পেশায় ফুটবলার হলেও জোতা নেশায় গেমার। চুটিয়ে গেম খেলিতেন। ফুটবলের অবসরে আস্ত একখানা ইস্পোর্টস টিম চালাতেন। অংশ নিতেন অনলাইন গেমিং প্রতিযোগিতায়।
ল্যাম্বরগিনির সুপারকার ‘অ্যাভেন্টাডরে’
শেষ আপডেট: 3 July 2025 12:20
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ওভারটেক করতে গেছিলেন। বেপরোয়া গতিতে নয়। আইন মেনে। কিন্তু আচমকা টায়ার ফেটে যায়। আর তারপরই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। পুলিশি মতে, আজ এভাবেই প্রাণ হারিয়েছেন লিভারপুল ও পর্তুগালের তারকা ফুটবলার দিয়োগো জোতা। সজোরে ধাক্কা লাগার পর গাড়িতে আগুন ধরে। উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
পেশায় ফুটবলার হলেও জোতা নেশায় গেমার। চুটিয়ে গেম খেলিতেন। ফুটবলের অবসরে আস্ত একখানা ইস্পোর্টস টিম চালাতেন। অংশ নিতেন অনলাইন গেমিং প্রতিযোগিতায়। প্রতিনিয়ত স্ট্রিম করতেন ‘টুইচ’ (গেমারদের প্রিয় অনলাইন প্লাটফর্ম)।
এর পাশাপাশি ছিল শৌখিন গাড়ির নেশা। অনেক কিছু কেনাবেচার পর মন বসে ল্যাম্বরগিনির সুপারকার ‘অ্যাভেন্টাডরে’। নজরকাড়া ডিজাইন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও আপাদমস্তক সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে গড়া হলেও আজ সেই গাড়িতে বসেই প্রাণ হারালেন সাম্প্রতিক জমানার অন্যতম স্কিলফুল ফুটবলার।
শুধুই কি টায়ার ফেটে গিয়ে নাকি যন্ত্রাংশ বিকল হওয়াও এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী, সেটা বিশদ তদন্তের পর জানা যাবে। কিন্তু গাড়ির খবর রাখেন যাঁরা, তাঁরা কিন্তু ল্যাম্বরগিনির এই ঝাঁ-চকচকে মডেলের এভাবে ‘বিতর্কে’র কেন্দ্রে আসায় বিস্মিত।
আসলে চারচাকার দুনিয়ায় কিছু গাড়ি আছে, যেগুলো তারকা থেকে ছাপোষা মানুষ—প্রত্যেকের ‘স্বপ্নের গাড়ি'র তকমা পেয়েছে। ‘ল্যাম্বরগিনি অ্যাভেন্টাডর’ এমনই এক নাম—যার স্টাইল, গতি আর গর্জনে মুগ্ধ গোটা দুনিয়া। এটি কেবল সুপারকার নয়, সর্বার্থে গতির দেবতা!
ষাঁড়ের নামে গাড়ি, দাপটেও কম নয়!
ল্যাম্বরগিনির গাড়িগুলোর নাম স্প্যানিশ ষাঁড়ের নামে রাখার চল বহুদিনের। ১৯৯৩ সালে স্পেনের ঐতিহাসিক লড়াইয়ে অংশ নিয়ে শাবাসি কুড়োয় দুর্ধর্ষ ষাঁড় ‘অ্যাভেন্টাডর’। তার নামেই খাস মডেলের গাড়ির নামকরণ। ২০১১ সালে প্রথম আত্মপ্রকাশ। তারপর বিশ্বজুড়ে গাড়িপ্রেমীদের নজর কেড়ে নেয়। হয়ে ওঠে ল্যাম্বরগিনির সবচেয়ে শক্তিশালী ও অত্যাধুনিক মডেল।
চোখধাঁধানো পারফরম্যান্স
অ্যাভেন্টাডরের সঘোষ গর্জন শোনামাত্র বোঝা যায় এ গাড়ি কারও পরোয়া না করে গন্তব্যকে নিজের ছন্দে বেঁধে নিতে প্রস্তুত! কী নেই এতে!
ইঞ্জিন: ৬.৫ লিটার V12 ন্যাচারালি অ্যাস্পিরেটেড পেট্রোল ইঞ্জিন
হর্সপাওয়ার: ৭৩০ bhp (SVJ মডেলে)
০-১০০ কিমি প্রতি ঘণ্টা: মাত্র ২.৮ সেকেন্ড
সর্বোচ্চ গতি: প্রায় ৩৫৫ কিমি প্রতি ঘণ্টা
টপ গিয়ার: ৭-স্পিড ISR গিয়ারবক্স, অল-হুইল ড্রাইভ
গাড়িটির অ্যাক্টিভ অ্যারোডাইনামিক্স, রিয়ার-হুইল স্টিয়ারিং, লাইটওয়েট কার্বন ফাইবার বডি—সব মিলিয়ে প্রতিটি বাঁক পালকের ছন্দে ঘোরে, চোখের পলকে দূরত্ব অতিক্রম করে অ্যাভেন্টাডর।
ভবিষ্যতের ডিজাইন, আজকের গাড়ি
দরজার আইকনিক ডিজাইন, অ্যাগ্রেসিভ ফ্রন্ট আর স্কাল্পটেড বডি দেখলেই বোঝা যায়, রাস্তায় চলা কোনো সাধারণ যান নয়… অ্যাভেন্টাডর আদ্যোপান্ত মহাকাশযান! পথ ভুলে মাটিতে নেমে এসেছে! এর ‘রোডস্টার সংস্করণ’ অনুরাগীদের বিশেষ পছন্দের। যেখানে রয়েছে খোলা ছাদে চড়ে গতি উপভোগ করার সুযোগ!
মডেল ও বিশেষ সংস্করণ
নিজেকে খোপে না পুরে প্রতি বছর খোলনলচে বদলে আরও উন্নতমানের প্রযুক্তি নিয়ে বাজার দাপিয়েছে অ্যাভেন্টাডর। এমনই কিছু চর্চিত মডেল হল—
Aventador LP 700-4
Aventador S
Aventador SV (SuperVeloce)
Aventador SVJ (SuperVeloce Jota)
Aventador Roadster
Aventador Ultimae (অ্যাভেন্টাডর সিরিজের অন্তিম সংস্করণ, ল্যাম্বরগিনির ক্লাসিক V12 ইঞ্জিনের শেষ অধ্যায়।)
তারকারাও এর ভক্ত
বলিউডের বাদশা শাহরুখ খান থেকে শুরু করে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, সেলেনা গোমেজ, কার্ডি বি—অনেক তারকার গ্যারাজে জায়গা করে নিয়েছে অ্যাভেন্টাডর। এটা নিছক ‘সুপারকার’ নয়, বরং 'লাইফস্টাইল স্টেটমেন্ট'।
ভারতেও অ্যাভেন্টাডর
ভারতীয় বাজারে এই সুপারকারের দাম ৫.৫ কোটি থেকে ৬.৫ কোটি টাকার আশেপাশে। কাস্টমাইজেশন চাইলে দর আরেকটু চড়তে পারে। দেশের হাতেগোনা কয়েকজনই এই গাড়ির মালিক।
বিদায়ের সুর, তবু ইতিহাসে অমর
২০২২ সালে শেষবারের মতো তৈরি হয় অ্যাভেন্টাডর। ‘Ultimae’ সংস্করণে ইতি টানে এই V12 ইঞ্জিনও। ভবিষ্যতের ল্যাম্বরগিনি মডেলগুলো হবে হাইব্রিড ও ইলেকট্রিক।