Advertisement
গরমে টি-শার্টের সাজে পাল্লা দিচ্ছে নানা বাহারি বাংলা ক্যাপশন।
Advertisement
শেষ আপডেট: 19 June 2024 20:37
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সকাল সাড়ে ন'টা অবধি ঠিক আছে। টেনেটুনে দশটাও করা যায়। কিন্তু তার বেশি হলেই যেন ক্রমশ অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে বাইরে বেরনো। জুন মাস শেষ হতে চলল। এখনও বর্ষার দেখা নেই কলকাতায়। উত্তরবঙ্গ ভেসে যাচ্ছে। কিন্তু দক্ষিণে এখনও চাতক পাখির মতো লোকজন চেয়ে আছে আকাশের দিকে। গনগনে রোদে যদিও বা মেঘের খেলা চলছে, উপরি একেবারে শেষ করে দিয়ে যাচ্ছে আর্দ্রতা। পাঁচ মিনিট বাইরে রোদে থাকলেও শরীর বেয়ে ঘামের ঝর্ণা নামছে।
এই অবস্থায় যদি অফিসের নির্দেশ থাকে, একেবারে গলাবন্ধ ফর্মাল পরে যেতে হবে, তাহলেই সাড়ে সর্বনাশ। সরকারি দফতরে যারা চাকরি করেন, তাঁদের এই হ্যাঙ্গামটা পোহাতেই হয়। কিন্তু বেসরকারি সংস্থায় যারা চাকরি করেন বা যাদের ব্যবসা রয়েছে, তাঁদের জন্য এই গরমে আদর্শ পোশাক হয়ে উঠেছে টি-শার্ট। হরেক কিসিমের টি শার্টে কার্যত ভরে উঠেছে গড়িয়াহাটের ফুটপাত থেকে নামী শপিংমলের বিপণি।
টি শার্টের সবচেয়ে বড় সুবিধে, একেবারে পাতলা, হালকা হয়। সুতির বা গেঞ্জি কাপড়ের তৈরি টি শার্ট গরমেও দীর্ঘ সময় অক্লেশে পরে থাকা যায়। বাজারে অবশ্য সুতির সঙ্গে মিক্সড মেটিরিয়ালের টি-শার্টও বেশ চলছে। দেখতে একটু বেশি চটকদার হয়। কিন্তু টেরিলিন, পলিয়েস্টার বা রেয়নের মিশেলে থাকা টি-শার্ট গরমে একটু সমস্যা তৈরি করে। বিশুদ্ধ সুতির জামা বা পিওর কটনের জামা গরমের জন্য সবচেয়ে আরামদায়ক।
কেন সবসময় বিশুদ্ধ সুতির জামা এতটা পছন্দ করেন সবাই? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুতির সবচেয়ে বড় সুবিধে, তা ঘাম শুষে নেয়। পাশাপাশি, সুতির জামায় সরু সুতোর ফাঁক দিয়ে সহজে হাওয়া চলাচল করতে পারে। যত বেশি হাওয়া চলাচল করবে, তত বাষ্পীভবন বেশি হবে, অর্থাৎ ঘামে ভিজে গেলেও চট করে শুকিয়ে যেতে পারে। সেদিক দিয়ে দেখলে সুতি ও লিনেন সবচেয়ে এগিয়ে আছে। তার পরে থাকবে নানা কৃত্রিম উপাদান, যেমন পলিয়েস্টার, লিনেন-কটনের মিশেল বা টেরিলিন।
টি শার্টের ক্ষেত্রে অবশ্য লিনেনের চল কম। এখানে সুতির সঙ্গে প্রতিযোগিতা বিভিন্ন কৃত্রিম ফাইবারের। যার মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে থাকবে পলিয়েস্টার। রসায়নের ভাষায় এর নাম পলিইথিলিন টেরিফথ্যালেট। সাধারণত পিউরিফায়েড টেরিফথ্যালিক অ্যাসিড ও মনোইথিলিন গ্লাইকলের বিক্রিয়ায় এই কৃত্রিম তন্তু তৈরি হয়। এটিকে গলিয়ে আবার শুকিয়ে নতুন করে বানানো যায়, এর মাঝে একেবারেই ফাঁকা জায়গা থাকে না, ফলত হাওয়া চলাচল করতে পারে না। সর্বোপরি, এটি জলবিরোধী, অর্থাৎ, ঘাম শুষে নিতেও পারে না। এটি পরিবেশের পক্ষেও ভাল নয়। সুতি সেখানে একেবারেই প্রাকৃতিক ও একই সঙ্গে পরিবেশবান্ধব।
