গ্রাফিক্স: দিব্যেন্দু দাস
শেষ আপডেট: 17 April 2025 20:50
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আজকাল পিরিয়ড নিয়ে কোনও সমস্যায় ভুগছেন না, এমন মহিলা হয়তো খুব কম রয়েছেন। মাসের ওই কয়েকদিন রক্তপাত, যন্ত্রণা আরও নানা সমস্যা যেন সঙ্গী হয়ে উঠেছে তাঁদের। এইসব কিছু থেকে মুক্তি পেতে ওষুধই ভরসা। কিন্তু তারও অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাই ঘরোয়া উপায়ে কীভাবে এই সমাধান সম্ভব তা নিয়ে তোলপাড় সোশ্যাল মিডিয়া।
ডিজিটাল এই যুগে অনেক কিছু ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তেমনই এক পোস্টে দাবি করা হয়েছে, একটি নির্দিষ্ট ঘরোয়া পানীয় খেলে মাত্র সাত দিনের মধ্যে পিরিয়ড সংক্রান্ত সব সমস্যার সমাধান সম্ভব।
দাবিটি ঠিক কী?
একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্টে বলা হয়েছে, বিটরুট, শসা, ভেজানো চিয়া বীজ, পুদিনা পাতা, লেবুর রস এবং দারচিনি দিয়ে তৈরি এক পানীয় অনিয়মিত পিরিয়ড থেকে মুক্তি দিতে পারে। আরও বলা হয়েছে, এটি পিরিয়ডের সময় ব্যথা কমায় এবং তা নিয়মিত হওয়ার নিশ্চয়তা দেয় মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে।
• বিটরুটে প্রচুর আয়রন ও ফোলেট থাকে, যা রক্তাল্পতা থাকলে উপকার পাওয়া যায়।
• চিয়া বীজে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও ফাইবার।
• লেবুর রসে আছে ভিটামিন সি।
এই পানীয় কি সত্যিই অনিয়মিত পিরিয়ড থেকে মুক্তি দিতে পারে?
এককথায়, না। বিটরুট, শসা, চিয়া বীজ, পুদিনা, লেবু, দারচিনি- এগুলো সবই পুষ্টিকর এবং এদের নানা উপকারিতা রয়েছে। কিন্তু পিরিয়ড নিয়মিত করার মতো বড়সড় পরিবর্তন এরা সাত দিনের মধ্যে আনতে পারে, এমন কোনও বিজ্ঞানসম্মত প্রমাণ নেই।
পিরিয়ড অনিয়মিত হওয়ার পেছনে কারণ থাকে অনেক, যেমন- হরমোনজনিত সমস্যা, মানসিক চাপ, খাদ্যাভ্যাস, কিংবা অন্য সমস্যা। এসবের জন্য শুধু খাবার নয়, প্রয়োজন চিকিৎসকের পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা।
এই পানীয় কি পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে?
সম্ভব, তবে তা খুবই কম কাজে লাগে। দারচিনি ও পুদিনার মতো উপাদানে ইনফ্লেমেশন কমানোর গুণ আছে, যা সামান্য ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, দারচিনি পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে পারে। পুদিনা হজমে সাহায্য করে এবং ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমের (IBS) উপসর্গ কিছুটা হলেও কমাতে সক্ষম। তবে এই পানীয় পিরিয়ডের তীব্র ব্যথা নিরাময়ে বিশেষ কার্যকর, এমন কোনও প্রমাণ নেই।
বিশেষজ্ঞ কী বলছেন?
ডক্টর স্বাতি দাভে, পুষ্টিবিদ ও গবেষক বলেন ‘বিটরুট, চিয়া বীজ আর লেবুর রস নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখলে উপকার পেতে পারেন, কিন্তু এগুলো কোনও ম্যাজিক সমাধান নয়। পিরিয়ডের সময় শরীর ঠিক রাখতে হলে পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস, সঠিক পরিচর্যা, এবং অনেক সময় দরকার পড়লে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।’
তাহলে কি শুধু পানীয় খেয়েই পিরিয়ডের সমস্যা সারানো সম্ভব?
না, একেবারেই নয়। পিরিয়ড সংক্রান্ত সমস্যার পেছনে থাকতে পারে বহু জটিল কারণ যেমন, পিসিওএস, থাইরয়েড সমস্যা, অতিরিক্ত মানসিক চাপ, বা অন্য কোনও হরমোনজনিত সমস্যা। এসব সমস্যার চিকিৎসা সাধারণত ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া সম্ভব নয়।
পিরিয়ড সংক্রান্ত যে কোনও সমস্যার সঠিক সমাধান করতে হবে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের সাহায্যে, কারণ এর পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে ঘুমের সমস্যা, থাইরয়েডের ভারসাম্যহীনতা, এমনকি হৃদরোগের আশঙ্কাও।