গ্রাফিক্স- দিব্যেন্দু দাস
শেষ আপডেট: 5 May 2025 13:08
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পিরিয়ড নিয়ে যুগে যুগে নানারকম তথ্য শুনে আসছে মেয়েরা। এটা করা উচিত, ওটা করা উচিত নয় এমন অনেক কথা শুনে মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। তাঁর মধ্যেই ডিজিটাল যুগে আরও অনেক তথ্য না চাইতেই ভিড় করে আসে সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায়।
সম্প্রতি এক ইনস্টাগ্রাম ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে, পিরিয়ডের প্রথম তিন দিন স্নান করলে শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়, রক্ত সঞ্চালন বাধা পায়। ক্লান্তি ও নানা স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সমস্যাও হতে পারে। ভিডিওতে আরও বলা হয়েছে, ‘সঠিক রীতি মেনে’ চতুর্থ দিন থেকে স্নান করা উচিত। এই ভাইরাল ভিডিওর দাবি নিয়ে শুরু বিতর্ক। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, এর কোনও বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা নেই।
এই বিষয়ে কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা? জেনে নিন বিস্তারিত-
পিরিয়ড চলাকালীন স্নান করলে বা চুল ধুলে শরীরের তাপমাত্রায় তেমন কোনও পরিবর্তন ঘটে না। উষ্ণ বা ঠান্ডা জলে শরীরের তাপমাত্রা সাময়িকভাবে সামান্য বাড়তে পারে। তবে আমাদের শরীরের নিজস্ব তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এতটাই দক্ষ যে তাতে তেমন কোনও সমস্যা হয় না। অনেক চিকিৎসক সেই সময় উষ্ণ জলে স্নান করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন, তাতে পেটের ব্যথা কমে ও পেশি শিথিল হয়।
আয়ুর্বেদেও বলা নেই যে পিরিয়ড চলাকালীন স্নান করা যাবে না। এ ধরনের বিশ্বাস মূলত সংস্কারজাত, বৈজ্ঞানিক নয়। আগেকার দিনে পরিষ্কার জলের অভাব বা স্যানিটারি পণ্য না থাকার কারণে হয়তো এমন ধারণা তৈরি হয়েছিল।
ডাঃ আকাঙ্ক্ষা ত্রিপাঠি, (সিনিয়র গাইনোকলজিস্ট, প্যারাস হাসপাতাল, উদয়পুর) বলেন, ‘পিরিয়ডের সময় নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা জরুরি। স্নান না করলে হাইজিনের সমস্যা হয়, যা ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ায়। উষ্ণ জলে স্নান অনেকের ক্ষেত্রে স্বস্তিও এনে দেয়।’
রক্তপ্রবাহে কি কোনওরকম প্রভাব পড়ে?
একদমই না। পিরিয়ডের রক্তপাত শরীরের হরমোনের পরিবর্তন ও ইউটেরাসের ওপর নির্ভর করে। বাইরের তাপমাত্রা বা স্নান করার সঙ্গে এর সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই। বরং, উষ্ণ জলে স্নান করলে ইউটেরাসের পেশি শিথিল হয়, ফলে রক্তপাত স্বাভাবিকভাবে হতে পারে। এর ফলে কিছুটা ‘ক্লান্তি’ অনুভব হতে পারে, কিন্তু এটি ক্ষতিকর নয় বরং উপকারী।
ডাঃ মুসকান ঠাকুর, (আয়ুর্বেদ কনসাল্টেন্ট, ইন্দোর) বলেন, ‘আয়ুর্বেদে সরাসরি কোথাও বলা নেই যে চতুর্থ দিন পর্যন্ত স্নান এড়িয়ে চলতে হবে। হালকা গরম জলে স্নান বরং আরাম দেয়।’
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া সব জিনিসকেই গুরুত্ব দেওয়ার আগে ভেবে দেখে নিন। কুসংস্কার নয়, বিজ্ঞানকে গুরুত্ব দিন।