
গৌরী বোস
শীত আসার জন্য আমরা সবাই বসে থাকি চাতকের মত। খাওয়া, ঘোরা, বেড়াতে যাওয়া, সঙ্গে ক্রিসমাস, নিউইয়ার, বাঙালির পিঠেপুলি, নলেন গুড়, মোয়া– কত বলব। সব থেকে আনন্দের হল এই ঋতুতে ‘সেজে সুখ’। হাসফাঁস করতে হয় না, বারে বারে টাচ-আপ দিতে হয় না। এই বুঝি স্ক্যাল্প ঘেমে কানের পাশ দিয়ে নেমে আসছে, চুলের কোনও ফ্যাশন করার উপায় নেই, বেঁধে রাখলে তবেই আরাম, ব্লা ব্লা ব্লা… এমন অজস্র অভিযোগ থেকে নিস্তার মেলে শুধু এই শীতকালে। এই ঋতুতেই জমে কালারফুল ড্রেস, মেকআপ, আর চুলের নানান ফ্যাশন।
আমার এই মডেলের চুল বেশ কার্লি । চেহারাও বেশ ভরাট এবং স্বাভাবিক। সবে স্কুল ছেড়ে কলেজে পা রাখা। বড় হয়েছে প্রমাণ করার জন্য চুলে ফ্যাশন কালার করার বায়না, কিন্তু মা বিমুখ। শেষে আমিই মধ্যস্থতা করলাম।
বহুরকমের কম্প্যানি, প্রচুর শেডস্, অ্যাপ্লিকেশন্ টেক্নিকস্ ও স্টাইলস্ আছে। তার ভেতর থেকে বেছে নিলাম ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ স্টাইল। উপরে থাকবে নিজের চুলের রং আর ভেতরে থাকে ফ্যাশন কালার। এর সব থেকে সুবিধা হল এই চুলে ডিফারেন্ট ডিফারেন্ট স্টাইল করা যায়। মডেলের হেয়ার হেল্থ একদমই ভাল নয়- ড্রাই, ড্যামেজড্, স্প্লিট এন্ডস্ নানা কিছু। তাই ৫ থেকে ৭ দিন অন্তর ২টো হেয়ার-কেয়ার করলাম ( চলতি কথায় যা স্পা নামে পরিচিত )। এতে চুলের হেল্থ বেশ কিছুটা ইম্প্রুভ করল। তারপর করলাম ‘আন্ডারগ্রাউন্ড স্টাইল কালার’।
স্টাইল ১: সামনের চুল একসাথে উল্টে ক্রাউন পার্টে(মাথার ওপর) পনিটেল করে বাকি পেছনের চুল খোলা রাখা।স্টাইল ২: পনিটেল পার্টের চুলে ‘অ্যাফ্রিকান ব্রেইড” অর্থাৎ খুব সরু সরু বিনুনি বেঁধে নীচে ফিক্সার স্প্রে করে দিতে হবে। ওপর থেকে ঝুলবে একগোছা সরু সরু বিনুনি যার কালার থাকবে ন্যাচারাল আর নীচের খোলা অংশে থাকবে ফ্যাশন কালার।
স্টাইল ৩: পুরো খোলা চুল। ঘাড়ের কালার্ড হেয়ার দু কানের পাশ থেকে বেরিয়ে সামনে আসবে।স্টাইল ৪ : সামনের সব চুল (কানের পাশ পর্য্যন্ত) একসাথে নিয়ে ‘টপনট’ করে নীচের কালার্ড হেয়ার তাতে জড়িয়ে ইউপিন দিয়ে সিকিওরড্ করে দিলে ‘মেসি বান’ হবে।
স্টাইল ৫: স্টেপকাট চুল থাকলে ওপরের পার্টের চুল পনিটেল করলে দারুণ লাগবে।
এই সমস্ত স্টাইল করার আগে আয়রনিং করে চুল স্ট্রেট করে নিলে তবেই এই লুকস্গুলো আসবে। ন্যাচারাল কার্লি হেয়ারেও একইরকম সব স্টাইল করা যাবে, তবে তা দেখতে হবে একটু আলাদা। সেটাও আর একরকম সুন্দর।
স্টাইল ৬: ‘ককস্ টেল’। স্টাইল-ওয়েভি হেয়ার হলে চুলের নীচের পার্টে ৩-৪ ইঞ্চি একই শেডের লাইট ও ডার্ক কালার করতে হবে। পার্টিং করে একেক ভাগে একেকটা কালার অ্যাপ্লাই করলে এই এফেক্ট আসবে। ‘ককস্ টেল’ করার জন্য পুরো চুল ক্রাউন পার্টে (মাথার ওপর) তুলে টুইস্ট করিয়ে করিয়ে (কালার করা পার্ট ছেড়ে দিয়ে) ক্যাচার লাগিয়ে সিকিওরড্ করতে হবে। এবার কালার্ড হেয়ারগুলো মডেলের স্টাইলের মত করে চারিদিকে ছড়িয়ে দিতে হবে। প্রয়োজনে ইউপিন লাগতে পারে।স্টাইল ৭ : এইরকম কালার্ড হেয়ার খুলে রাখলেও দারুণ দেখায়। আর যদি আয়রনিং করে নেন সে স্টাইল আরও মড্ লাগে।
স্টাইল ৮ : কালার্ড এন্ডস্ চুল পনিটেল করলে বয়সের থেকে অনেক ইয়াং দেখায়।
যাদের গ্রে-হেয়ার আছে সেটা কভার করে তারাও এরকম নানান ফ্যাশন কালার করতে পারেন। পাকা চুল কালার করলে যেমন বয়সকে বেশ খানিকটা দমিয়ে রাখা যায় ঠিক তেমনই হেয়ার কাট্, কালার আর স্টাইলের মাধ্যমে বয়সকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা যায়। বয়েসের তুলনায় ইয়াং দেখানোর জন্য হেয়ার স্টাইল ৫০% দাবিদার ।
লেখিকা বিশেষজ্ঞ এস্থেটিশিয়ান, মেক-আপ ডিজাইনার ও এডুকেটর,
যোগাযোগ- শাকম্ভরী বডি এ্যান্ড বিউটি ক্লিনিক
203, এ.পি.সি. রোড, কোলকাতা 700004
মোবাইল : 7003893883