ইংল্যান্ড বনাম নেদারল্যান্ড
শেষ আপডেট: 10 July 2024 08:30
এতদিন ওয়েস্ট ইন্ডিজে টি২০ ক্রিকেট বিশ্বকাপে এসব শোনা যাচ্ছিল। টিম হোটেল থেকে বেরিয়ে ক্রিকেটাররা দুরু-দুরু বুকে থাকতেন। এয়ারপোর্টে ঢুকে আবার কী শুনতে হবে? একের পর এক বিমান বিভ্রাটে জেরবার হয়েছে আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত। ইউরোর ধুন্ধুমার সেমিফাইনালের আগে এবার নেদারল্যান্ডসকেও ঝামেলায় পড়তে হল। ইউরোয় এবার বিভিন্ন দল নিজেদের শিবির থেকে ট্রেনে আসা-যাওয়া করছে। এই নিয়ে জার্মান রেল সংস্থার সঙ্গে ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচারও সেরেছে উয়েফা। দ্য ওয়াল বিস্তারিত জানিয়েছিল সে খবর। কিন্তু মঙ্গলবার উলফসবার্গে শিবির থেকে বেরিয়ে ডর্টমুন্ডের ট্রেন ধরতে এসেই বিপাকে পড়ে ডাচ দল। জানানো হয়, ট্রেন বাতিল হয়েছে। অতঃপর তড়িঘড়ি বিমানের ব্যবস্থা করতে হয়। শেষ অবধি নির্ধারিত সময়ের প্রায় চার ঘন্টা দেরিতে, রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ ডর্টমুন্ডের হোটেলে ঢোকেন রোনাল্ড কোম্যান অ্যান্ড কোং!
এতে করে সন্ধ্যের সাংবাদিক সম্মেলনে আর আসতে পারেননি নেদারল্যান্ডস ফুটবলাররা। প্রস্তুতিতে অবশ্য অসুবিধে হয়নি। যেটুকু যা সারার, উলফসবার্গেই সেরে এসেছিলেন কোম্যান। কিন্তু এতেই একটা চোরাগোপ্তা টেনশনের স্রোত বইছে শিবিরে। হাজার হোক, ইউরো সেমিফাইনাল! নির্ধারিত পরিকল্পনার এক ইঞ্চি এদিক-সেদিক হলেও আশঙ্কা শুরু হয়ে যায়।
রোনাল্ড কোম্যান অবশ্য খুব একটা ভাবিত নন। ওলন্দাজ মিডিয়ার যা খবর, ফুটবলারদের একেবারে চাপমুক্ত থাকতে চেষ্টায় কোনও কসুর রাখছে না ম্যানেজমেন্ট। তাছাড়া, শেষ মুহূর্তে রদবদল তো আর কোম্যানের কাছে নতুন নয়। এইবারের ইউরোই যেমন। কোম্যানের বরাবরের পছন্দ, কড়া সেন্ট্রাল মাঝমাঠ। যথেষ্ট পাস খেলে সরাসরি আক্রমণে ওঠা। অথচ টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই ছিটকে গেলেন তাঁর সেরা অস্ত্র ফ্রেঙ্কি দে ইয়ং। তেউন কুপমেইনার্সও নেই। অতএব বাধ্য হয়ে উইংসের কথা ভাবতে হচ্ছে তাঁকে। সামনে মেমফিস দিপাইকে দেখে মনে হচ্ছে, দশটা সুযোগ পেলে এগারোটা মিস করছেন। তাঁকে দশ নম্বর হিসেবে একটু নিচে রেখে দু’পাশে অতএব মজবুত উইংসের দিকে যোগ দিতে হচ্ছে কোম্যানকে। সেখানে বাঁ দিক তুলনায় বেশি শক্তিশালী। জাভি সিমন্স ও কোডি গ্যাকপো তুফানি ছন্দে আছেন। গ্যাকপো এবারে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে গোল্ডেন বুট জেতার দৌড়ে আছেন। ইংল্যান্ডের থেকে প্রায় ঘন্টখানেক কম সময় মাঠে কাটিয়েও ইংল্যান্ডের দ্বিগুণ গোল করেছে ওলন্দাজরা। গ্যারেথ সাউথগেটের অনেকগুলো চিন্তার জায়গা আছে। তবে এইটেই বোধ হয় সবচেয়ে বেশি ভাবাবে।
