শেষ আপডেট: 19th December 2024 00:45
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বহু জায়গায় শুনতে পাবেন 'ভ্রমণপ্রিয় বাঙালি।' বাঙালিদের পরিচয় দেওয়ার আগে এই 'ভ্রমণপ্রিয়' শব্দটি ব্যবহার করা হচ্ছে বহুকাল ধরে। কারণ বাঙালি ঘুরতে ভালবাসে। এই ভ্রমণপ্রিয় মানুষজনই ২০২৪-এ রাজ্যের কোন কোন জায়গায় সবচেয়ে বেশি ঘুরলেন! আসুন দেখে নেওয়া যাক।
সুন্দরবন
দু-এক দিনের জন্য কাছেপিঠে ঘুরতে যাওয়ার বাঙালিদের অন্যতম পছন্দের জায়গা হল সুন্দরবন। গা ছমছম অবস্থায় নদী ও জঙ্গলের মাঝে কয়েকটা দিন কাটাতে মুখিয়ে থাকেন অনেকে। এই ম্যানগ্রোভে ঘুরতে গেলে পকেট থেকে বেশি টাকাও খসে না। মাত্র পাঁচ হাজার টাকায় দু'দিন সুন্দরবনে কাটাতে পারেন দু'জন। ২০২৪-এ বাংলার অন্যতম বেস্ট ট্রাভেল ডেস্টিটেশন এটি।
দার্জিলিং
দার্জিলিঙের প্রতি বাঙালিদের একটা আলাদাই আবেগ রয়েছে। বছরের যেকোনও সময় কোথাও কিছু নেই, দার্জিলিং আছে। প্রচন্ড ভিড় নিয়ে নাক শিটকালেও দার্জিলিঙে ঘুরতে কোনও আপত্তি নেই। একদিকে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপূর্ব দৃশ্য, অন্যদিকে বিভিন্ন নস্টালজিক ক্যাফে, দোকান ও শপিং প্লেস। যুগ যুগ ধরে বাঙালিদের সবচেয়ে ফেভারিট ডেস্টিনেশন ২০২৪-এও টপে। এখানে ঘুরে দেখতে পারেন হিমালয়ান জুলজিক্যাল পার্ক, ঘুমা মনাস্ট্রি, পিস প্যাগোডা, বাতাসিয়া লুপ, মহাকাল মন্দির।
মিরিক
দার্জিলিঙের একদম কাছে মিরিকও বাঙালিদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। এখানকার মনোরম পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষণ করে। অসাধারণ সানরাইজ ও সানসেট দেখা যায় এখান থেকে। সাধ্যের মধ্যে মিরিকে থাকার একাধিক জায়গা রয়েছে, রয়েছে হোমস্টে।
কার্শিয়াং
শিলিগুড়ি থেকে ৪৭ কিলোমিটার এবং দার্জিলিং থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে কার্শিয়াং। উত্তরবঙ্গের প্রত্যেকটি পাহাড়ি জনপদের যেমন আলাদা রূপ রয়েছে কার্শিয়াংও তেমন। রাস্তাঘাট কুয়াশায় ঘেরা, চারিদিকে সবুজ গাছ। কার্শিয়াং বললেই চোখে ভেসে ওঠে মেঘেদের খেলাধুলো, আনাচে-কানাচে ঘোরাফেরা। একাধিক টি স্টেট রয়েছে এখানে, ঘুরে দেখে নিতে পারেন। খাওয়া দাওয়া এবং থাকার খরচাও সাধ্যের মধ্যে। তাই ২০২৪-এ বাঙালিদের অন্যতম পছন্দের ডেস্টিনেশনের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে এটি।
কালিম্পং
পুরনো গির্জা, বৌদ্ধ মন্দির ও একাধিক ছোট ছোট গ্রাম। দার্জিলিং থেকে কালিম্পঙের দূরত্ব মাত্র ৫৩ কিলোমিটার। উত্তরবঙ্গের অন্যতম সেরা স্থান। মার্চ থেকে মে পর্যন্ত এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এখানে প্রচুর ভিড় হয়।
শান্তিনিকেতন
