এক সময় যেগুলি ছিল চরম গোপনীয় বিষয়, সেগুলিই হয়ে উঠেছে মেইনস্ট্রিম শপিং প্ল্যাটফর্মের আইটেম।
শেষ আপডেট: 9th December 2024 16:39
দ্য ওয়াল ব্যুরো: অনলাইনের ইনস্ট্যান্ট কেনাবেচার অ্যাপে মুদির বাজার অর্ডার করছিলেন বছর ত্রিশের তরুণী রিমিকা (নাম পরিবর্তিত), যেমনটা প্রায়ই করে থাকেন। কয়েক দিন পরেই পিরিয়ডের ডেট, সে খেয়াল হতেই কার্টে অ্যাড করতে যান স্যানিটারি ন্যাপকিনও। কিন্তু তা করতে গিয়ে নির্দিষ্ট সেকশনে গিয়েই চমকে গেলেন তিনি। নতুন কিছু আইটেম জ্বলজ্বল করছে সেখানে। আর তাতেই খুল্লমখুল্লা আহ্বান নিষিদ্ধের! এক ক্লিকেই!
পোশাকি নাম, ‘ইন্টিমেট ওয়েলনেস প্রোডাক্টস’। তবে এসব প্রোডাক্টকে দুষ্টু দুষ্টু ডাকনামেই বেশি চেনে লোকে, ‘সেক্স টয়’। ভাইব্রেটর, ম্যাসাজার থেকে শুরু করে কী নেই সেখানে, আছে ‘স্টিমি’ কার্ড গেমস পর্যন্ত। এক সময় যেগুলি ছিল চরম গোপনীয় বিষয়, সামাজিক ট্যাবু ছিল আকাশছোঁয়া, এখন সেগুলিই হয়ে উঠেছে মেইনস্ট্রিম শপিং প্ল্যাটফর্মের আইটেম। সেক্স টয় বা যৌন পণ্য কেনা এখন মুদির বাজারের মতোই সহজ!
দু-এক দশক আগে, দোকানে গিয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিনের মতো অতি জরুরি জিনিস কেনা নিয়েও নানা লুকোছাপা ছিল সমাজে। খবরের কাগজে মুড়ে বা কালো প্লাস্টিকে মুড়ে দোকানদার বিক্রি করতেন ন্যাপকিন। সপরিবার টিভির সামনে বসে কিছু দেখার সময়ে ন্যাপকিনের বিজ্ঞাপন চলে এলেও অস্বস্তিতে পড়তেন অনেকে। গত কয়েক বছরে সে ট্যাবু ধীরে ধীরে কাটলেও, দোকানে গিয়ে কন্ডোম কেনা নিয়েও অস্বস্তির মুখে পড়তেন কেউ কেউ। তবে আধুনিক প্রজন্ম এখন অনেক স্মার্ট। তার উপর অনলাইন কেনাবেচা শুরু হওয়ার পরে এসব সমস্যার অনেকটাই সমাধান হয়েছে।
তাই বলে সেক্স টয়!
তবে এই পরিবর্তন একদিনে হয়নি। নানা আর্থসামাজিক অগ্রগতির পথে এগোতে এগোতে, আধুনিকতার এই সিঁড়িতে পা রাখতে পেরেছে এদেশের মানুষজনের একাংশ, বিশেষত মেট্রো শহরের নয়া প্রজন্ম।
সহজলভ্যতা একটা বড় কারণ। অনলাইনে এখন বিদেশি জিনিসও আনানোর সুবিধা। ফলে এই ধরনের জিনিস নিয়ে যাঁদের কারবার, তাঁরা এখন অনেক সহজেই আনতে পারেন। আগে হয়তো এই জিনিসই আনতে যেতে হতো তাইল্যান্ড বা হংকং।
তবে ঘরে ঘরে এই পণ্যের উঁকিঝুঁকির আরও বড় একটি কারণ হল, মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন। বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে, ওটিটি সাইটে, সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন যৌন শিক্ষা বিষয়ক কনটেন্টের প্রভূত বাড়বাড়ন্ত। বিশেষ করে মেয়েদের যৌন স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা বেশ প্রচলিত হয়ে উঠেছে।
‘মাই মিউজ’ নামের সেক্স টয় ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা অনুষ্কা গুপ্ত বলেন, ‘মানুষ এখন নিজেদের ইচ্ছা ও প্রয়োজন সম্পর্কে আরও সচেতন হচ্ছে, কারণ মিডিয়া নানা ধরনের সম্পর্ক এবং বাস্তবের বিভিন্ন সম্পর্কের চিত্র তুলে ধরছে।’
এমনই এক ব্র্যান্ড 'লাভ ডিপো'র ব্যবসায়িক প্রধান অর্জুন শিবা বলেন, ‘এদেশের তরুণ এবং আধুনিক শহুরে বাসিন্দারা যৌন স্বাস্থ্যকে জীবনযাত্রার অঙ্গ হিসেবেই দেখতে শুরু করেছেন। তাঁরা সেক্স টয়কে আর লজ্জার বিষয় হিসেবে দেখছেন না, এটিকে যৌন সম্পর্কের অঙ্গ হিসেবেই গ্রহণ করছেন।’
তথ্য বলছে, এখন আর সেক্সটয় কেনার ব্যাপারটি কেবল মেট্রো শহরের বিষয় নয়, টায়ার থ্রি শহরগুলিতেও এর চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সুযোগ নিচ্ছে নির্মাতা সংস্থাগুলিও, বাড়াচ্ছে জোগান। তবে সারাদেশের সব প্রান্তে পৌঁছতে এখনও দেরি আছে তাদের।
তবে যতটা সহজে মুদির দোকানের জিনিস এখন অর্ডার করা যায়, ঠিক তেমন ভাবেই কুইক কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলির মাধ্যমে এখন যৌন স্বাস্থ্য পণ্য বা সেক্সটয়ও কেনা সম্ভব। ব্লিঙ্কিট, সুইগি, জেপ্টো—কোনও সাইটই পিছিয়ে নেই এই ব্যাপারে। ফলে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সেলস বাড়ছে দ্রুতগতিতে। সেই সঙ্গেই রক্ষা হচ্ছে গ্রাহকের গোপনীয়তাও।
নির্মাতা সংস্থার মালিকরা বলছেন, এই শিল্পের ভবিষ্যৎ আগামী দিনে বেশ উজ্জ্বল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বছর দশেক আগেও ত্বকের যত্ন নিতে একটি বা দু’টি স্কিনকেয়ার পণ্যই বুঝতেন সকলে। কিন্তু আজকাল আলাদা আলাদা মানুষের কাস্টমাইজড স্কিনকেয়ার রুটিন তৈরি হয়েছে, সেইমতো পণ্যও বেড়েই চলেছে। তেমনই এখন যৌন স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসছে।
তাই সভ্যতা যত আধুনিক হবে, সময় যত সামনের দিকে এগোবে, মানুষ যত মুক্তমনা হবে, ততই এই শিল্পেরও বৃদ্ধি হবে। এটি কিন্তু নিছক জেগে ওঠা কোনও ট্রেন্ড নয়, এটি লাইফস্টাইল পরিবর্তনের অঙ্গ। গোপনীয়তা বা লজ্জার বেড়া পার করে মানুষের সুস্থ ও সুখী জীবনযাত্রায় এক ক্লিকে ঢুকে পড়ছে সেক্স টয়।