বলা হয়েছে, ওই বীজের গুঁড়ো দুধ বা জলের সঙ্গে মিশিয়ে ১০ দিন খেলেই কিডনির পাথর প্রাকৃতিক উপায়ে গলে যাবে এবং ডায়াবেটিসের মতো রোগও সম্পূর্ণ সেরে যাবে।
গ্রাফিক্স - দ্য ওয়াল
শেষ আপডেট: 30 June 2025 14:32
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সম্প্রতি একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট দাবি করেছে, মাত্র ১০ দিনের ব্যবহারে জামের বীজের গুঁড়ো কিডনির পাথর এবং ডায়াবেটিস সারিয়ে তোলে। পদ্ধতি হিসাবে বলা হয়েছে, ওই বীজের গুঁড়ো দুধ বা জলের সঙ্গে মিশিয়ে ১০ দিন খেলেই কিডনির পাথর প্রাকৃতিক উপায়ে গলে যাবে এবং ডায়াবেটিসের মতো রোগও সম্পূর্ণ সেরে যাবে।
বৈজ্ঞানিক কোনও প্রমাণ নেই যে জামের বীজের গুঁড়ো কিডনির পাথর গলাতে পারে। কিডনির পাথর মূলত জমাটবাঁধা মিনারেলস যা অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম, অক্সালেট বা ইউরিক অ্যাসিডের কারণে তৈরি হয়। এর চিকিৎসায় সুনির্দিষ্ট চিকিৎসক পরামর্শ, খাদ্যতালিকার পরিবর্তন, তরল গ্রহণ বৃদ্ধি বা মারাত্মক ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে।
অনেকেই জামের বীজের উচ্চ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদানের কথা শুনে বিভ্রান্ত হন। হ্যাঁ, এতে এমন কিছু পুষ্টি উপাদান আছে যা কিডনির সামগ্রিক স্বাস্থ্য রক্ষা করতে পারে, কিন্তু এগুলো পাথর গলাতে পারে না। কিছু আয়ুর্বেদিক ও প্রাথমিক গবেষণায় বলা হয়েছে, জামের বীজ প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়াতে পারে, যা শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সহায়ক। কিন্তু একে ‘উপশম’ বললেও, ‘চিকিৎসা’ নয়।
বিশেষজ্ঞদের মতামত, ডা. গণেশ শ্রীনিবাস প্রসাদ পি (নেফ্রোলজিস্ট, নারায়ণা হেলথ সিটি, বেঙ্গালুরু) জানান, কিডনিতে পাথর গঠন একটি সাধারণ সমস্যা, বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশের মতো অঞ্চলে। তিনি স্পষ্ট জানান, জামের বীজে কিডনি স্টোন সারানো যায় না। বরং, পর্যাপ্ত জল খান, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন, ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার খান, ইউরিক অ্যাসিড পাথরের ক্ষেত্রে - রেড মিট, চিনি, অ্যালকোহল, ধূমপান এড়িয়ে চলুন।
অন্যদিকে, ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ, এবং এর কোনও “সারানো যায়” এমন চিকিৎসা নেই। জামের বীজের গুঁড়োর মধ্যে ‘জ্যাম্বোলিন’ ও ‘এল্যাজিক অ্যাসিড’ নামে কিছু উপাদান থাকে, যা কিছু ক্ষেত্রে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। তবে এই দাবিগুলো মূলত পশু-ভিত্তিক গবেষণাতেই সীমাবদ্ধ।
মানুষের ওপর কোনও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে আজ পর্যন্ত প্রমাণ হয়নি যে জামের বীজের গুঁড়ো দিয়ে ডায়াবেটিস সারে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে দরকার সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ খাওয়া, নিয়মিত ব্লাড সুগার টেস্ট।
নিজে থেকে ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে জামের বীজের গুঁড়ো খাওয়া শুরু করলে অনেক রোগী ভুল করে ওষুধ বন্ধ করে দিতে পারেন, যা বিপজ্জনক।
পুষ্টিবিদ মানসী বান্ডুনি বলেন, কিছু উপকারিতা থাকলেও একে একমাত্র ভরসা করা উচিত নয়। সবসময় ওষুধ, ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাবার ও জীবনযাপন বজায় রাখা জরুরি। ডা. আশীর্বাদ পাওয়ার (ডায়াবেটোলজিস্ট, মুম্বই) বলেন, ভুল ঘরোয়া প্রতিকারের ওপর নির্ভর করলে দেরিতে সঠিক চিকিৎসা পাওয়া হয়, এবং এতে বড় বিপদ হতে পারে।
তাছাড়া প্রতিদিন জামের বিচির গুঁড়ো খাওয়া নিরাপদ নয়। বিশেষ করে ডায়াবেটিসের ওষুধ খাওয়া রোগীদের জন্য এটি হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে শর্করার মাত্রা বিপজ্জনকভাবে কমে যাওয়া) ঘটাতে পারে।
জামের বীজের গুঁড়ো নিয়ে যা প্রচার হয় তার বেশিরভাগই ঐতিহ্য নির্ভর, বৈজ্ঞানিক নয়। এটি কিছু সামান্য উপকার দিতে পারে, তবে কিডনির পাথর বা ডায়াবেটিস সারাতে পারে না। নতুন কোনও হার্বাল বা ঘরোয়া উপাদান খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, বিশেষ করে যদি আপনি কোনও দীর্ঘমেয়াদী রোগে ভুগে থাকেন।