হাতে রয়েছে মাত্র একটা দিন, টুক করে শান্ত স্নিগ্ধ শান্তিনিকেতন বেস্ট ডেস্টিনেশন। এখানকার রাস্তাঘাট, আকাশ বাতাস, লোকজনের কথা বাড়ি-ঘরের নাম, রাস্তাঘাটের নাম সবেতেই রবীন্দ্রনাথ বিরাজ করেন। এখানকার শিল্প, আবহাওয়া, মানুষের ব্যবহার এবং বিশ্বভারতীর আশপাশের সমস্ত এলাকা মুগ্ধ করবে। প্রচুর বাঙালি প্রতিদিন শান্তিনিকেতন ঘুরতে যান। থাকেন এবং সেখানকার শিল্পকে স্বীকৃতি দিতে কেনাকাটাও করেন। শুধু বস্ত্র শিল্প নয় এখানকার রন্ধনশিল্প ভীষণভাবে প্রশংসিত।
লাটাগুড়ি
উত্তরবঙ্গের অন্যতম বিখ্যাত এবং আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হল লাটাগুড়ি। চারিদিকে ঘন জঙ্গল, মাঝে ছোট ছোট গ্রাম, এখানকার পরিবেশ মানুষকে মুগ্ধ করে। গরুমারা পার্ক ঘুরে দেখা যেতে পারে লাটাগুড়িতে এলে আর এটাই এখানকার প্রধান আকর্ষণ। থাকা-খাওয়ার খরচ খুব বেশি নয় তাই এই জায়গা ২০২৪-এ বাঙালিদের কাছে খুবই জনপ্রিয় হয়েছে। কলকাতা বা পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে বাইক বা গাড়ি নিয়েও বহু মানুষ এখানে পৌঁছেছেন।
ডুয়ার্স
দুয়ার বা দরজা থেকে নাম হয়েছে ডুয়ার্স। ভুটানের সঙ্গে এদেশের মানুষের যোগাযোগের জন্য ১৪ টি গেট রয়েছে এখানে। ডুয়ার্সের প্রত্যেকটি জায়গা সুন্দর। তিন-চার দিনের মধ্যে ডুয়ার্স ঘুরে নেওয়া যেতে পারে। কলকাতা থেকেও দূরত্ব মাত্র কয়েক কিলোমিটার। খুব উঁচু পাহাড় নয় তাই বয়স্কদের যেতেও কোনও অসুবিধা হয় না। ডুয়ার্স বছরের যে কোনও সময় যাওয়া যেতে পারে, সবসময়ই ভীষণ সুন্দর। ডুয়ার্স গেলে জলদাপাড়া অবশ্যই ঘুরে দেখতে হবে। হাতির পিঠে চেপে সাফারিও করা যেতে পারে। ২০২৪-এ বাঙালিদের অন্যতম ফেভারিট ডেস্টিনেশন ছিল এটি।
লামাহাট্টা
চারিদিকে পাইন এবং ধুপি গাছে ঘেরা। কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দেখতে দেখতে হারিয়ে কখন যে লামহাট্টায় হারিয়ে যাবেন, বুঝতে পারবেন না। দার্জিলিঙের কাছেই বাঙালিদের এবছরের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান এটি। আগে এখানে হোমস্টের তেমন রমরমা ছিল না কিন্তু বর্তমানে একাধিক বড় রিসর্ট ও হোমস্টে রয়েছে। দার্জিলিঙের ভিড়ভাট্টা না পসন্দ যাদে লামাহাট্টা তারা বেছে নেন। বাস্তবের সঙ্গে রিলেও এবছর তুমুল জনপ্রিয় এটি।
পুরুলিয়া
পাহাড়ের প্রতি ভালবাসা রয়েছে কিন্তু উত্তরবঙ্গ যেতে পারছেন না, এমন মানুষজন পুরুলিয়া যান। কলকাতা থেকে কয়েক ঘণ্টার দূরত্বেই এই সবুজে ঘেরা পর্যটন স্থান বাঙালিদের কাছে বহু বছর ধরে বেশ জনপ্রিয়। শীতকালে কুয়াশা সঙ্গে করেই পুরুলিয়ার পৌছে যাওয়া। অযোধ্যা হিল টপ থেকে আশপাশের দৃশ্য দেখা বা পুরুলিয়ার ছোট ছোট গ্রামে ঘুরে বেড়ানো। বসন্তে আবার শিমুল পলাশের সমারোহ। ২০২৪-এ বাঙালিদের কাছে পুরুলিয়া ছিল মোস্ট ট্রাভেলড ডেস্টিনেশনের অন্যতম।