শেষ আপডেট: 9th November 2024 18:27
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বেঙ্গালুরুর রাস্তায় রিল বানাচ্ছিলেন তরুণী। তাঁকে দেখে প্রথমে কটূক্তি করে এক নাবালক। তারপর তাঁর শ্লীলতাহানি করা হয় বলে অভিযোগ। অভিযুক্তর বয়স মাত্র ১০। বয়স দেখে হাঁ হয়েছেন অনেকেই। বাচ্চাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাওয়া নিয়েও ওঠে প্রশ্ন। কোনদিকে যাচ্ছে সমাজ? ১০ বছরের বাচ্চা শ্লীলতাহানি করছে, কোথায় খামতি থাকছে প্যারেন্টিংয়ে। দ্য ওয়াল কথা বলেছিল কনসালটেন্ট সাইকোলজিস্ট, প্যারেন্টিং কোচ ও স্পেশাল এডুকেটর ডাঃ শ্রীতমা ঘোষের সঙ্গে।
বেঙ্গালুরুর রাস্তায় রিল বানাচ্ছিলেন ওই তরুণী। তাঁকে প্রথমে কটূক্তি করে ওই নাবালক। তারপর মহিলার বুকে হাত দিয়ে পালিয়ে যায়। পালানোর সময় ধরে ফেলেন তরুণী। মারধর শুরু করলে স্থানীয়রা আটকায়। নাবালক তাই এরকম করে ফেলেছে। ছেড়ে দেওয়া হোক, এমন কথাও শোনা যায়।
ঘটনাটির কিছু অংশ রেকর্ড করার চেষ্টা করেন ওই তরুণী। পরে সোশ্য়াল মিডিয়ায় ক্ষোভে পেটে পড়েন। বাচ্চা বলে অপরাধকে অপরাধ হিসেবে ধরা হবে না, এই বিষয়টিও ঠিক নয়, মন্তব্য করেন অনেকে।
১০ বছরের বাচ্চা। এরকম কাজ করেছে, এই কথাও উঠে আসে। তবে, শ্লীলতাহানির ঘটনায় কোনও নাবালকের জড়িয়ে পড়া এই প্রথম নয়। এর আগে সুস্মিতা সেনের সঙ্গে একটি অ্যাওয়ার্ড ফাংশনে এমন ঘটনা হয়েছিল। দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ডতেও অভিযুক্ত নাবালকই। নাবালকদের মধ্যে এই ধরনের অপরাধ প্রবণতা নিয়েই চিন্তিত বাবা-মায়েরা।
কেন বাড়ছে এমন ঘটনা? কেন অপরাধের দিকে ঝুঁকছে এত ছোট ছোট বাচ্চারা? এনিয়ে ডাঃ শ্রীতমা ঘোষ বলেন, 'বাচ্চাদের ক্ষেত্রে যৌনতা ও সে সম্পর্কিত বিষয়গুলি নিয়ে কিছু ধারণা রয়েছে। এখন সব তথ্যই খুব সহজে হাতে পাওয়া যায়। সবকিছু হাতের কাছেই রয়েছে। এক্সপ্লোর করে ফেলতে পারে। সবসময় বুঝে করছে এমন না। কৌতুহল বশত করে ফেলছে। যার ১৭, সে খানিকটা বুঝে করলেও ১০ বছরের বাচ্চা সব বুঝে, কী পরিণতি হতে পারে পরে সেটা বুঝে অন্যায় করছে এমন না।'
তাহলে গলদটা কোথায়? উত্তরে মনোবিদ জানান, 'এটা হতে পারে, অনেক তথ্য সে পেয়ে গিয়েছে। সেটা কোথায় বলবে বা কাকে বলবে বুঝতে পারছে না। বা সমাজেও এগুলো নিয়ে এত বাউন্ডারি থাকে। যার ফলে কেউ বসে তার সঙ্গে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করছে না। হালকা হচ্ছে না। তাই লুকিয়ে এক্সপ্লোর করার একটা ইচ্ছে থেকে যাচ্ছে। যার ফলে এরকম ঘটনা হতে পারে।'
শুধু এগুলোই দায়ী তা নয়, মনোবিদের মতে, ছোট থেকে বাচ্চা কী শিখছে সেটারও একটা প্রতিফলন প্রতিটা অ্যাকশনের মধ্যে থাকে। তিনি বলেন, 'ছোটবেলা থেকে বাচ্চা কী শিখছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। বাড়িতে মহিলাদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করা হয়, সেটা দেখে সে কিন্তু শেখে। এটার একটা বড় গুরুত্ব রয়েছে।'
তাহলে কি সেক্স এডুকেশনের অভাব? এনিয়ে সচেতনতার অভাব? মনোবিদ বলেন, 'সেক্স এডুকেশন বললেই ফরমাল সেটআপে চলে আসি আমরা। কিন্তু এটা এভাবে হয় না। এটা একটা খুবই সাধারণ প্রসেস। বড়রা যদি বাড়িতে এমন একটা পরিবেশ তৈরি করতে পারেন, যাতে ছোটরা এসে সবটা তাদের সঙ্গে শেয়ার করবে, তাহলে এই সমস্যা খানিকটা মিটতে পারে।'
পরিবার ভেঙে ছোট হওয়া ও ধীরে ধীরে নিউক্লিয়ার হয়ে যাওয়া এই অপরাধ প্রবণতার পিছনে অনেকটা দায়ী। বাড়িতে কাউকে কিছু বলতে না পারা বা নিজের থেকে কম বয়সের ব্যবধানের কাউকে খুঁজে না পাওয়া একটা বড় সমস্যারও। তিনি বলেন, 'আসলে আগে বিভিন্ন রোলের জন্য বিভিন্ন মানুষ পরিবারে ছিল। যেমন আবদারের জন্য দাদু-ঠাকুমারা, লুকিয়ে আলোচনা করতে হলে কমবয়সি কোনও কাকা-পিসি, মাসী বা দাদা। এখন সেসব নেই। সবটাই বাবা-মাকে করতে হয়। তাই তারা ডিসিপ্লিনও বজায় রাখবেন আবার ওপেন স্পেসও রাখবেন, সবসময় সেটা হয়ে ওঠে না। তাই বাবা-মাকেই এই আবহাওয়াটা বাড়িতে তৈরি করতে হবে।'
বাবা-মায়েদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'বাবা-মাকে এটা বুঝতে হবে, এটা টেকনিক্যাল জিনিস, তথ্য বাচ্চারাও পাবে। কিন্তু বয়স অনুযায়ী। একই সঙ্গে সব তথ্য পাওয়া যাবে না। ৩ বছরে যেটা পাওয়া যাবে, সেটা ৬ বা ১০-এ না। আবার বড় হলে সেরকম তথ্য দেওয়া হবে। কোনও বিষয় নিয়ে আলোচনা করাই যায়। কিন্তু বুঝে। এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনাই হবে না, এটা ছোট থেকে ঘোষণা করে দেওয়া ঠিক নয়। তাতে সমস্যা বাড়বে।'