গ্যারেথ সাউথগেট ও তাঁর সম্ভাব্য বদলি, এডি হাও।
শেষ আপডেট: 17 July 2024 08:14
মিলখা সিংহ আর গ্যারেথ সাউথগেটের মধ্যে মিল কোথায়?
এখন আর কাউকে মনে করাতে হয় না। রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরার ছবিতে দৃশ্যটা এখনকার প্রজন্মের জন্য অবিস্মরণীয় করে দিয়ে গিয়েছেন ফারহান আখতার। ১৯৬০ রোম অলিম্পিকের ওই দৌড়! চারশো মিটার দৌড়ের ফাইনাল। এক সেকেন্ডের একশো ভাগের এক ভাগ সময়ের ব্যবধানে প্রথম হলেন আমেরিকার ওটিস ডেভিস, দ্বিতীয় জার্মানির কার্ল কফমান। তৃতীয় স্থানের জন্য বেরিয়ে গেলেন ম্যালকম স্পেন্স। মাত্র এক ভগ্নাংশের জন্য পদক হাতছাড়া হয়ে গেল ভারতীয় ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ আইকনের।
ওই দৌড়ই তাঁকে চিনিয়েছিল। ওই দৌড়ের জন্যই তিনি আজও ভারতের লোককথায় জায়গা করে নিয়েছেন। কিন্তু জীবদ্দশায় বরাবর 'উড়ন্ত শিখ' মিলখা বলতেন, ওই দৌড় তিনি মনে করতে চান না। ওই আক্ষেপ আর তাঁর যায়নি।
বার্লিনে গত রবিবারের রাতটাও কি আর গ্যারেথ সাউথগেট মনে করতে চাইবেন না?
মিলখা আর সাউথগেটের মধ্যে একটা ফারাকও আছে। কথায় বলে, জীবনে সবার দ্বিতীয় সুযোগ আসে। অথচ অলিম্পিক পদকের কাছাকাছি ওই একবারই গিয়েছিলেন মিলখা। তারপর অবশ্য বহু স্বর্ণপদকে অক্ষয় হয়ে আছেন তিনি। কিন্তু অলিম্পিক চূড়া অধরাই থেকে গিয়েছে। গ্যারেথ সাউথগেট এখানে ব্যতিক্রম। ব্রিটিশ ইতিহাসে পাকাপাকি জায়গার জন্য তিনি দুইবার ইউরো সেরার চূড়ার কাছে পৌঁছলেন। দু'বারই তাঁকে ব্যর্থ হতে হল।
ওয়েম্বলিতে তিন বছর আগের সেই রাত তিনি আর মনে করতে চাননি। প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার অবধি বলেছিলেন, তিনি ওয়েম্বলিতে ২০২১ ইউরো ফাইনাল মনে রাখতে চান না। ব্রিটিশ ফুটবলের সকলেরই এক রা। ফাইনালে ওঠাটাকে আর তাঁরা সাফল্য হিসেবে ধরেন না। ১৯৬৬ সালের পর বিশ্বকাপ হোক বা ইউরো, তাঁদের প্রথম কোনও বড় টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওঠা ২০২১-এর ইউরো। কিন্তু এসব আর কেউ দেখেন না। ট্রফি চাই। রানার্স-আপকে কে মনে রাখে? চ্যাম্পিয়নটাই তো আসল।
গ্যারেথ সাউথগেট ইতিহাসের একেবারে দোরগোড়ায় দাঁড়িয়েছিলেন দুইবার। আজ অবধি ইংল্যান্ড ইউরো জেতেনি। আজ অবধি কোনও ব্রিটিশ ম্যানেজারও ইউরো জেতেননি। বস্তুত, পর পর দুইবার ফাইনালে ওঠার কৃতিত্বও এর আগে আছে মাত্র দুইজনের। দুইজনেই জার্মান। একজন, কিংবদন্তী হেলমুট শোন। চোদ্দ বছর পশ্চিম জার্মানির কোচ ছিলেন, চারবার বিশ্বকাপে নিয়ে গিয়েছেন। যার মধ্যে একবার রানার্স আপ, একবার তৃতীয় আর একবার, ১৯৭৪ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন। ১৯৭২ ও ১৯৭৬, পর পর দুই ইউরোতে পশ্চিম জার্মানির শোন একবার জিতেছেন, একবার রানার্স হয়েছেন। দ্বিতীয়জন, বার্টি ফোক্স। ১৯৯২ ও ১৯৯৬, দুই ইউরোতে জুরগেন ক্লিন্সমানের জার্মানির কোচ ছিলেন, একবার জিতিয়েছেন, দ্বিতীয়বার রানার্স। স্পেন পর পর দু'বার ইউরো জিতলেও, দুইবার দলের দায়িত্বে ছিলেন দু'জন। প্রথমবার লুই আরাগোনেস (২০০৮), দ্বিতীয়বার, বিশ্বকাপ-জয়ী দেল বস্কি (২০১২)।
