
ফেস্টিভ সিজন শেষ, কিন্তু তাই বলে উৎসব শেষ হয়ে যায়নি এখনও! উত্তুরে হাওয়া বইতে শুরু করেছে। আর কলকাতায় শীত আসা মানেই তো উৎসব। একদিকে ক্রিসমাস নিউ ইয়ারের হাতছানি, আর অন্যদিকে কার্তিক পেরোতেই বিয়ের মরশুম শুরু…
বেনারসি ছাড়া বাঙালিদের বিয়ে ভাবাই যায় না, তাই না! মেহেন্দি সংগীত- বিয়ের নানা আচার অনুষ্ঠানে আজকাল অনেকেই নানা প্রাদেশিক সিল্ক, লেহেঙ্গা এসব পরেন। কিন্তু যত দামি পোশাকই হোক না কেন, বেনারসির রাজকীয় লুকের ধারেকাছেও আসেনা। তাই বিয়ের সন্ধেয় বাঙালি কনের প্রথম পছন্দ আজও সেই বেনারসি।
সোনালি জরির কাজ করা লাল টুকটুকে বেনারসি আর এক গা গয়না— বাঙালি কনের এই সাবেক রূপের আকর্ষণই আলাদা। নিজের জীবনের এই বিশেষ দিনটায় আজকের আধুনিকাদেরও প্রথম পছন্দ সেই বেনারসি। আলতা, সিঁদুর আর বেনারসির লাল রঙে বিয়ের সন্ধেয় পাশের বাড়ির সাধারণ মেয়েটিও হয়ে ওঠে অনন্যা, যেন রূপকথার পাতা থেকে উঠে আসা লজ্জাবতী রাজকন্যে।টকটকে লাল এই ব্রাইডাল বেনারসিগুলো দেখুন। পছন্দমতো ছোট-বড় বুটির, বা ঘন জাল কাজের এই বেনারসিগুলোর স্টার্টিং রেঞ্জ একেবারে সাধ্যের মধ্যেই। ৫০০০ টাকা থেকে শুরু এই ব্রাইডাল শাড়িগুলো। কাজ অনুযায়ী সামান্য হেরফের হয় দামে।
আর যদি কেউ আভিজাত্যে মোড়া পিওর কাতান বেনারসি চান, তাও পাবেন। রেঞ্জ শুরু ৭০০০ থেকে। কাজ অনুযায়ী দাম ঘোরাফেরা করে ৮০০০ থেকে ১২০০০ এর মধ্যে। পিওর কাতান এই বেনারসিতে সিল্কমার্কও পাবেন। তাই ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই নেই।
একটু চাপা রং যাদের তাঁরা টকটকে লালের বদলে বেছে নিতে পারেন একটু জমাট রক্ত রংয়ের গাঢ় লাল বেনারসি, বা কিছুটা মেরুন ঘেঁষা কালচে লাল রং। ঘন প্রবালের মতো এই চাপা রংগুলোর আভিজাত্যই আলাদা। তার উপর লতাপাতার জংলা কাজ আর অল্প মিনেকারি থাকলে তো কথাই নেই। বিয়ের রাত্রে আপনার দিক থেকে চোখ ফেরাতেই পারবে না কেউ।
বেশি ঘন কাজ পছন্দ না হলে ছোট্ট বুটির হালকা কাজের দুইরঙা হাফ-হাফ বেনারসি আর একটু ভারি গয়নার সাবেক সাজেও তাক লাগিয়ে দিতে পারেন।বিয়েতে বেনারসি গিফট করতে চাইছেন! দাম শুনে থমকাবেন না! ব্রাইডাল বেনারসির স্টার্টিং রেঞ্জ কিন্তু ৩০০০/-… ৩ থেকে ৫ হাজারের মধ্যে পেয়ে যাবেন নানা রঙের নানা ভ্যারাইটির এক সে বড়কর এক বেনারসি। ব্রাইডাল থেকে রিসেপশন লুক- কল্কা থেকে মিনাকারি সবরকম কাজের বেনারসিই পাবেন পকেটফ্রেন্ডলি এই রেঞ্জে।