বিভিন্ন টি শার্টের মধ্যে গোল গলা প্রিন্টেড টি শার্টের চাহিদাই এই গরমে বেশি। গেঞ্জির কাপড়ের ওপর পছন্দসই ডিজাইন বসিয়ে নিলেই হল। মেয়েরা ইদানিং গরমে ওভারসাইজড টি শার্ট বেশি পছন্দ করছেন। অনেকে অবশ্য একে বাঁকা ভাবে বয়ফ্রেন্ড টি-ও বলেন। অর্থাৎ, পুরুষসঙ্গীর জামা ধার নেওয়া। কিন্তু এই গরমে নিজ দক্ষতাতেই চাহিদা তৈরি করছে ওভারসাইজড টি শার্ট। রয়েছে কলার দেওয়া, বুক অবধি বোতাম থাকা গলফ শার্ট বা পোলো শার্ট। এটিও গেঞ্জির মতোই, কিন্তু একেবারে গোল গলা বা ক্র্যু নেক টি শার্টের চাইতে বেশি ফর্ম্যাল। এর সঙ্গে সুতির হালকা সেমি-ফর্ম্যাল বা ক্যাজুয়াল ট্রাউজার চমৎকার মানিয়ে যায়। তবে কলার দেওয়া পোলো শার্টের ওপর আবার প্রিন্টেড ডিজাইন বা এমব্রডায়রি করা ডিজাইন তেমন যায় না। এর জন্য দরকার একই রঙের বা দুই-তিন রঙের স্ট্রাইপ। অফিস-কাছারি, মিটিং বা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গরমে আদর্শ এরা। চাইলে ক্র্যু নেক বা গোলগলা কিন্তু ফুলহাতা 'হেনলি' শার্টও গরমে বেশ কাজে দেয়। বিশেষ করে যারা রোদের মধ্যে বাইক চালান, তাঁদের জন্য হাতে যাতে রোদ না লাগে, সেই হিসেবে 'হেনলি' জামার উপযোগিতা চমৎকার।
ইদানিং বিভিন্ন গোল গলা টি-শার্টে জনপ্রিয় হয়েছে মজাদার বাংলা ডিজাইন। এখনও অবধি বড় বিপণিতে এরকম না এলেও কলকাতার অনেকেই নিজ উদ্যোগে মজাদার বাংলা ক্যাপশন বসিয়ে টি-শার্ট প্রিন্ট করছেন। একটু খুঁজে নিতে হবে। নজর রাখুন তাহলে সমাজমাধ্যমে। মিলবে বাংলা প্রবাদ, ছড়া, সুকুমার রায়ের আবোল-তাবোল থেকে নেওয়া লাইন, মজাদার বাংলা কাল্পনিক চরিত্রদের ছবি, এমনকী রবীন্দ্রনাথের কবিতাও মিলবে।
টি শার্টের ক্ষেত্রে এখন একটা বেশ চালু ব্যাপার হল বিভিন্ন জনপ্রিয় টিভি সিরিজের ক্যাপশন বা আইকন। কিছুদিন আগেই পৃথিবীজুড়ে জনমানসে তোলপাড় ফেলেছিল হলিউড টিভি ড্রামা 'গেম অফ থ্রোনস'। ড্রাগন বা ওয়েস্টেরোসের বিভিন্ন হাউসের প্রতীক দিয়ে বিভিন্ন টি শার্ট বাজারে দিব্যি জনপ্রিয় হয়েছিল। পোলো শার্টেও বুকের কাছে প্রিন্টেড লোগো দেওয়া হয়েছিল। 'লর্ড অফ দ্য রিংস' বা 'হ্যারি পটার' সিরিজের লোগো তো এভারগ্রিন। এখন যেমন আসমুদ্রহিমাচলে জনপ্রিয় হয়েছে টিভি শো 'পঞ্চায়েত'। তার বিভিন্ন মজাদার সংলাপ নিয়ে চুটকির মতো ব্যবহার করা হচ্ছে টি শার্টে, যা বেশ সাড়া ফেলেছে বাজারে।
Advertisement
Advertisement