জেডন স্যাঞ্চো ও বুকায়ো সাকা।
শেষ আপডেট: 8 July 2024 09:00
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ইউরো ২০২০-এর ফাইনাল বলতেই এখনও ঘুরেফিরে আসে সেই অভিশপ্ত মুহূর্তগুলো।
কোভিডের জন্য টুর্নামেন্ট পিছিয়ে গিয়েছিল এক বছর। নামে 'ইউরো ২০২০' হলেও হয়েছিল ২০২১ সালে। ১১ দেশের ১১ শহরে ছড়িয়ে গিয়েছিল খেলা, ফাইনাল হয়েছিল লন্ডনের ওয়েম্বলিতে। ১১ জুলাই সেই ফাইনালে মুখোমুখি ইংল্যান্ড ও ইতালি। ইংরেজ সমর্থকরা উদ্বেল, নির্ঘাত ঘরের মাঠে জিতে শেষ অবধি 'হোমকামিং' হতে চলেছে ইউরোর। 'কামিং হোম' গেয়ে শিরা ফুলিয়ে ইংরেজরা ভিড় করেছিলেন ওয়েম্বলির গ্যালারিতে। কিন্তু পুরো সময় ১-১ থেকেও সব গোলমাল হয়ে যায় টাইব্রেকারে। দুই 'হ্যারি'--হ্যারি কেন ও হ্যারি ম্যাগুয়ের জালে বল জড়ালেও পর পর ব্যর্থ হ'ন মার্কাস র্যাশফোর্ড, জেডন স্যাঞ্চো ও বুকায়ো সাকা।
পরের ঘটনা ইউরোর কলঙ্কের ইতিহাসে পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছে। তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয় ওয়েম্বলির বাইরে। ক্রুদ্ধ ইংরেজ সমর্থকদের রোষের শিকার হ'ন ইতালির সমর্থকরা। ঘটনাচক্রে, ইংল্যান্ডের তিন ব্যর্থ ফুটবলারই কৃষ্ণাঙ্গ। ফলে সমস্ত জমে থাকা বর্ণবিদ্বেষের বিষে একেবারে ছেয়ে যায় ব্রিটিশ সমাজমাধ্যম! তিন ফুটবলারের গায়ের রঙকে হাতিয়ার করে তুমুল আক্রমণ চলে। ন্যক্কারজনক এই ঘটনায় ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে উয়েফার। শুরু হয় তদন্ত। ছিছিক্কার শুরু হয় ব্রিটিশ ফুটবলমহলে। সমাজমাধ্যমে তিন ফুটবলারের পাশে দাঁড়িয়ে বিবৃতি দেন অধিনায়ক হ্যারি কেন।
কথায় বলে, হিস্ট্রি রিপিটস ইটসেলফ। মাত্র তিন বছরের মধ্যেই, ইতিহাস যেন ধারালো বর্শার মত বিঁধল ব্রিটিশ ফুটবলে।
ইউরোয় এবারে ইংল্যান্ড যা খেলছে, তাতে সংবাদমাধ্যমে রীতিমত গ্যারেথ সাউথগেটের দলের মুণ্ডুপাত চলছে। তারায় বাঁধানো দল, অথচ মাঠে কোনও ছন্দেই নেই ফুটবলাররা। সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালেই ছুটি হয়ে যাচ্ছিল। হলে সম্ভবত কেউ অবাক হতেন না। অনেকে তো বলেই দিচ্ছেন, কোয়ার্টার অবধি এসেছে, এই অনেক। গ্যালারিতে সমর্থকরা বিদ্রূপে ভরিয়ে দিচ্ছেন। বিয়ারের গ্লাসও উড়ে গিয়েছে সাউথগেটের দিকে। ৭৫ মিনিটে এগিয়ে গিয়েছিল সুইসরা। কিন্তু দুর্দান্ত গোলে সমতা ফেরান বুকায়ো সাকা। খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে।
টাইব্রেকারে ইংল্যান্ডের পাঁচজনই গোল করেন। কারা ছিলেন তাতে? কোল পামার, জুড বেলিংহ্যাম, বুকায়ো সাকা, ইভান টোনি ও ট্রেন্ট আলেকজান্ডার-আর্নল্ড। একমাত্র পামার বাদে সকলেই অ-শ্বেতাঙ্গ।
ম্যাচের পরেই ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্ট করেন জেডন স্যাঞ্চো। এবারের ইউরোতে স্যাঞ্চো খেলছেন না। র্যাশফোর্ডও নেই। যদিও সাউথগেট বারবার বলেছেন, দু'জনের জন্যই তাঁর দরজা খোলা। কিন্তু জায়গা করতে পারেননি দু'জনে। যদিও স্বমহিমায় খেলছেন আর্সেনাল তারকা সাকা। স্যাঞ্চো লেখেন, 'এই ছেলেটির জন্য আমি গর্বিত। বুকায়ো, তুমি এটা আমার আর মার্কাসের জন্য করে দেখিয়েছো।' স্যাঞ্চো, র্যাশফোর্ড দু'জনেই ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে খেলেন। এই বছর অবশ্য লোনে স্যাঞ্চো গিয়েছেন বরুসিয়া ডর্টমুন্ডে।
বর্ণবিদ্বেষীদের ওপর একহাত নিয়েছেন প্রাক্তন ইংল্যান্ড তারকা রিও ফার্দিনান্দ। নিজের এক্স হ্যান্ডলে পাঁচ টাইব্রেকার নেওয়া ফুটবলারের ছবি দিয়ে লিখেছেন, 'বর্ণবিদ্বেষীগুলো গেল কোথায়? ওরা বোধ হয় এখনও সেলিব্রেশনেই মজে আছে!'
Where are the racists now????
— Rio Ferdinand (@rioferdy5) July 7, 2024
Probably still celebrating!!!! ???????????????????????????? #EURO2024 pic.twitter.com/kC17HxIDLJ
ইংল্যান্ড দল অবশ্য এই নিয়ে কোনও বিবৃতি দেয়নি। বস্তুত, একটি ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডের খবর যদি সত্যি হয়, সাউথগেট নাকি খেলোয়াড়দের মুখে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন। সাফ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, কেউ পেনাল্টি নিয়ে কোনও কথা বলবে না। গোলকিপার জর্ডান পিকফোর্ডকেও বারণ করে দিয়েছেন। যদিও খবর পেরিয়েছে, অবস্থা বেগতিক দেখে সাউথগেট এবার জোরকদমে পেনাল্টি শ্যুটআউটের প্রস্তুতি শুরু করেছেন। দলে মনোবিদকে আনা হয়েছে, ভিডিও অ্যানালিস্টের বিশেষ ব্যবস্থা হয়েছে। অনুশীলনেও পেনাল্টি মারায় জোর দিচ্ছেন। ইংল্যান্ড দলে জল্পনা, সেমিফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে খেলা টাইব্রেকারে গড়ালে কঠিন পরীক্ষা হয়ে যাবে সাউথগেটের। ফলে সাধু সাবধান।
কিন্তু জেডন স্যাঞ্চোদের পোস্ট থেকেই পরিষ্কার, ওয়েম্বলির ক্ষত এখনও দগদগে।