলে কোষে বার্তা পৌঁছনো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রোগ প্রতিরোধের স্বাভাবিক ক্ষমতা নষ্ট হচ্ছে। সংক্রামক ভাইরাস হানা দিয়েছে, এই সঙ্কেত কোষ আর পৌঁছে দিতে পারছে না। অর্থাৎ যোগাযোগ ব্যবস্থাটাই বন্ধ করে দিচ্ছে। এরপরে নিজেদের রিপেসটর প্রোটিন খুঁজে নিয়ে কোষের ভেতরে ঢুকে প্রতিলিপি তৈরি করে ফেলছে।
এর পরের ধাপটাই হল শ্বাসনালীতে অক্সিজেন পৌঁছনো বন্ধ করে দেওয়া। তার জন্য ফুসফুসের কোষে ভাইরাসের সেই বন্ধু প্রোটিন তথা ACE2 (অ্যাঞ্জিওটেনসিন-কনভার্টিং এনজাইম ২) এর সঙ্গে জুড়ে যাচ্ছে সার্স-কভ-২ ভাইরাল স্ট্রেনের স্পাইক (S) প্রোটিন। এর সাহায্যে ফুসফুসের কোষে ঢুকে বিভাজিত হয়ে সংখ্যায় বাড়তে থাকছে ভাইরাস। এমনভাবে সংক্রামিত হচ্ছে যে শ্বাসনালীর মাধ্যমে অক্সিজেন ঢোকার রাস্তাটাই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটারি সিন্ড্রোম দেখা দিচ্ছে।
দেখা গেছে, করোনা পরবর্তী সময়েও শ্বাসের সমস্যা, শুকনো কাশি এমনকি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে রোগী। অক্সিজেন সরবরাহ কমে গেলে রক্তের স্বাভাবিক চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে থাকে। রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে, পালমোনারি থ্রম্বোসিসে (Pulmonary Thrombosis)আক্রান্ত হচ্ছে রোগী। আরও একটা বিষয় পর্যবেক্ষণ করেছেন বিশেষজ্ঞরা, সেটা হল ভাইরাস ফুসফুসের এন্ডোথেলিয়াল কোষের (Endothelial Cells)মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। যার কারণে ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যাচ্ছে। রক্ত জমাট বাঁধছে। ‘সাইলেন্ট নিউমোনিয়া’, ‘সাইলেন্ট হাইপোক্সিয়া’ আক্রান্ত হচ্ছে রোগী। তাছাড়া আরও নানা রকম ফুসফুসের রোগ দেখা দিচ্ছে।