ইউরো না জিতলেও, ইংরেজ ফুটবলমহলে সকলেই মানছেন, ব্যর্থ হলেও গ্যারেথ সাউথগেটের কৃতিত্বকে খাটো করার প্রশ্নই নেই। হয়ত এই ব্যর্থতার সাময়িক হাওয়াটা কেটে গেলে ছবিটা উজ্জ্বল হবে। তাই হয়। আজ থেকে পাঁচ বছর পরে হয়ত গ্যারেথ সাউথগেটের নাম ১৯৬৬ সালের বিশ্বজয়ী আলফ র্যামসের সঙ্গে একসুরেই উচ্চারিত হবে। কিন্তু আপাতত, অনাড়ম্বর, জৌলুসহীনভাবে বিদায় নিলেন সাউথগেট। জানিয়ে দিলেন, আর নয়। আপাতত ইংল্যান্ড দলের ম্যানেজারের পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন তিনি।
এইবার প্রশ্ন দানা বেঁধেছে, পরের কোচ কে হবেন? যথারীতি, এই নিয়ে কিঞ্চিৎ হাওয়া গরম হচ্ছে। তালিকায় অনেকগুলো নাম ঘুরপাক খাচ্ছে। আছেন তিন প্রাক্তন চেলসির কোচ, মোরিসিও পোচেত্তিনো, গ্রাহাম পটার, টমাস টুখেল। আছেন নিউকাসল ইউনাইটেডের কোচ এডি হাও। এতেই ইংল্যান্ডের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এফএ) সঙ্গে চাপানউতোর শুরু হয়েছে নিউকাসলের। হাও যদিও খুবই আগ্রহী। বলেছেন, ইংল্যান্ডের কোচ হওয়াটাই তাঁর লক্ষ্য। এফএ যদি নিউকাসলের সঙ্গে দরকষাকষি শুরু করতে চায় তো তাঁর আপত্তি নেই।
কিন্তু এই খবরেই বেজায় চটেছেন নিউকাসলের সিইও ড্যারেন এলস। সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের ম্যানেজারেকে দেশের স্বার্থে ছেড়ে দেওয়ার বিন্দুমাত্র বাসনা তাঁর নেই। একটি ব্রিটিশ দৈনিককে সটান বলে দিয়েছেন, 'এডির সঙ্গে একাধিক বছরের চুক্তি আছে। গত মরশুমেই তা বাড়ানো হয়েছে। এখন আমি কোনও অবস্থাতেই ওর চুক্তি নিয়ে কথা বলব না। ও আমাদের কর্মী। আমরা ওকে ছাড়ার কোনও কথাই ভাবছি না।'
কিন্তু আপনারা কতটা লড়াই দিতে পারবেন? এফএ তো মুখিয়ে আছে। কার্যত যুদ্ধং দেহি মেজাজে এলস বলে দিয়েছেন, 'তাতে কী? আমরাও লড়ে যাব। এডি অসামান্য ম্যানেজার। আমরা ওর প্রতি দায়বদ্ধ!'
পচেত্তিনো বা টমাস টুখেলকে নিলে এসব ঝামেলা অবশ্য পোহাতে হবে না এফএ-কে। এদিকে তালিকায় আরও বেশ কিছু ইংরেজ রথীমহারথীরা আছেন। যদ্দুর কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, ইংল্যান্ডের অনুর্দ্ধ-২১ দলের ম্যানেজার লি কার্সলির দিকে নজর আছে এফএ-র। তার পাশাপাশি দুটো বড় নাম হাওয়ায় ভাসছে। এক, ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ড। কিছুদিন আগে অবধিও অন্তর্বর্তীকালীন ম্যানেজারের দায়িত্বে ছিলেন চেলসিতে। ক্লাবের, তথা জাতীয় দলের সর্বকালের সেরাদের একজন। অপরজন, লিভারপুল তারকা স্টিভেন জেরার। কিছুদিন আগেও রেঞ্জার্সকে স্কটিশ লিগ জিতিয়েছেন। এই মুহূর্তে সৌদির আল ইত্তিফাকে রয়েছেন। আরব-প্রবাস ছেড়ে দেশে ফেরার এমন সুযোগ নিঃসন্দেহে জেরার হাতছাড়া করতে চাইবেন না।
আপাতত শেষে কার ওপর দায়িত্ব ওঠে, সেটাই দেখার।