
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কলকাতার পুজো মানেই হইহুল্লোড়, মাতামাতি, আলো, ভিড় আর অনেক অনেক আনন্দ। কিন্তু প্রতিবছর এই থিকথিকে ভিড়ের মধ্যে প্যাণ্ডেলে প্যাণ্ডেলে ঘুরে ঠাকুর দেখা হয়তো অনেকেরই ভাল লাগে না। কিছু না হলেও একঘেয়েমি তো থাকেই। অগত্যা বাড়িতে বসে টিভির পর্দাতেই দুর্গা দর্শন সারেন অনেকে। পুজোর পাঁচ দিন ছুটি ঘরে বসেই কেটে যায়।
কিন্তু সেই রুটিনটা এবার পুজোয় একটু বদলে ফেললে কেমন হয়? এই ধরুন, সপ্তমী কিংবা অষ্টমীর সকালটা যদি কাটে জলের মধ্যে? ডলফিনদের (dolphins) সঙ্গে?
হ্যাঁ, শুনতে অদ্ভুত হলেও এমনটা কিন্তু হতেই পারে। খুব একটা কসরত করার দরকার পড়বে না পুজোয় ডলফিন দেখতে। নতুন অভিজ্ঞতার রোমাঞ্চ তো আছেই, সেই সঙ্গে পুজোর আনন্দে যোগ করাই যায় ভিন্ন স্বাদ। কীভাবে? চলুন জেনে নিই।বেশি দূর নয়, একদল নীলচে ডলফিনের দেখা মিলতে পারে এ রাজ্যেই। হাতের কাছে কম খরচে ডলফিন দেখতে হলে চলে যেতে হবে হলদিয়ায়। সেখানে নয়াচর দ্বীপকে ঘিরে ডলফিনদের অনেকদিনের আস্তানা। গঙ্গার এই সমস্ত ডলফিন মানুষের সঙ্গ বড় ভালবাসে। বারবার তাই মানুষের বসতি যেখানে বেশি সেখানেই উঁকি ঝুঁকি মারতে দেখা যায় তাদের। নয়াচরে এই ডলফিনদের ঘিরেই গড়ে উঠেছে সুন্দর এক পর্যটন কেন্দ্র। শহুরে ব্যস্ততা এড়িয়ে মাঝেমধ্যেই তাই ভ্রমণপ্রিয় মানুষ পাড়ি জমান এই দ্বীপে।
স্থানীয়রা জানান, একসময় এই নয়াচর আর তার আশেপাশের জলে হাজার হাজার ডলফিন ঘুরে বেড়াত। তবে এখন তার সংখ্যা অনেক কমে গেছে। এখন নয়াচরে ডলফিনের সংখ্যা মেরেকেটে শ’খানেক কি তার কিছু বেশি হবে। তবে পুজোর সকালে আমোদ জোগাতে তারাও কিছু কম যায় না।
যে কোনও দিন ভোরবেলা বেরিয়ে পড়ুন নয়াচরের উদ্দেশে। হলদিয়া থেকে ফেরিঘাটে গিয়ে জলপথেই নয়াচর পৌঁছনোর রাস্তা সবচেয়ে সহজ। লঞ্চে মিনিট ১৫ লাগবে কুকরাহাটি যেতে। সেখান থেকে ভ্যানে করে যেতে হবে পাতিখালি। সেখান থেকে আরও একবার লঞ্চ আপনাকে পৌঁছে দেবে নয়াচর, ডলফিনদের ঠিকানায়।হলদি নদীর জলে নৌকায় চেপে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতেই দেখা দেবে তারা। জল থেকে টুপ করে মাথা তুলে চারপাশ দেখে নিয়েই আবার ঝুপ করে জলে ডুব দেয় ডলফিনরা। সে এক মজার দৃশ্য। পর্যটকদের সুবিধার জন্য সবরকম ব্যবস্থাও করে দেওয়া আছে নয়াচরে। খাওয়ার হোটেলের অভাব নেই। তবে দিনের দিন ফিরে আসতে পারলেই ভাল।
একেবারে ঝটিকা সফর, ডলফিনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ সেরে, গোপন কথাবার্তা সেরে ঘরে ফিরে আসা আবার। যতক্ষণ খুশি নয়াচরের জলে ডলফিনদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন আপনি। মানুষ দেখলে তারা খুশিই হয়। জলে নৌকা দাঁড় করিয়ে রেখে তাদের মাথা তোলার জন্য করতে হবে অপেক্ষা। তবে তা বেশিক্ষণ নয়।
নয়াচরের ডলফিনরা চোরাশিকারিদের কবলে পড়ে এখন সংখ্যায় অনেক কমে এসেছে। অথচ ওড়িশার চিল্কা হ্রদের পর এই নয়াচরেই ডলফিনের ঠিকানা ছিল সবচেয়ে আকর্ষণীয়। প্রশাসন যদি আরও সতর্ক হয়, ডলফিন সংরক্ষণের উদ্যোগ যদি নেওয়া হয়, তবে নয়াচরের আরও উন্নতি হতে বাধ্য। আর পুজোর সকালে ডলফিনের সঙ্গে কয়েক ঘণ্টা কাটিয়ে আসতে পারলে আপনার একঘেয়েমি কেটে যাবে, এটুকু নিশ্চিত।