
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পুজোর ঠিক আগেই কলকাতা রাজবাড়ি রেস্তোরাঁ(৫৬ যতীন দাস রোড,লেক টেরাস, কালীঘাট, কল২৯) নব রূপে হাজির হল (Kolkata Rajbari)। এখানে মিলবে বাঙালির খাঁটি ঘরোয়া খাবার। প্রত্যেক অতিথিকে এখানে মঙ্গল দ্বীপ জ্বালিয়ে বরণ করার প্রথা রয়েছে যা এই রেস্তোরাঁর অভিনবত্ব। রেস্তোরাঁর কর্ণধার সুমিতা ঘোষের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় চৈতালি দত্ত।

রান্নার প্রতি প্যাশনের থেকেই কি রেস্তোরাঁ খোলা ?
একদমই তাই। রান্নার প্রতি আমি ভীষণ প্যাশনেট। অন্যান্য দেশের কুইজিনের প্রতি আকর্ষণ থাকলেও আমি বাঙালি রান্না নিয়ে ভীষণ এক্সপেরিমেন্ট করতাম। এখনও করি। পাশাপাশি সুদীর্ঘ বছর ধরে গৃহ শিক্ষকতা করতাম। মূলত সায়েন্স গ্রুপ পড়াতাম। কিন্তু লকডাউনে যখন অনলাইন চালু হল তখন কোথাও গিয়ে পড়ানোর প্রতি আমার আকর্ষণ কমতে শুরু করে। তখন ভাবলাম ঘরে বসে না থেকে যদি অন্য কিছু করা যায়। প্রথমে স্থির করলাম
হোম ডেলিভারি চালু করব। পরে এই জায়গাটা পছন্দ হলে এখানে রেস্তোরাঁ (Kolkata Rajbari) খুলি।

কলকাতা রাজবাড়ি রেস্তোরাঁর নামের সঙ্গে একটা রাজকীয় ব্যাপার আছে-
আসলে এই বাড়ির যে পরিকাঠামো তার মধ্যে প্রাচীন বনেদিয়ানার ব্যাপার রয়েছে। সেই কারণেই কলকাতা রাজবাড়ি রেস্তোরাঁ নাম রাখা হয়েছে। ১৫০০ স্কোয়ার ফুটের তিনটি ফ্লোর জুড়ে আমার এই রেস্তোরাঁ। থিম অনুযায়ী তিনটি ফ্লোরের তিন রকমের নামও রয়েছে।

কীরকম?
তিন তলায় আধুনিক আর সাবেকিয়ানার মিশ্রণ রয়েছে। নাম ‘অন্দরমহল’। দোতলাতে মেঝেতে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। মেঝেয় গদি পাতা সামনে লোয়ার হাইটে রয়েছে জলচৌকি। নাম’ বৈঠকখানা’। আর একতলায় রয়েছে ক্যাফে। আধুনিক সময়ের সঙ্গে অল্প বিস্তর পুরনোর ছোঁয়া রয়েছে যাতে কলকাতার ঐতিহ্য বহন করে। তাই এর নাম ‘তিলোত্তমা’। সময়ের বিবর্তনকে এখানে নামে এবং সাজসজ্জার ক্ষেত্রে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

ঠিক কী ধরনের খাবার এখানে পাওয়া যায় ?
৬ টি আসন বেষ্টিত একতলার ‘তিলোত্তমা’-কে ঠিক ক্যাফেরিয়া বলতে চাই না (Kolkata Rajbari)। ওই ধাঁচে আমি তৈরি করেছি। একটু আধুনিকতা ছোঁয়া রয়েছে। আধুনিক স্টাইলের কাঠের কারুকাজও রয়েছে। বেশি তেল মশলা নয়, ঘরোয়া বাঙালি খাবার এখানে মিলবে। ক্যাফেতে পাওয়া যাবে ঘরোয়া স্টাইলে কফি ,চা ,এলাচ দেওয়া চা ,আদা চা ইত্যাদি । রকমারি ভেজ,ননভেজ স্ন্যাক্সের আয়োজন রয়েছে। ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিকেন নাগেটস, চিজ বল, পনির বল, ফিশ ফ্রাই ,চিলি চিকেন ছাড়াও আরও অনেক কিছু মিলবে। কমপক্ষে খরচ ৪০০ টাকা +কর (২জন)। বিকেল ৫টা থেকে চা, কফি পাওয়া যাবে।

এছাড়াও খাবারের মধ্যে আর কী কী পাওয়া যাবে?
ভেটকি পাতুরি ,ভেটকি ভাপা, ডাব চিংড়ি ,ইলিশ ভাপা, ইলিশ পাতুরি, বেগুন দিয়ে ইলিশের ঝোল, পোলাও,লুচি,কষা মাংস, গন্ধরাজ চিকেন ,মাছের মাথা দিয়ে ডাল, স্পেশাল ছানার ডালনা, বেগুনি ,পোস্ত বড়া, ডিমের ডেভিল, ধোকার ডালনা, ফুলকফির রোস্ট, নবরতন কোরমা ,বাদশাহী পোলাও, বাসন্তী পোলাও , চিতল মাছের মুইঠ্যা, শুক্তো, ইত্যাদি পাওয়া যাবে। এখানে কাঁকড়া পাওয়া যায় না। আমার উদ্দেশ্য হল বাঙালির অরিজিনাল যে রান্নার স্বাদ সেটাকেই যথার্থভাবে উপস্থাপন করা।


