শেষ আপডেট: 12th January 2024 18:43
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ঘুমের সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের কাছে যান অনেকেই। অনিদ্রা বা স্লিপ অ্যাপনিয়ার সমস্যা বেশি ভোগায় এখনকার প্রজন্মকে। তার মধ্যেই এমন কিছু উপসর্গ থাকে যা অজানা। আচমকাই শুরু হয় এবং ভোগান্তির শেষ থাকে না। চিকিৎসকরা বলছেন, ইদানীংকালে এমন কিছু রোগী আসছেন যাঁরা বলছেন, ঘুমনোর সময় মনে হয় মাথার ভেতরে আওয়াজ হচ্ছে। কানেও নানারকম শব্দ শোনা যায়। আর তারপরেই তীব্র যন্ত্রণা শুরু হয় মাথায়। এই ব্যথা নাকি মাইগ্রেনের ব্যথার চেয়েও বেশি।
চিকিৎসকরা বলছেন, এই রোগের নাম এক্সপ্লোডিং হেড সিনড্রোম বা ইএইচএস (Exploding head syndrome)। মনে হয় যেন মাথা ফেটে চৌচির হয়ে যাবে ব্যথায়। ঘুমের একধরনের সমস্যা এই রোগ। যাঁর হয় তিনি ঘুমের মধ্যে মাথার ভেতর জোরালো আওয়াজ পান। ফলে ভেঙে যায় ঘুম। অনেকের কাছে এই শব্দ বোমা বিস্ফোরণের মতো প্রচণ্ড মনে হয়। রোগীরা তাই বলেছেন। অনেকেই বলেছেন, যেন মনে হয় মাথায় কেউ পাথর ছুড়ে মারছে, বা জোরে জোরে দরজায় ধাক্কা দিলে যেমন শব্দ হয় তেমনই আওয়াজ হচ্ছে মাথার ভেতরে। সেই সঙ্গে মনে হয় চোখে আলো ফেলেছে কেউ। মাংসপেশিতেও অনিয়ন্ত্রিত কম্পন হতে পারে। এই রোগে যে সবসময় ব্যথা হবে তা নয়, তবে যাদের রোগের তীব্রতা বাড়ে তাদের মাথায় সাঙ্ঘাতিক ব্যথা হয়।
১৮৭৬ সালে মার্কিন স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ সাইয়ালস মিশেল এই রোগের কথা প্রথম বলেন। তিনি তাঁর রোগীদের চিকিৎসার কথাও লেখেন। মিশেলের লেখা থেকে জানা যায় তার রোগীরা বিভিন্ন শব্দ শোনার কথা জানিয়েছিলেন। পিস্তলের গুলি, কাচ ভাঙা, ঘণ্টা বাজা ইত্যাদি নানারকম আওয়াজ বাজতো তাদের মাথায়। প্রাণঘাতী না হলেও এই রোগ সাঙ্ঘাতিক। রোগীদের অনেকেরই মনে হয়েছে এই বুঝি মাথা ফেটে যাবে, অথবা অনেকে বলেছেন তাঁদের মনে হয়েছে যে ব্রেন টিউমার হচ্ছে বা য়ে কোনও সময় স্ট্রোক হয়ে যেতে পারে।
ইএইচএসের সঠিক কারণ বিজ্ঞানীদের এখনও অজানা। আগে মনে করা হত, কানের ভেতর কোনও গন্ডগোলের জন্য ভারসাম্য বিগড়ে যাচ্ছে, তবে এখন চিকিৎসকরা বলছেন এই রোগের অন্য কারণও থাকতে পারে। কী কী কারণে রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে সেটা নিয়েও বিস্তর গবেষণা চলছে। অতিরিক্ত স্ট্রেস, উদ্বেগ, মানসিক চাপ এই রোগের কারণ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এখনকার প্রজন্ম মাল্টিটাস্কিং করে। একই সময় ল্যাপটপ, মোবাইল, ট্যাবে কাজ করে। সেই সঙ্গে কানে বাজে উচ্চমাত্রায় হেডফোন। সেইসবও ব্রেনের কোষের ক্ষতি করে বলে মত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের।
নারী-পুরুষ সবাই আক্রান্ত হতে পারে এই রোগে। মেয়েদের ক্ষেত্রে একটু বেশি হয়- এই যা! একসময় মনে করা হতো মধ্যবয়স্ক মহিলারাই ইএইচএসের প্রধান শিকার। তবে এখন জানা গেছে, যে কোনও বয়সেই হানা দিতে পারে এই রোগ। কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের শতকরা ১৬ ভাগের মধ্যে এক্সপ্লোডিং হেড সিনড্রোম পাওয়া গেছে। ল্যাবরেটরি টেস্ট করে রোগ শনাক্তের উপায় নেই। ভরসা করতে হবে রোগীর আগের রোগের ইতিহাস এবং লক্ষণের ওপর। ডাক্তারবাবুরা বলছেন, তিনটি লক্ষণ দেখা দিলেই সতর্ক হতে হবে—১) ঘুমের ভেতর আচমকা মাথার ভেতর প্রচণ্ড শব্দ, ২) মাথা ব্যথা ৩) কানে নানারকম আওয়াজ। লক্ষণ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সঠিক চিকিৎসা শুরু হলে রোগী ভাল হয়ে যেতে পারে বলে জানাচ্ছেন ডাক্তারবাবুরা।