গরমে হার্টের রোগীদের সাবধানের থাকার পরামর্শ চিকিৎসকদের।
শেষ আপডেট: 27 April 2024 23:42
দ্য ওয়াল ব্যুরো: তাপপ্রবাহ রেকর্ড ভাঙছে পশ্চিমবঙ্গে। এখনই তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছুঁয়ে ফেলেছে কলকাতায়। বর্ধমান, আসানসোল, পুরুলিয়ায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছে। রিয়েল-ফিল আরও বেশি। প্রচণ্ড গরম উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি জেলাগুলোতেও। তাপদাহে হাঁসফাঁস অবস্থা মানুষজনের। রাস্তায় বের হলেই রোদের তেজ যেন গা পুড়িয়ে দিচ্ছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতর যে স্পেশাল বুলেটিন বের করেছে, তাতে পই পই করে সতর্ক করা হয়েছে যে এমন তাপদাহে ভর দুপুরে রাস্তায় বের হবেন না। বিশেষ করে বেলা ১১টা থেকে ৪ টের মধ্যে ঠা ঠা রোদে বেরোলে হিট স্ট্রোকের ভয় বেশি। চিকিৎসকরা বলছেন, হিট স্ট্রোক শুধু নয়, আবহাওয়ার ভোলবদলে যেভাবে গরম বাড়ছে তাতে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও বাড়ছে।
অভিজ্ঞ কার্ডিওলজিস্টরা বলছেন, প্রচণ্ড গরমে হিট স্ট্রোকের ভয় যেমন আছে, তেমনই ঝুঁকি আছে হার্ট অ্যাটাকেরও। অবাক হলেও এটা সত্যি। সাম্প্রতিক গবেষণাও এমনটাই বলছে। এই সময়েই আপনার অজ্ঞাতসারেই বিগড়ে যেতে পারে হৃদয়ের ছন্দ। হার্ট অ্যাটাক হানা দিতে পারে যখন তখন।
তাপপ্রবাহে কীভাবে হার্টের রোগের ঝুঁকি বাড়ে?
২০০১ থেকে ২০১৫ সাল অবধি বিভিন্ন বয়সের মানুষের ওপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে, গ্রীষ্মকালের দাবদাহের সঙ্গে হার্টের রোগের যোগসূত্র আছে। যদি তাপপ্রবাহ শুরু হয়, রাতের তাপমাত্রাও বেশি থাকে, তাহলে হার্টের রোগীদের সাবধান থাকতেই হবে। অতিরিক্ত ঘামও বিপদের কারণ হতে পারে। কোমর্বিডিটির রোগীদের ঝুঁকি আরও বেশি। কিডনির অসুখ, ডায়াবেটিস থাকলে সেক্ষেত্রে হৃদরোগের সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়। আর ভারতের মতো গ্রীষ্মপ্রধান দেশে যেখানে গরমকে উপেক্ষা করার কোনও জায়গাই নেই, সেখানে হার্টের রোগীদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে বলেই জানাচ্ছেন ডাক্তারবাবুরা।
গরমে হার্ট অ্যাটাক আসতে পারে তিনটি কারণে
কোলেস্টেরল খুব বেড়ে গেলে
ট্রাইগ্লিসারাইড নিয়ন্ত্রণে না থাকলে
রক্তচাপ আচমকা বেড়ে গেলে
তাছাড়া আরও কারণ রয়েছে, যেমন স্ট্রেস ও অ্যাংজাইটি। চিকিৎসকরা বলছেন, রোগীর ধমনী ব্লক হয়ে গেলে অক্সিজেনপূর্ণ রক্ত হৃৎপিণ্ডে পৌঁছনো বন্ধ হয়ে যায়। তখনই হয় হার্ট অ্যাটাক। দ্রুত চিকিৎসা শুরু না হলে হৃৎপিণ্ডের সেই অংশটি অকেজো হয়ে যায়। গরমকালে এই ধরনের হৃদরোগ হতে পারে রাতের দিকে। বিপদ এড়াতে আরও বেশি সাবধান হতে হবে। বিশেষ করে ষাটোর্ধ্ব পুরুষরা হাই-রিস্ক গ্রুপে রয়েছেন। ৬০ থেকে ৬৪ বছরের মধ্যে এই সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
বেশি ঘামও বিপদের কারণ
হার্টের রোগীদের এই গরমে বেশি সাবধান থাকতে হবে। দরদর করে ঘাম হওয়া একেবারেই ভাল নয়। এতে শরীর থেকে জল ও প্রয়োজনীয় খনিজ বেরিয়ে গিয়ে বিপদ ডেকে আনবে। কার্ডিওলজিস্টরা বলছেন, গরমে হজমের গোলমাল বেশি হয়। বদহজমও হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে।
হার্টের রোগীদের এমন কিছু ওষুধ দেওয়া হয় যা ঝুঁকি বাড়াতে পারে, যেমন রক্তচাপ কমানোর ওষুধ এসিই ইনহিবিটর, ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার এর কারণ হতে পারে।
বুকে-পিঠে ব্যথা, হাতে একটানা ব্যথা হলেও সাবধান হতে হবে। একটানা অনেক দিন ধরে চিনচিনে ব্যথা হলেও সাবধান। এই সব ক্ষেত্রে যত তাড়াতাড়ি ডাক্তার দেখাবেন ততই বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
এই সময় বেশি করে জল খেতে হবে। হার্টের অসুখ থাকলে এই গরমে সকালে ও সন্ধেবেলা ভারী এক্সারসাইজ করবেন না। শরীরে অস্বস্তি হবে, ঘাম বেশি ঝরবে এমন শরীরচর্চা এই সময়ে না করাই ভাল।