কার্লো অ্যান্সেলোত্তিকে (Carlo Ancelotti) ব্রাজিলের (Brazil) ম্যানেজার পদে বসানোর সঙ্গে এই চিত্রকল্পের মিল রয়েছে। একসময়ের গৌরবশশী আজ অস্তাচলে। পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। অথচ ওয়ার্ল্ড কাপে (World Cup) যোগ্যতা অর্জনের জন্য লড়ে যেতে হচ্ছে।
কার্লো অ্যান্সেলোত্তি
শেষ আপডেট: 16 May 2025 20:08
দ্য ওয়াল ব্যুরো: তুফান উঠেছে ভীষণ। উত্তাল তরঙ্গ। তার মধ্যে ভেসে চলেছে জাহাজ৷ মাস্তুল, কম্পাস ছিন্নভিন্ন, দিকভ্রষ্ট৷ সেই ভাঙা নাওয়ের কাণ্ডারী এক ক্যাপ্টেন, যিনি পেশাগত জীবনের উপান্তে দাঁড়িয়ে। একদা গরিমাময় জাহাজকে তীরে ফেরাতে পারবেন তিনি?
কার্লো অ্যান্সেলোত্তিকে (Carlo Ancelotti) ব্রাজিলের (Brazil) ম্যানেজার পদে বসানোর সঙ্গে এই চিত্রকল্পের মিল রয়েছে। একসময়ের গৌরবশশী আজ অস্তাচলে। পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। অথচ ওয়ার্ল্ড কাপে (World Cup) যোগ্যতা অর্জনের জন্য লড়ে যেতে হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে দলের দায়িত্ব হাতে তুলে নিয়েছেন অ্যান্সেলোত্তি। রিয়াল মাদ্রিদের (Real Madrid) হয়ে চলতি মরশুমে একটিও ট্রফি জেতেননি। কিন্তু তার আগে লা লিগা, চ্যাম্পিয়নস লিগ সহ ছোট-বড় প্রায় সমস্ত ট্রফি হাতে তুলেছেন।
শুধু কি খেতাব জয়ের কারণেই ব্রাজিলের মসনদে বসলেন ইতালীয় ম্যানেজার? ফুটবলের অন্যতম ফলবন্ত ভূমিতে কোচের এতই আকাল পড়ল? লুই ফিলিপ স্কোলারিদের উত্তরসূরী কেন খুঁজে পেল না ব্রাজিলের ফুটবল সংস্থা?
সরকারি বিবৃতিতে অবশ্য একটা কারণ দর্শানো হয়েছে। পাঁচটি আলাদা আলাদা দেশে লিগ খেতাব জেতা দায়িত্বপ্রাপ্তির একটা কারণ৷ কিন্তু এর আগে কখনওই ইউরোপীয় ট্রফি জেতা ম্যানেজারের জন্য লালায়িত হয়নি ব্রাজিল৷ এবার অন্যথা কেন?
আসল এর কারণ নিহিত রয়েছে ব্রাজিলের দীর্ঘমেয়াদি ব্যর্থতায়। ২০০৭ এবং ২০১৯ সালে কোপা অ্যামেরিকা জিতেছে নেইমারের দেশ৷ কিন্তু এ ছাড়া গত দুই দশক ধরে যে প্রতিযোগিতায় নেমেছে, ব্রাজিল ফিরেছে খালি হাতে! ২০০২ বিশ্বকাপের পর ২০১৪ সালে ঘরের মাঠে জার্মানির বিরুদ্ধে লজ্জার ৭-১-এ পরাজয়, ২০১৮ সালের কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে, পরের বার ক্রোয়েশিয়ার কাছে নাস্তাবাবুদ হয়ে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয় ব্রাজিল৷
লক্ষ্যণীয়, প্রতিবারই পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ইউরোপীয় টিম। তাই এবার রণকৌশল বদলাতে চাইছে তারা। বার্তা স্পষ্ট: কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলো৷ যারা প্রতিবার যাত্রাভঙ্গ করছে, তাদের শাসন করেছেন যিনি, সেই ডন কার্লোকেই মসনদে বসিয়েছে ব্রাজিল৷
উল্লেখ্য, সাম্বার দেশে অ-ব্রাজিলীয় ফুটবল ম্যানেজারের ভাগ্য মোটেও পয়মন্ত নয়৷ তিন জন এ পর্যন্ত কুর্সি পেয়েছেন। সাকুল্যে সামলেছেন সাতটি ম্যাচ। তার আগেই বিদায়। হাত জমানোর আগেই হাত বদল।
এত তিক্ত অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও কেন কার্লোতেই আস্থা রাখল ব্রাজিল? শুধুই ট্রফিজয়? শুধুই পাঁচ দেশ সমানভাবে শাসনের সাফল্য?
বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যান্সেলোত্তির ম্যানেজার হিসেবে অন্যতম শক্তি শান্ত, সমাহিত ব্যক্তিত্ব। দুর্যোগ-বিক্ষুব্ধ, টালমাটাল, বাঁধনহীন দলের কাণ্ডারী পদে তাঁর চাইতে যোগ্য দাবিদার আর কেউ হতে পারেন না।
তা ছাড়া, মুক্তক সাম্বা স্টাইল এবং আঁটসাট রক্ষণের ভারসাম্য দীর্ঘদিন ধরে খুঁজে চলেছে ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশন। বিশের দশকে এসি মিলানে একদিকে নেস্তা, মালদিনি, অন্যদিকে কাকা, শেভচেঙ্কোদের নিয়ে সাজানো দল ছিল ডিফেন্সে দুর্ভেদ্য, আক্রমণে শরগতি। দুই দফায় রিয়াল মাদ্রিদের দায়িত্ব পেয়ে একই স্টাইলে দল পরিচালনা করেছেন অ্যান্সেলোত্তি। ব্রাজিল এই দুই মেরুকে এক তারে বাঁধতে পারে এমন ম্যানেজার খুঁজছিল। অ্যান্সেলোত্তি জাতিসত্তায় ইতালীয় হলেও ফুটবল-দর্শনে অনেকটাই সাম্বা-পন্থী৷ তাই ঘরের ছেলেদের থেকে মুখ ফিরিয়ে সাগর ডিঙিয়ে কোচ খুঁজে এনেছে পেলে, রোনাল্ডোর দেশ।