
দ্য ওয়াল ব্যুরো: তিনি যে ভালো অভিনয় করেন, জানেন সবাই। একটু-আধটু গান করেন, তাও জানেন। মঞ্চে অভিনয়? সবাই না জানলেও, নাট্যপ্রেমীরা অবশ্যই জানেন। কিন্তু তিনি যে নাটক লেখেন, জানেন খুব কম জনই। পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই প্রায় আড়ালে থাকা দিকটি নিয়েই দে’জ পাবলশিং-এর প্রয়াস, এই নতুন ‘নাটকসমগ্র’। নানা স্বাদের এক ডজন স্বল্পদৈর্ঘ্যের, ছোটো নাটক আছে এই সংকলনে। মঞ্চাভিনয় ছাড়া শুধুমাত্র নাটকগুলো পড়ে ফেললেও অন্য এক পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে আবিষ্কার করবেন পাঠকেরা। যিনি গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডে বিচরণ করলেও, আসলে সাধারণ মানুষের খুব কাছাকাছি থেকে জীবনকে দেখেছেন, ছুঁয়েছেন, জীবনে জীবন যোগ করেছেন।জন্ম ১৮ অক্টোবর ১৯৪০। জীবনের ৮১টি বসন্ত পার হয়ে কালের নিয়মে আজ তিনি বৃদ্ধ। কিন্তু প্রাণ-প্রাচুর্যে আর সৃজনশীলতায় আজও তিনি যে কোনও তরুণকে টেক্কা দিতে পারেন। দাপটে এখনও অভিনয় করে যাচ্ছেন পর্দা এবং মঞ্চে। কৈশোরে নাটকে হাতেখড়ি হলেও, নাটকের জগতে তাঁর উত্তরণ বিগত শতাব্দীর মধ্যভাগে আই পি টি এ-তে যোগদানের পর। জীবন দর্শন এবং রাজনৈতিক বিশ্বাসের ভিত্তিভূমি গড়ে ওঠে এইখানেই।
‘স্পার্টাকাস’, ‘হারাণের নাতজামাই’, ‘মুক্তির উপায়’, ‘অশান্ত চিলি ফুলের রং লাল’, ‘মুক্তির অন্তরালে’- সহ অসংখ্য নাটকে অবাধ বিচরণ তাঁর, অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে।
চলচ্চিত্রে এবং বেতার নাটকে যোগ দেন ১৯৭৫-এ। ১৯৯০-এ নিজের নাট্যদল ‘শ্রুতিরঙ্গম’ প্রতিষ্ঠা করেন। এই বয়সেও নিজের লেখা নাটক ‘মিথ্যাবাদী’, ‘সত্য ফিরে এস’ ইত্যাদি নিয়ে মঞ্চে দাপিয়ে বেড়ান। সাফল্যের ঝুলিতে পুরস্কারের সংখ্যাও কম নয়। তিনবার বি এফ জি এ অ্যাওয়ার্ড, প্রমথেশ বড়ুয়া সম্মান, মাইকেল মধুসূদন অ্যাওয়ার্ড, আনন্দলোক সম্মান, উত্তম কুমার অ্যাওয়ার্ড, জি বাংলা অ্যাওয়ার্ড, ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড, রাজ্য সরকারের বর্ষসেরা চলচ্চিত্র সম্মান– তালিকা দীর্ঘায়িত করে লাভ নেই। সম্মানিত এবং পুরস্কৃত হয়েছেন বস্টনে ভারতীয় চলচ্চিত্র উৎসবেও। তবে তাঁর চোখে সেরা সম্মান, অগণিত দর্শকের থেকে পাওয়া হৃদয় উজাড় করা ভালোবাসা, যা তাঁকে এই বয়সেও সচল রেখেছে।
নয় স্বাদের নয়টি শ্রুতি নাটক
ড: অমিতাভ ভট্টাচার্যের একটি নাটকের বইও প্রকাশিত হল এই দিন পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে। অমিতাভ শুধু চিকিৎসকই নন, অভিনেতা, নাট্য নির্দেশক, নাট্যকার, লেখক। তাঁর অজস্র বই আছে বাজারে। এখন দে’জ থেকে প্রকাশিত হল ‘নয় স্বাদের নয়টি শ্রুতি নাটক’। যাঁরা নাটক করতে চান তাঁরা এই বইটিতে উপকৃত হবেন। মজার মোড়কে গভীর কথা রয়েছে প্রতিটি নাটকে। নাটকের নামকরণও মজাদার – লক্ডাউন প্রেম, সমর্পণ, সুইট হোম, ম্যাজিক চশমা, যমালয়ে মৃত মানুষ, কোট, হরর’ শো, কৈলাসে চা পান। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ডা: অমিতাভ ভট্টাচার্যের নির্দেশনায় খুব শীঘ্রই মঞ্চস্থ হতে চলেছে ‘বেলঘরিয়া থিয়েটার আকাদেমির’ কৈলাসে চা পান’।