সম্ভবত প্রথম একাদশে আর কোনও বদল আনবেন না কোম্যান। নেদারল্যান্ডসের অন্যতম সেরা ডিফেন্সিভ মাঝমাঠের একজন ধরা হয় কোম্যানকে। ১৯৮৯ সালে বার্সেলোনায় যোগ দিয়েছিলেন। তখন বার্সেলোনায় জোহান ক্রুয়েফের স্বপ্নের দল। গুরু ক্রুয়েফের অন্যতম প্রিয় শিষ্য ছিলেন কোম্যান। তাঁর সঙ্গে খেলেছেন রোমারিও, পেপ গুয়ার্দিওলা। বার্সেলোনা-নেদারল্যান্ডসের ধ্রুপদী ফুটবল দর্শনে আগাগোড়া বিশ্বাস ছিল কোম্যানের। কোচ হিসেবেও কঠোর নিয়মানুবর্তিতা দেখিয়েছেন। শোনা যায়, বার্সেলোনার কোচ থাকাকালীন একবার অনুশীলনে এসে দেখেন, নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও মাঠে লিওনেল মেসি, হোর্দি আলবা, আর্তুরো ভিদাল ও লুই সুয়ারেজের দেখা নেই। মিনিটখানেক পরেই অবশ্য এসে হাজির হ’ন তাঁরা। কোম্যান তখন জেরার পিকে-কে জিজ্ঞেস করেন, ‘কী ব্যাপার?’ পিকে বলেন, ‘এরকম হয় এখানে।‘ কোম্যান তৎক্ষণাৎ দলকে একত্র করে বলেন, পরের দিন থেকে অনুশীলন সবার জন্য একই সময়ে শুরু হবে। আর একবারও দেরি করেননি মেসিরা।
ইদানিং অবশ্য এতটা কড়াকড়ি থেকে খানিক নরম হয়েছেন কোম্যান। দলে অল্পবয়সী ফুটবলারদের সঙ্গে এখন অনেক বেশি খোলামেলা তিনি। এতে করে দলের বোঝাপড়া পোক্ত হয়েছে। কিন্তু মাঝমাঠ নিয়ে এখনও চিন্তায় তিনি। গ্যারেথ সাউথগেটের দলের হাল ভাল নয়। অনেকেই বলাবলি করছেন, এত রথীমহারথী এনেও ইংল্যান্ডের অবস্থা চোখে দেখা যাচ্ছে না! বুকায়ো সাকা না বাঁচালে সুইজারল্যান্ডই ইংল্যান্ডের ছুটি করে দিতে পারত। কিন্তু তারপরেও মাঝমাঠে আর্সেনাল ও ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের ডেকলান রাইস, কোবি মাইনু আছেন। হ্যারি কেন সামনে খেই হারিয়ে ফেলছেন বলে আজ দশ নম্বর হিসেবে জুড বেলিংহ্যামকে তাঁর পিছনে রাখতে পারেন সাউথগেট। ফলে দুই প্রান্তে বুকায়ো সাকা ও ফিল ফোডেন অনেকটা জায়গা জুড়ে খেলতে পারবেন। এতে চাপ বাড়বে ডাচ রক্ষণে। নাথান আকে ও ডেনজেল ডামফ্রিসের ওপর বাড়তি দায়িত্ব পড়বে। এমনিতেই ডামফ্রিস অতর্কিতে সুইপ করে উঠে যাচ্ছেন। প্রায় ত্রাস জাগিয়ে দিয়েছেন বিপক্ষের। কিন্তু আসল জায়গাটা ধরে রাখছেন অধিনায়ক ভার্জিল ভ্যান ডাইক। দীর্ঘদেহী ভ্যান ডাইকের ওপরেই আজ মোটামুটি গুরুদায়িত্ব বর্তাবে।
নেদারল্যান্ডসের সুবিধে, ডোনিয়েল ম্যালেন তাঁর ‘ঘরের মাঠে’ খেলবেন। কিন্তু বরুসিয়া ডর্টমুন্ড তারকাকে আজ আটকানোর দায়িত্বে কে থাকবেন, সেইটেই একটা প্রশ্ন। লেফট ব্যাকে কিয়েরন ট্রিপিয়ারের অবস্থা করুণ। কিন্তু সাউথগেট কি তাঁকে বসাবেন? সেক্ষেত্রে লুক শ’ নামতে পারেন। কিন্তু তিনিও চোট সারিয়ে ফিরেছেন। ব্রিটিশ মিডিয়ায় গুঞ্জন, আজ হয়ত শ’-এর কপাল খুলতে পারে। নিঃসন্দেহে, ওলন্দাজ আক্রমণ ও ইংরেজ মাঝমাঠেই আজ লড়াইটা হবে। জিততে পারলে পর পর দুইবার ইংরেজরা ইউরো ফাইনালে পৌঁছবে। যা প্রায় অভাবনীয়। গতবারের আগে একবারও ফাইনালের দোরগোড়ায় পৌঁছয়নি ইংরেজরা। কিন্তু ওলন্দাজদের হুঙ্কার, মাঠে কিন্তু প্রায় ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেওয়া হবে।