
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পুজোর কলকাতা দেখতে দেখতে ক্লান্ত? সপ্তমী, অষ্টমী, নবমীর রাতের ঝলমলে শহর, থিকথিকে ভিড় দেখতে আর উৎসাহ জাগে না? পুজোর কটা দিন এসব মতামাতি থেকে রেহাই চান? এর জন্য আদর্শ জায়গা হল কেওনঝড় (keonjhar)। বেশি দূরে নয়, বাংলার সীমানা পার করে দু’পা গেলেই ওড়িশার বুকে ছোট পাহাড়ে ঘেরা কেওনঝড়। পুজোর ভিড়ভাট্টা এড়িয়ে দিন পাঁচেকের মুক্তি খুঁজে আসতেই পারেন সেই মালভূমির মাঝে।
কীভাবে যাবেন কেওনঝড়? ট্যুরের পরিকল্পনা কিন্তু বেশ ভেবেচিন্তে করতে হবে। আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে জায়গা সম্পর্কে জেনে নিয়ে তবেই পাড়ি জমাতে হবে কেওনঝড়ে। কারণ ওড়িশার এই গ্রামের সাধারণ মানুষ তথাকথিত আধুনিকতা থেকে দূরে। তাই স্থানীয়দের কাছ থেকে খুব একটা সাহায্য আশা না করাই ভাল।কেওনঝড় যেতে গেলে হাওড়া থেকে পুরীগামী যে কোনও ট্রেনে চাপলেই হবে। খুর্দা রোড স্টেশনে নামতে হবে। সেখান থেকে উঠতে হবে কেওনঝড়ের ট্রেনে। তবে বেলাবেলি পৌঁছে যাওয়াই ভাল। থাকার জায়গা নিয়ে ভাবনা নেই। অনেক হোটেল সহজেই মিলবে। তবে কেওনঝড়ে ওটিডিসির পান্থনিবাসে থাকতে পারলে সবচেয়ে ভাল। তবে সেখানে দাম খানিক বেশি।
পৌঁছনোর পরে দুপুরে বিশ্রাম নিয়ে সময় থাকতে থাকতেই বেরিয়ে পড়তে পারলে ভাল। প্রথমেই দেখে আসতে হবে কেওনঝড়ের বিখ্যাত মা তারিণী মন্দির। রাজদিঘির জলের মাঝে অপূর্ব সেই মন্দির আর তার চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হননি এমন লোক খুঁজে মেলা ভার।কথিত আছে, মা তারিণীর মন্দির খুব জাগ্রত। কেওনঝড়ের রাজ পরিবার এই মন্দিরে নিয়মিত পুজো দিত। এ মন্দিরের ব্যাকগ্রাউন্ডে পাহাড়ের ঘেরাটোপ অদ্ভুত এক মায়াময় পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। মন্দিরের পাশেই রয়েছে রাজপ্রাসাদ, তবে তা দেখতে হবে বাইরে থেকেই। তারিণী মন্দির দেখেই যেতে হবে বড় ঘাঘরা আর সান ঘাঘরা। পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা ঝরনা সেখানে মোহময়ী। প্রথম দিনেই এই দুই জায়গা দেখে নিতে পারলে কাজ এগিয়ে থাকবে অনেকটা।
পরদিন সকাল সকাল বেরিয়ে পড়তে হবে ঘাটগাঁওয়ের পথে। ঘাঁটগাও যাওয়ার পথেই পড়বে কানঝরি জলাধার এবং সীতাবিঞ্জি। ঘাটগাঁওতেও রয়েছে তারিণী মন্দির। সীতাবিঞ্জির প্রাচীন লিপি আর ফ্রেসকো পেন্টিং না দেখলে কেওনঝাড় ট্যুর সার্থক হয় না। ঘাটগাঁও থেকে সোজা চলে যেতে হবে গুঁড়িচাঘাঘি জলপ্রপাতে। সেখান থেকে হোটেল ফিরে আসুন। একদিনে এর চেয়ে বেশি আর দরকার নেই।তৃতীয় দিনে চলে যান মুর্গামহাদেব, খিচিং, হাঁড়িভাঙা দেখতে। ভীমকুণ্ড আর খণ্ডধারা জলপ্রপাতও এদিনই একসঙ্গে কভার করা যায়। কেওনঝড়ে জলপ্রপাত অনেক আছে। কিন্তু তার প্রতিটির আলাদা সৌন্দর্য, সামনে থেকে না দেখলে তা বোঝা যাবে না। দেখতে দেখতে খাওয়াদাওয়ার অভাব হবে না। পথেই রয়েছে অজস্র ধাবা, খাওয়ার হোটেল, দোকানপাট।
কেওনঝড়ে জঙ্গল ভ্রমণ চাইই চাই। আর তার জন্য এর পরের দিন চলে যেতে হবে কিরিবুরুতে। এখানে যাওয়ার পথেই পড়বে নদীর উৎসমুখ। স্থানীয় বৈতরণী নদী কাছেই এক পাহাড়ের মুখ থেকে শুরু হয়েছে। সে এক দেখার মতো দৃশ্য। আর সেই পথেই গোনাসিকায় জঙ্গল সাফারি করে ফেলতে পারলে ট্যুর পুরো জমে ক্ষীর।
তবে এইসবের চক্করে কিরিবুরু পাহাড়ে অসাধারণ সূর্যাস্ত মিস করা যাবে না একেবারেই। শুধুমাত্র এই দৃশ্য দেখতেই বারবার কেওনঝড়ে ফিরে ফিরে যান অনেকে। কিরিবুরু হিল টপ গেস্ট হাউসে পৌঁছে (স্পটেই বুকিং করা যাবে) সানসেট পয়েন্ট থেকে দেখতে হবে সূর্যাস্ত। সাতশো পাহাড়ের মাঝে আচমকা টুপ করে ডুব দেয় সুয্যিমামা, সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে, রেখে যায় কেবল রাঙা আভার রেশ।
এরপর দিন আবার সুযোগ থাকছে জঙ্গল সাফারির। সারাণ্ডার জঙ্গলের মাঝে গাড়ি নিয়ে ঘুরে দেখার আলাদা রোমাঞ্চ। এখানে রেনবো ফলস বা রামধনু জলপ্রপাতও দেখার মতো।