শেষ আপডেট: 2nd July 2022 12:52
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, মহাকাশচারী, গবেষক- কোনটাকে পেশা হিসাবে বেছে নিতে চায় নতুন প্রজন্ম? এই প্রশ্নের উত্তরে মিলছে এমন জবাব, যাতে চোখ কপালে উঠছে অনেকেরই। সাধারণ দশটা-পাঁচটার চাকরি নয়, বরং তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশই নাকি চায় ইউটিউবার (Youtuber) কিংবা ইনফ্লুয়েন্সার (Influencer) হতে!
ইন্টারনেটের রমরমার যুগে নতুন পেশা হিসাবে উঠে আসছে কন্টেন্ট ক্রিয়েশন। ইউটিউটব এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন ধরণের ভিডিও বানিয়ে অনুরাগীদের মন জেতেন যাঁরা, এক কথায় তাঁরাই হলেন ইনফ্লুয়েন্সার। যেমন হালের বং গাই কিংবা রোদ্দুর রায় (Roddur Roy)। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে তাঁদের অনুরাগীর সংখ্যা বিপুল। এই বিপুল সংখ্যক ভক্তদের দৌলতে বেশ কিছু ইনফ্লুয়েন্সারদের রোজগারের অঙ্কও চোখ ধাঁধানো।
কিন্তু সত্যিই কি তাই? নাকি বিকল্প পেশা হিসাবে ইনফ্লুয়েন্সার হওয়ার পিছনে রয়েছে অন্য কোনও অন্ধকার দিক? বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে উঠে আসছে সেই তথ্যই। জানা গেছে, লিঙ্গ, বর্ণ কিংবা শারীরিক অক্ষমতার দোহাই দিয়ে অনেক সময়ই পারিশ্রমিকের ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হন ইনফ্লুয়েন্সাররা। বিভিন্ন কর্পোরেট ব্র্যান্ডগুলি অনেক সময় উঠতি ইনফ্লুয়েন্সারদের দিয়ে বিনা পারিশ্রমিকেও কাজ করিয়ে নেয়।
ফ্যাশন কিংবা বিউটি ব্লগারদের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা আখছার দেখা যায়, এমনটাই জানাচ্ছেন এজিএম ট্যালেন্টের (AGM Talent) সিনিয়র ট্যালেন্ট এবং পার্টনারশিপ প্রধান আদেসুয়া আজায়ি । 'ইনফ্লুয়েন্সার পে গ্যাপ' নামে একটি ইনস্টাগ্রাম একাউন্ট খোলেন তিনি, যেখানে নাম না প্রকাশের শর্তে বিভিন্ন ইনফ্লুয়েন্সাররা নামিদামি ব্র্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করার বিভিন্ন তিক্ত অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতেন। সেখানে জানা যায়, শুধু জাতি বা বর্ণগত বৈষম্য নয়, শারীরিক প্রতিবন্ধী কিংবা এলজিবিটিকিউ (LGBTQ ) ইনফ্লুয়েন্সাররাও পারিশ্রমিকের ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।
সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, এই ধরণের কাজে পারিশ্রমিক দেওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত অস্বচ্ছতা থাকে। আর পাঁচটা সাধারণ চাকরির মতো ইনফ্লুয়েন্সারদের কোনও নিয়মিত বেতনের ব্যবস্থা নেই। নেই ছুটির দিন কিংবা অসুস্থতাকালীন ছুটিও। অনেক সময়ই অসুস্থ অবস্থাতেও কাজ করতে বাধ্য করা হয় ভ্লগারদের। বহু ক্ষেত্রে কাজের মান অনুযায়ী ইনফ্লুয়েন্সারদের নিজেদেরই তাঁদের কাজের পারিশ্রমিক নির্ধারণ করতে বলা হয়, যার জেরে ইন্ডাস্ট্রিতে নতুনরা অনেক সময়ই বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করতে বাধ্য হন।
যেহেতু দৃশ্য-শ্রাব্য মাধ্যমই (Audio Visual Medium)তাঁদের উপার্জনের একমাত্র পথ, তাই এই মাধ্যমে 'ভিজিবিলিটি' (visibility ) ইনফ্লুয়েন্সারদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলির অ্যালগোরিদম (Algorithm) এমন এভাবে কাজ করে, যাতে কন্টেন্টের সংখ্যা কমলেই পাল্লা দিয়ে কমে ভিজিবিলিটি, যার ফল রোজগারে টান পড়া। ক্লান্তি লুকিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিরন্তরভাবে 'কন্টেন্ট'-এর যোগান দিয়ে যান তাঁরা। আর তাই ইন্টারনেটে ভিজিবল এবং প্রাসঙ্গিক থাকা নিয়ে বেশিরভাগ সময়েই আতঙ্কে কাটান তাঁরা। বেশিরভাগ সময়েই কাজ এবং ব্যাক্তিগত জীবনের ভারসাম্য হারিয়ে যায়। কারণ, দিন রাতের হিসাবের বাইরে যে কোনো সময় অনুরাগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে অনলাইনে আসতে হয় তাঁদের। আবার ব্যক্তিগত এবং দৈনন্দিন জীবনের খুঁটিনাটিকেই ব্যবহার করে কন্টেন্ট তৈরী করেন অনেক ইনফ্লুয়েন্সার। এর অনিবার্য ফলাফল হিসাবে আসে অবসাদ এবং অন্যান্য মানসিক অসুস্থতা।
এছাড়া অনলাইন ট্রোলিং এবং দুর্ব্যবহারের শিকার হতে হয় বেশিরভাগ ইনফ্লুয়েন্সারকেই। যার জেরে বাড়ছে স্ট্রেস, উদ্বেগ এবং ইটিং ডিসঅর্ডারের মতো সমস্যা।
ইনফ্লুয়েন্সারদের আকর্ষণীয় জীবনযাত্রার আড়ালে থাকা পথ যে সত্যিই ততটা মসৃণ নয়, যতটা আপাতদৃষ্টিতে দেখে মনে হয়, তা জেনেও নব্য প্রজন্মের মোহভঙ্গ হবে কি, সেটাই এখন প্রশ্ন।
‘জঙ্গি নই, আমি শিল্পী’, চিৎকার করে উঠলেন রোদ্দুর রায়! ‘কেউ শিল্প বোঝে না’, আক্ষেপ তাঁর