কী বললেন! দাম নিয়ে মোটেও ভাবছেন না। শুধু বিয়ের দিনে একটু অন্যরকম গ্ল্যাম লুক চাই! সিক্যুয়েন্সের কাজ করা এই কাতান বেনারসিগুলো আগে দেখেছেন কি! লাইট ওয়েট, পাড়ে আর আঁচলে ভেলভেট আর সিক্যুয়েন্সের কাজ- শড়িতে একটা আলাদা গ্ল্যাম লুক নিয়ে এসেছে, তাই না! বিয়ের রাতে নিজেকে একেবারে অন্যরকমভাবে প্রেজেন্ট করতে চাইলে এই এক্সক্লুসিভ কাজ করা বেনারসির জুড়ি নেই। ভারী জারদৌসি বেনারসি ক্যারি করতে ভয় পান যারা, তাঁদের জন্যও এই এক্সক্লুসিভ ব্রাইডাল শাড়ির জুড়ি মেলা ভার! কনট্রাস্ট কালারের ডাবল ব্লাউজ পিস আর ওড়না সহ এই টোট্যাল ব্রাইডাল সেটগুলো কিন্তু এবছরের ট্রেন্ড সেটার। দাম একটু বেশির দিকে হলেও ক্ষতি নেই। এই রাজকীয় লুকে আপনাকে লাগবে আর পাঁচটা বাঙালি কনের থেকে এক্কেবারে হটকে।
বেনারসি পরবেন, কিন্তু লাল রঙে আপত্তি! বিয়ের দিন একটু অন্যরঙে নিজেকে সাজাতে চাইলেও অপশন প্রচুর। সন্ধের সাজে অরেঞ্জ, রানি, বা রাস্ট কালারের বেনারসিগুলো ট্রাই করতে পারেন। আপনার স্কিন টোন যাই হোক না কেন, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ক্যারি করতে পারলে এই কালারটোনে আপনাকে ব্রাইট লাগবেই।আজকের আধুনিকাদের পছন্দের একেবারে প্রথম সারিতেই রয়েছে অরেঞ্জ আর হট পিংকের উপর গোল্ডেন জরির কাজের হাফ হাফ বেনারসি।
ওয়াইন বা মভ কালারের বেনারসি তো অনেকেরই আছে, আপনি চাইলে বিয়ের রাতে ট্রাই করতে পারেন পার্পল ঘেঁষা পিঁয়াজ রঙের মিনাকারি বেনারসি। সঙ্গের জুয়েলারিতেও অল্প মিনেকারির কাজ যদি থাকে, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। আভিজাত্য আর স্মার্টনেসে আপনি হয়ে উঠবেন এক্কেবারে আজকের পারফেক্ট বধূ।
একটু বেশি বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন যাঁরা তাদের অনেকেরই পছন্দ লাল সাদা কোরিয়াল বেনারসি। পিওর কাতানে কোরিয়াল বেনারসির দাম শুরু ৮০০০ টাকা থেকে। যারা একটু হালকা অথেন্টিক সাজে বিশ্বাসী, D Day-র জন্য তাঁরা অনায়াসে পছন্দ করতে পারেন এমন কোরিয়াল কাতান বেনারসি।
বিয়ের তত্ত্বে শাশুড়িদের জন্য কোরিয়াল বেনারসি কেনার ইচ্ছে থাকে অনেকেরই।এই জাতীয় বেনারসির রেঞ্জ শুরু হচ্ছে ৩০০০ টাকা থেকে। মা, শাশুড়ি বা বাড়ির গুরুজনদের গিফট করার জন্য এক্কেবারে পারফেক্ট এই বেনারসি।
বিয়ের দিনের কথা তো হল, এবার আসি রিসেপশনের কথায়। রিসেপশনের রাত্তিরে রাজরানি লুক চাইলে বেছে নিতেই পারেন মিডনাইট ব্লু বা রয়্যাল ব্লু’র উপর বড় বড় আমকলকা বা পেসলি মোটিফের জমকালো বেনারসি। বটল গ্রিন আর মারুনের কম্বিনেশন তো চিরন্তন। একটু উজ্জ্বল সাজতে চাইলে ট্রাই করতেই পারেন প্যারট গ্রিন বা সি গ্রিনের বেনারসি। সোনার গয়না তো বটেই, এমনকি ডায়মন্ড বা পছন্দসই কস্টিউম জুয়েলারির সঙ্গেও দিব্যি মানিয়ে যাবে।এই কালার কম্বিনেশনগুলো পুরোনো হয়না। সারাজীবন পরা যায়। আর পরের প্রজন্মকে পাস অনও করা যায় অনায়াসে। বাঙালির কাছে বেনারসি মানেই তো নস্টালজিয়া। তাই তো ঠাকুমা দিদিমার বেনারসি পরে অবলীলায় বিয়ের পিঁড়িতে বসে আজকের ওয়াই জেনারেশন…