
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পুজোর আর মাত্র ক’দিন বাকি। আর এই উৎসবের দিনগুলোয় আমাদের বাঙালিদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হল খাওয়া-দাওয়া। তবে এই উৎসবের মরশুমেও অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন অনেকে। কোভিড, ডেঙ্গু অথবা অন্যান্য অসুখ-বিসুখ যাঁরা অসুস্থ রয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে উৎসবের রং যাতে ফিকে না হয়, সে কথা মাথায় রেখেই এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে বেহালার নারায়ণ মেমোরিয়াল হসপিটাল। সবার মুখে হাসি ফোটানোর জন্য হাসপাতালের সমস্ত রোগী আর কর্মীবৃন্দর কথা মাথায় রেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক নতুন উদ্যোগের ঘোষণা করল আজ।রোগীদের অসুখ অনুযায়ী উপযুক্ত ডায়েট মেনে দেবীপক্ষের কদিন তাঁদের জন্য ‘ট্র্যাডিশনাল পুজোর থালি’র ব্যবস্থা করেছে নারায়ণ মেমোরিয়াল হসপিটাল। এই তালিকায় থাকছে একেবারে বাঙালি সাবেকি খাবারদাবার, যাতে হাসপাতালে থেকেই পুজোর আবহ উপভোগ করতে পারেন রোগীরা। রোগীদের অসুখের বিবরণ ডাক্তারের কাছ থেকে শুনে আলাদা আলাদাভাবে প্রত্যেক রোগীর জন্য খাবারের তালিকা তৈরি করে দিচ্ছেন ডায়েটিশিয়ান। তার মধ্যে যেমন থাকছে নর্মাল ডায়েট, তেমনই থাকছে ডায়াবেটিক ডায়েট, সেমি সফট ডায়েট, লিক্যুইড ডায়েট প্রভৃতি।
শুধু এটুকুই নয়, হাসপাতালে থাকছে একটি পুজো কর্নারও, যেখানে বিশেষভাবে পুজোর আয়োজন করা হবে। আরতি, পুষ্পাঞ্জলি, শান্তির জল সব থাকবে। হাসপাতালের প্রতিটি বেডের রোগীদের আরোগ্য কামনায় নিষ্ঠাভরে পুজো করবেন পুরোহিত মশাই।
পুজোর চারদিন বাঙালি থালিতে বিভিন্নরকম সাবেক খাবার পরিবেশন করা হবে। মেনুতে থাকছে মুগ ডাল, পটলের দোলমা, পনির পসিন্দা, ভেটকি মাছের কালিয়া, চিকেন বাটার মসালা, নবরত্ন কোর্মা, খিচুড়ি, লাবড়া, পাঁপড় ভাজা, চাটনি প্রভৃতি আরও অনেক কিছু। হাসপাতালের পর্যবেক্ষণে শেফেদের একটি দল থাকবে সমস্ত রান্না সঠিক আর স্বাস্থ্যসম্মতভাবে তৈরি হচ্ছে কি না, তা খেয়াল রাখার জন্য। আলাদা আলাদা রোগীর জন্য ডাক্তারের পরামর্শ মতো তাদের কোন খাবার দেওয়া যুক্তিযুক্ত তা মেনেই আলাদা আলাদা ডিশ দেওয়া হবে রোগীদের।
এ বিষয়ে বলতে গিয়ে নারায়ণ মেমোরিয়াল হাসপাতালের সিইও সুপর্ণা সেনগুপ্ত জানালেন, “বাঙালিদের, বিশেষ করে যাঁরা কলকাতায় রয়েছেন তাঁদের জন্য দুর্গাপুজো সেরা উৎসব। মহালয়ার দিন থেকেই সকলে পুজোর আমেজে, উৎসাহে মেতে ওঠেন। যদিও অতিমারির কারণে একটু হলেও পুজোতে ভিন্ন মাত্রা এসেছে। তাই আমরা এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছি এই কঠিন সময়ে রোগীদের মুখে একটু হাসি ফোটানোর জন্য। খাবারের মধ্যে যেমন থাকছে বাঙালি সাবেকি খাবার, তেমনই থাকছে চাইনিজ, কন্টিনেন্টাল খাবারও। রীতিমতো ডায়েট চার্ট মেনে রোগীর পথ্য হিসেবে কম তেল, মশলায় অথচ স্বাদের খেয়াল রেখে তৈরি হবে সমস্ত খাবার”। তিনি আরও জানান, “রোগীদের উৎসবের সময় খুশি রাখতে আমরা গত বছরই এমনটা ভেবেছিলাম, কিন্তু করে উঠতে পারিনি। সেই সময় আরও কঠিন পরিস্থিতি ছিল। এ বছর তুলনামূলক একটু ভালো অবস্থা রয়েছে। তাই আমরা এ বছর এমন উদ্যোগ সার্থক করার পরিকল্পনা নিয়েছি”।
হাসপাতালের চিফ শেফ অনিন্দ্য রায় জানালেন, “এই পুজোর মরশুমে কারোও আনন্দে সামিল হতে পেরে ধন্য মনে করছি নিজেকে। দুর্গাপুজোর চারদিন বাঙালি খাবার প্রত্যেকের কাছেই আলাদা মাত্রা যোগ করে উৎসব উপভোগ করার জন্য। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে রোগীদের ডায়েটের কথা মাথায় রেখে বিভিন্নরকম খাবার তৈরির অনুমতি পেয়েছি আমি। অতিঅবশ্যই ডাক্তারদের পরামর্শে, ডায়েটিশিয়ানের তৈরি করে দেওয়া চার্ট অনুযায়ী স্বাস্থ্যসম্মতভাবে প্রতিটি খাবার তৈরি হবে। হাসপাতালের তরফে এই উদ্যোগ যথেষ্ট প্ৰশংসনীয়”।
ডায়েটিশিয়ান হেমন্ত রাউত জানালেন, “প্রত্যেক রোগীর অসুখের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে সমস্ত নিয়ম মেনে আলাদা আলাদাভাবে খাবার তৈরি হবে। আমার সেরাটুকু দিয়ে প্রত্যেক রোগীকে যাতে সঠিক আর সুস্বাদু খাবার পৌঁছে দিতে পারি এবং উৎসবের আনন্দে সামিল করতে পারি তাই চাইব আমি”।
গ্রেটার কলকাতার এই নারায়ণ মেমোরিয়াল হসপিটাল একটি মাল্টিস্পেশালিটি টেরিটরি কেয়ার হসপিটাল, যেখানে বিশ্বমানের পরিকাঠামো রয়েছে। ২০০ টি বেড, ২৪x৭ এমার্জেন্সি এন্ড ক্রিটিক্যাল কেয়ার সহ ৪৮টি আইসিইউ বেড, ৫টি নেগেটিভ প্রেসার, ল্যামিনার ফ্লো যুক্ত অপারেশন থিয়েটার সহ অত্যাধুনিক পরিকাঠামো সম্বলিত এই হাসপাতাল কলকাতার মানুষকে উচ্চমানের পরিষেবা দিতে বদ্ধপরিকর। এখানে রয়েছে মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার, রেসপিরেটরি মেডিসিন, নিউরোলজি, অর্থোপেডিক্স, গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজি সহ সমস্ত রকম ওপিডির সুযোগ সুবিধা। ৩৬০ ডিগ্রি ডায়াগনস্টিক সার্ভিস এবং ২৪x৭ অপারেশনাল ফার্মাসির সু্যোগসমৃদ্ধ এই হাসপাতাল সেবা ও মানবিকতারও দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চলেছে এই পুজোর মরশুমে।