আগামী মরশুমের আইএসএল শুধু নয়, বাকি টুর্নামেন্টগুলি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে, আদৌ কি হবে? এর উত্তর এখনও খুঁজে বেড়াচ্ছে সর্ব ভারতীয় ফুটবল প্রশাসন।
আইএসএল ট্রফি
শেষ আপডেট: 12 May 2025 09:54
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের (AIFF) তুঘলকি আচরণে চরম সংকটে পড়েছে ভারতীয় ফুটবল (Indian Football)। এমনিতেই ফিফা র্যাংকিংয়ে ভারতকে খুঁজতে গেলে এখন দূরবিনের প্রয়োজন হয়। এপ্রিল মাসের র্যাংকিং অনুযায়ী ভারত রয়েছে ১২৭তম স্থানে। যা গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০১৫ সালের এপ্রিল ভারতের র্যাংকিং ছিল ১৭৩। যা সর্বকালের সর্বনিম্ন।
এর পরে যদিও র্যাংকিংয়ে অনেকটাই ঘুরে দাঁড়ায় ভারত। স্টিফেন কনস্ট্যানটাইনের সময় ১০০-র মধ্যেও প্রবেশ করে মেন ইন ব্লুজ। কিন্তু তারপরেই ফের পারফরম্যান্স গ্রাফ পড়তে শুরু করে। আর এখন তো বাংলাদেশ, আফিগানিস্তানকেও হারাতে পারছে না ভারত।
দেশীয় ফুটবলের এই হাল হলেও আইএসএল (ISL) নিয়ে ফুটবলপ্রেমীদের একটা আলাদা আগ্রহ ছিল। কিন্তু ফেডারেশনের অবাক করা বেশ কিছু কর্মসূচি আইএসএল নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। অবশ্য শুধু আইএসএল নয়, ভারতের বেশ কিছু টুর্নামেন্ট আদৌ হবে কি না, উঠেছে সেই প্রশ্নও।
আসলে অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন নিজের পায়েই কুড়ুল মেরে বসেছে। এআইএফএফ-এ এখন চলছে ভাঁড়ে মা ভবানী দশা। আর্থিক সংকটে (Financial Crisis) জর্জিরত ভারতীয় ফুটবল প্রশাসকরা। যার জেরে আগামী মরশুমের আইএসএল শুধু নয়, বাকি টুর্নামেন্টগুলি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে, আদৌ কি হবে? এর উত্তর এখনও খুঁজে বেড়াচ্ছে সর্ব ভারতীয় ফুটবল প্রশাসন।
এআইএফএফ-এর বেহাল দশা আজ নিজের দোষেই। এর প্রধান কারণ সর্ব ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের বাণিজ্যিক পার্টনার এফএসডিএলের (FSDL) সঙ্গে চুক্তি (Contract) নবীকরণ পিছিয়ে যাওয়া। দ্রুত এফএসডিএলের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে আলোচনা সম্পূর্ণ করার জন্য ৭ এপ্রিল এআইএফএফ-এর তরফে ৮ সদস্যের একটা টাস্ক ফোর্স গড়া হয়েছিল। কিন্তু দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ এই টাস্ক ফোর্স এখন গুরুত্বহীন।
এই প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) জানিয়েছে, এআইএফএফকে নতুন কমিটি (New Committee) গঠন করতে পারবে তাদের রায় দানের পরই। আর নতুন কমিটিই পারবে এফএসডিএলের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে। সুপ্রিম কোর্ট নতুন সংবিধান জানিয়ে ১৪ জুলাইয়ের পরে রায় দেবে। তার পরে নয়া সংবিধান মেনে নির্বাচন করতে হলে খুব কমপক্ষে তিন মাস লাগবে।
অর্থাৎ এটা মেনে নিতে কোনও অসুবিধে নেই যে, অক্টোবরের আগে নতুন কমিটি সম্ভব নয়। এদিকে, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে আইএসএল। কিন্তু এখানেই উঠছে প্রশ্ন। এই সময়ের মধ্যে কোনও মতেই নতুন কমিটি গঠন করে নতুন চুক্তি সম্ভব নয়। তাহলে নতুন চুক্তি না হলে এফএসডিএল কোন শর্তে আইএসএল চালু করবে? ফেডারেশনের এক কর্তার এ বিষয়ে সাফ জবাব, “আমার কাছে এর কোনও উত্তর নেই।”
ফেডারেশনকে বাণিজ্যিক স্বত্ব বিক্রির জন্য টেন্ডার ফ্লোট করার অনুমতি দেওয়া হোক, শীর্ষ আদালতে শুনানি চলাকালীন এরকম কোনও বক্তব্য এআইএফএফ-এর আইনজীবী একবারের জন্যও তুলে ধরেননি। পাশাপাশি এফএসডিএল-এর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হোক এরকম দাবিও জানাননি ফুটবল ফেডারেশনের আইনজীবী।
কাজের কাজ না করে প্রতি শুনানিতে ১১ লক্ষ টাকা পারিশ্রমিক নেওয়া আইনজীবীর একমাত্র লক্ষ্য ছিল এআইএফএফ সভাপতি কল্যাণ চৌবের কমিটিকে চার বছর মেয়াদ পূর্ণ করতে দেওয়া।
এ প্রসঙ্গে আইনি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এআইএফএফের কর্তারা সুপ্রিম কোর্টে ব্যস্ত ছিলেন নিজেদের গদি বাঁচাতে, ভারতীয় ফুটবলকে রক্ষা করা তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল না। তাঁরা যদি সুপ্রিম কোর্টকে এফএসডিএল-এর বিষয়টি বোঝাতে পারতেন, তাহলে মাস্টার রাইটস এগ্রিমেন্ট নিয়ে এ ভাবে জট তৈরি হত না।
এআইএফএফ-এর সঙ্গে এফএসডিএল-এর ১৫ বছরের চুক্তি শেষ হচ্ছে চলতি বছরের ডিসেম্বরে। বাণিজ্যিক স্বত্বের জন্য এফএসডিএল বছরে ৫০ কোটি টাকা করে এত বছর দিয়ে চলেছে এআইএফএফ-কে। প্রতি বছর চারটি ইনস্টলমেন্টে এই টাকা পায় এআইএফএফ। এই টাকাতেই ফেডারেশন গোটা বছরে ১৮টি টুর্নামেন্টের প্রায় ২১০০ ম্যাচ করেন। পাশাপাশি এই টাকাতেই দেওয়া ফেডারেশন কর্মীদের বেতনও।
এদিকে জানা গিয়েছে, এই পরিস্থিতি বহাল থাকলে আইএসএল ক্যালেন্ডার অনুযায়ী শুরু করা কখনওই সম্ভব নয়। তাই প্রশ্ন উঠছে, এই অবস্থায় কি চুক্তি রিনিউয়ে আগ্রহ দেখাবে এফএসডিএল? এক কথায় চরম দুর্যোগের কালো মেঘ নেমে এসেছে ভারতীয় ফুটবলের ওপর।