‘বৈঠকখানা’ তে একই ধরনের খাবার পাওয়া যায়?
বিকেলে আড্ডার জন্য বৈঠকখানা আদর্শ। বন্ধুবান্ধব,আত্মীয়-স্বজন নিয়ে দলবেঁধে গল্প করার জন্য এই জায়গাটা তৈরি করা হয়েছে। বৈঠকখানাতে চা, কফি থেকে শুরু করে সব ধরনের খাবার মিলবে। সন্ধ্যে ৭-৭.৩০ টার পর থেকে আমাদের ডিনার চালু হয়। এই বৈঠকখানাতে অতিথিরা অনেক সময় গান-বাজনাও করেন। সঙ্গে চা- কফি, স্ন্যাক্স সহযোগে আড্ডাও দেন। মোট ১৬ জনের এখানে বসার জায়গা রয়েছে। এখানে ফ্যামিলি গেট টুগেদারও হয়। মাটিতে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। কাঠের লোয়ার ছোট জলচৌকির সঙ্গে মেঝেতে গদি পাতা রয়েছে। মাটির বাসনপত্রে খাবার পরিবেশন করা হয় (Kolkata Rajbari)। তবে পরিকল্পনা রয়েছে আগামি দিনে মাটির পরিবর্তে কাঁসার বাসনপত্রে অতিথিদের খাবার পরিবেশন করব।

২৪ টি আসন বেষ্টিত ‘অন্দরমহল’ এ আলাদা মেনুর ব্যবস্থা নেই। সব ফ্লোরে সব ধরনের খাবার পাওয়া যায়। অতিথিরা ইচ্ছে করে আ লা কা র ট-এ খাবার নিতে পারেন। আবার খাবার থালিতেও নিতে পারেন।
কলকাতায় অনেক ঐতিহ্যবাহী রেস্তোরাঁ রয়েছে, সেক্ষত্রে কলকাতা রাজবাড়ি রেস্তোরাঁ কতটা স্বতন্ত্র?
আমার ধারণা যে স্বাদের ক্ষেত্রে অনেকটাই তারতম্য রয়েছে। যে জিনিসের যেমন স্বাদ সেটাকেই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমি প্রতিদিন নিজে রান্না করি। সঙ্গে আমার সহকারীরা থাকেন । আবার কোনও দিন সকালের রান্না আমার হাত ধরে শুরু হলেও বাকি সারা দিনের রান্নাটা সহকারীরা করেন। মেনু ম্যানেজমেন্ট আমি করি। এছাড়াও এখানে প্রতিদিন প্রত্যেক অতিথিকে মঙ্গলদীপ জ্বালিয়ে বরণ করে তবেই রেস্তোরাঁয় প্রবেশ করানো হয়। এটা আমাদের প্রথা। আমরা মনে করি আমরা নারায়ণ সেবা করছি। আর অতিথি তো নারায়ণ স্বরূপ। অন্য রেস্তোরাঁর থেকে কোথাও গিয়ে এখানেই আমাদের স্বতন্ত্রতা।

এখানে খাবারের খরচ কী রকম?
মহারাজা থালির ক্ষেত্রে খরচ পড়বে কমপক্ষে ৯৯৯ টাকা+কর (২জন)। সঙ্গে ভাতের দাম পড়বে ১২০ টাকা। এটি ননভেজ থালি। এখানে চিংড়ি, ভেটকি, মটন সঙ্গে নিরামিষ পদ এবং ডেজার্ট থাকবে। এই থালিতে ১৭ রকমের পদ থাকে।
এছাড়াও রয়েছে ৪৫০ টাকা+ কর ননভেজ থালি ।পোলাও, মটন ইত্যাদি থাকে থালিতে(১ জন)। এই থালিতে ৬ রকমের পদ মিলবে। এখানে আনলিমিটেড থালি সার্ভ করা হয়। যে কোনও পদ যতবার খুশি নেওয়া যেতে পারে। ২১ রকমের পদ রয়েছে। খরচ ১০৯৯ টাকা+কর (১জন)। সঙ্গে ডেজার্ট থাকবে যা আমাদের নিজস্ব আইটেম। যেমন ভাপা সন্দেশ, রসমালাই ,পায়েস ইত্যাদি।
কটা পর্যন্ত রেস্তোরাঁ খোলা থাকে?
দুপুর ১২ টা থেকে রাত্রি ১০. ৩০ টা পর্যন্ত।
রেস্তোরাঁ নিয়ে নতুন কিছু পরিকল্পনা রয়েছে কি?
ইচ্ছে আছে টেক অ্যাওয়ে চালু করার। এখনও পর্যন্ত আমরা ডেলিভারি সেকশন চালু করিনি। আমাদের রেস্তোরাঁ নতুন এবং আউটলেটে ভীষণ ভিড় থাকে তাই এখনও পর্যন্ত জোম্যাটো, সুইগির সঙ্গে আমরা যুক্ত হতে পারিনি। খুব শিগগিরই হব। রেস্তোরাঁর থেকে পার্সোনাল হোম ডেলিভারি সার্ভিস আমাদের চালু আছে। ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ৩ হাজার টাকা এবং ৫০০ টাকার ওপরে বিল হলে ৫ কিলোমিটারের মধ্যে খাবার সরবরাহ করা হয়। তবে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে আরও আউটলেট খোলার।