
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সূক্ষ্ম ফ্যাব্রিক। সিল্ক ও সুতির বুননে জমে যাবে সামার স্টাইল। মধ্যপ্রদেশের ঐতিহ্য মাহেশ্বরী শাড়ি (Maheshwari Saree) সমান জনপ্রিয় বাঙালির অন্দরমহলেও। শাড়ির প্রতিটি বুননে রয়েছে ঐতিহ্যের ছোঁয়া। তাঁতিতের হাতে বোনা নকশায় প্রাচীন দুর্গের ইতিহাস। ফ্যাশন ও আভিজাত্যের মিশেলে এই শাড়ি সত্যিই অতুলনীয়। বঙ্গ নারীর অঙ্গেও জৌলুষ ছড়াচ্ছে মধ্যপ্রদেশের মাহেশ্বরী।
মাহেশ্বরীর সূক্ষ্ম ফ্যাব্রিকে সুপ্রাচীন ইতিহাসের স্মৃতি ভিড় করে
মন্দিরে ঘেরা শহর মহেশ্বর। মধ্যপ্রদেশে মানুষের বসবাস শুরু হয়েছিল নর্মদা, চম্বল ও বেতোয়া এই নদীগুলির অববাহিকায়। মালওয়া সংস্কৃতির তাম্র যুগের অনেক নিদর্শন এরান, কায়াঠা, মহেশ্বর, নগদা ও নাভডাটোলি সমেত অন্যান্য জায়গাতে পাওয়া গেছে। এই মহেশ্বর ঐতিহ্যবাহী শহর। এখানকার তাঁতিদের হাতের বুননেই তৈরি হয় মাহেশ্বরী (Maheshwari Saree)। মার্সারাইজড কটন এবং চান্দেরি সুতা থেকে বোনা একটি ঐতিহ্যবাহী শাড়ি হল মাহেশ্বরী। কাপড়ের বুননে অত্যন্ত সূক্ষ্ম টেক্সচার এবং সূক্ষ্ম বয়ন শৈলী রয়েছে।

মনে করা হয় মধ্যপ্রদেশে হোলকার রাজবংশের আমলে এই শাড়ির চল শুরু হয়। এই রাজবংশের রানি অহল্যাবাই প্রথম মাহেশ্বরী শাড়ির নকশা করেছিলেন। ১৯৭০ সালে রানি নিজের নকশা করা শাড়ি তৈরির জন্যে মান্ডু ও সুরাট থেকে প্রতিভাবান কারিগরদের নিজের রাজ্যে নিয়ে আসেন। তাঁরা মুলত তৈরি করতেন পাগড়ির জন্যে বিশেষ ধরনের ফ্যাব্রিক। মালওয়া সাম্রাজের মেয়েদের জন্য নয় গজের অতি সূক্ষ্ম ফ্যাব্রিকের নভরি শাড়িও তৈরি করতেন তাঁরা। রানি অহল্যাবাইয়ের নকশা করা সূক্ষ্ম ফ্যাব্রিকের মাহেশ্বরী শাড়ি তৈরি শুরু করেন এই কারিগরেরা। এঁদেরই বলা হল মাহেশ্বরী তাঁতি। তাঁদের হাতের কাজের কদরই ছিল আলাদা।

মহেশ্বর একসময় তাঁতশিল্পের জন্যই বিখ্যাত ছিল। তবে ১৭৬৭ থেকে ১৭৯৫ সাল পর্যন্ত হোলকা রাজবংশের আমলে মাহেশ্বরী শাড়ি আলাদা জায়গা করে নেয় মহেশ্বরে। সেই সময় থেকেই এই শাড়ির জনপ্রিয়তা ফুলেফেঁপে ওঠে।

মাহেশ্বরীর (Maheshwari Saree) পুনরুজ্জীবন, হালফিলের ফ্যাশনেও সুপারহিট
নতুন ধরনের এবং নিম্ন মানের কমদামি ফ্রাবিকের কারখানা গড়ে ওঠার ফলে আস্তে আস্তে মাহেশ্বরী শাড়ির মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হতে থাকে। ১৯৭৯ সালে মহারাজা ইয়াস্বান্ত রাওয়ের ছেলে রিচার্ড হোলকার ও তাঁর পুত্রবধূ শেলি হোলকার নিজেদের উদ্যোগে রেওয়া সোসাইটি তৈরি করে মাহেশ্বরী শাড়ির পুনরুজ্জীবন করেন। এই সোসাইটিতে মহিলারাই তাঁদের হাতের দক্ষতায় সেই প্রাচীন সময়ের মতোই মাহেশ্বরী শাড়ির নকশা তৈরি করেন। এই সোসাইটিতে এখন ২৫০ তাঁতি এবং ১৫০০ তাঁত রয়েছে।

মাহেশ্বরী শাড়ি ছিল প্রধানত সূক্ষ সুতির সুতোর বুনন এবং তার মধ্যে নিপুণভাবে ফুটিয়ে তলা হতো মহেশ্বরের নানা দুর্গ বা বিভিন্ন মন্দিরের নকশা। কিন্তু এখন মূলত মাহেশ্বরী শাড়ির জন্যে কোয়েম্বাটুর সুতির সুতো এবং বেঙ্গালুরু সিল্ক সুতো ব্যবহার করে নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়।

নকশায় থাকে রুই ফুল ( শিমুল ফুল), চামেলি ( জুঁই), হাঁস(রাজহাঁস), হীরা( হিরে), নকশা। বলাই বাহুল্য, এই শাড়ির বিশেষত্ব হল, শাড়ির দু’দিকেই রয়েছে জরি পাড়। এই জরি আসে সুরাট থেকে। আর আঁচলে থাকে স্ট্রাইপ বা ডোরা। মাহেশ্বরী শাড়ি নানা রঙে খোলতাই হয়, সাধারণত আঙ্গুরি ( আঙ্গুরের মতো সবুজ), ডালিম্বি (গাঢ় গোলাপি), গুলবাক্সি ( গাঢ় ম্যাজেন্টা ), জামলা (বেগুনি) , তাপ ক্ষীর (গাঢ় খয়েরি ), এবং আমরস (সোনালি হলুদ) রঙের হয় এই শাড়ি।
নকশার উপর নির্ভর করে একটি শাড়ি তৈরি করতে ৩ থেকে ১০ দিন সময় লাগে। সব থেকে বেশি সময় (৩ থেকে ৫ দিন) লাগে আঁচল এর অত্যন্ত সূক্ষ নকশা তৈরি করতে।