মহাকাশে বৈচিত্র্যময় খাবার নিয়েও ভাবতে হবে বিজ্ঞানীদের।
শেষ আপডেট: 25th May 2024 20:50
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ১৯৭২ সালে শেষবার ফিরে এসেছিল 'অ্যাপোলো ১৭' অভিযান। সফলভাবে চাঁদে ঘোরাফেরা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা সেরে ফিরে এসেছেন জিন কারনান, হ্যারসিন শ্মিট ও রোনাল্ড ইভান্স। তারপর আবার ২০২৫ সালে চাঁদে মানুষ পাঠাতে চলেছে নাসা। পুরোদমে তৈরি হচ্ছে আর্টেমিস অভিযান। চাঁদে নামার জন্য ওরিয়ন মহাকাশযানের নকশাও তৈরি। ব্যবহার করা হবে অত্যাধুনিক 'স্পেস লঞ্চ সিস্টেম' উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা। আপাতত বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য, দীর্ঘমেয়াদিভাবে চাঁদে মহাকাশচারীদের পাঠানো, বা দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে আরও গভীর মহাকাশে মানুষের উপস্থিতি। আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের মেয়াদও ফুরিয়ে গিয়েছে। বানানো হয়েছিল ১৫ বছরের জন্য, আজ ২৬ বছর হয়ে গেল, সে কাজ করে চলেছে।
কিন্তু একটা প্রশ্ন তো উঁকি দিচ্ছেই। এই যে দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে মানুষকে মহাকাশে পাঠানোর তোড়জোড় চলছে... ওঁরা খাবেন কী?
ব্যাপারটা কিন্তু ভেবে দেখার মত! একজন মহাকাশচারী আছেন মহাশূন্যে, ভারহীন অবস্থায়, একটা একচিলতে ক্যাপসুলে তাঁকে থাকতে হবে দিনের পর দিন। অন্ধকার মহাশূন্যে, সম্পূর্ণ যান্ত্রিক পরিবেশে। তার ওপর যদি খাবার মনের মত না হয়, মহাকাশচারীদের ওপর প্রভাব পড়বে না? ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার সঙ্গে জড়িত বিজ্ঞানী সনহা ব্রাংস যেমন বিবিসিকে বললেন, 'খাবারই মহাকাশচারীদের ঠিকঠাক রাখে। লোকে বুঝতেই চায় না, এটা কতটা জরুরি। ভাল খাবার, ঠিকমত খাবার, যাতে বৈচিত্র্য থাকবে, নভশ্চরদের নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী হবে, এরকম খাবার সফল মহাকাশ অভিযানের জন্য খুবই জরুরি।'
বর্তমানে মহাকাশে থাকা নভশ্চরদের জন্য ছোট্ট ছোট্ট প্যাকেটে করে খাবার পাঠানো হয়। বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত সংস্থাকে দিয়ে সেগুলো বানানো হয়, তারপর শুকনো করে, জল শুষে বের করে, তাপীয়স্থিত অবস্থায় সংরক্ষণ করে পাঠানো হয় মহাকাশযানে। শূন্যে পৌঁছনোর পর তাতে জল যোগ করে, গরম করে নিজেদের মত করে গ্রহণ করেন মহাকাশচারীরা।
এতে অবশ্য বিস্তর নিয়মকানুন থাকে। যেমন, গুঁড়ো হতে পারে, এমন কিছু নিয়ে যাওয়া যায় না। মহাশূন্যে সবটাই ভারহীন থাকে, ফলে সেসব গুঁড়ো ভেসে ভেসে কোনও যন্ত্রে বা নভশ্চরের শ্বাসনালীতে ঢুকে গেলে বেজায় বিপদ হয়ে যাবে। নুন সীমিত রাখা হয়, কারণ ভারহীন অবস্থায় শরীরের সোডিয়াম চাহিদা পাল্টে যায়। অ্যালকোহলও নৈব নৈব চ'। এদিকে আমাদের এখন ডিপ-ফ্রায়েড, মুচমুচে জিনিস খেয়ে এমনই অভ্যেস যে, ছয় মাসের জন্য সেসব ছেড়ে থাকা খুবই সমস্যার। ফলে, নভশ্চরদের মানসিক সন্তুষ্টির দিকটাও ভাবতে হয় সংস্থাকে।
২০২১ সালে গভীর মহাশূন্যে কীভাবে খাবার বানানো যায়, সেই নিয়ে একটা প্রতিযোগিতা করেছিল নাসা। বলা হয়েছিল, নূন্যতম বর্জ্য তৈরি করে বেশি পরিমাণ পুষ্টিদ্রব্য, যেমন প্রোটিন কীভাবে তৈরি করা যায়। ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কির একটি সংস্থা গিয়েছিল তার চূড়ান্ত পর্বে। তারা দেখিয়েছিল, মহাশূন্যে বর্জ্য থেকেই প্রোটিন তৈরি করতে পারা সম্ভব। 'আমরা বায়ু থেকেই খাবার তৈরি করার চেষ্টা করেছি। মহাশূন্যে যেখানে মানুষ থাকতে পারে, সেখানে দুই রকম গ্যাস থাকে। হাইড্রোজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইড। সেখান থেকেই এক বিশেষ জাতের মাইক্রোবের সাহায্যে খাবার উপযুক্ত প্রোটিন তৈরি করা সম্ভব', বলেছেন সংস্থার এক আধিকারিক।
এই মুহূর্তে মহাকাশে খাবারের সরবরাহ অন্যতম আলোচিত বিষয়। বিশ্বের নানা প্রান্তে একাধিক সংস্থা এই নিয়ে গবেষণায় নেমেছে। যেমন ফ্লোরিদার মেরিট দ্বীপের এক সংস্থা এক ধরণের মডিউলার বায়োজেনারেটিভ সিস্টেম বানিয়েছে, যার সাহায্যে আণুবীক্ষণিক সবুজ উদ্ভিদ থেকে মাশরুম বা পোকামাকড়ও জীবিত রাখা যায়। বস্তুত, মহাশূন্যে খাবারের ক্ষেত্রে ফাঙ্গাস বা ছত্রাকের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। একাধিক সংস্থা ছত্রাক বা শ্যাওলা থেকে আণুবীক্ষণিক প্রোটিন কণা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। যা মাংস জাতীয় খাবারের বিকল্প হতে পারে। সংস্থার কর্তারা সকলেই বলছেন, এতে করে আজ হয়ত মহাকাশে খাবারের যোগান কী করে দেওয়া যায় সেই সমস্যা নিয়ে ভাবা হচ্ছে, কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে এটা পৃথিবীর খাদ্যসংকট মোকাবিলাতেও বড় ভূমিকা নিতে পারে।
আর কয়েক বছরের মধ্যেই মহাশূন্যে মানুষ পাঠানোর চিন্তায় রয়েছে ভারতের ইসরো। ইতিমধ্যেই গগনযান অভিযানের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। সেখানেও মহাকাশচারীদের খাবারের ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করতে হবে। অতএব পরিস্থিতি দিকে ভারতীয় বিজ্ঞানীরাও নজর রাখছেন।