শেষ আপডেট: 12th June 2022 09:17
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ডাল-ভাত হোক বা লুচি তরকারি, ভোজনরসিক বাঙালির রসনা তৃপ্তিতে উপাদেয় পদের অভাব নেই। মাছ-মাংস তো আছেই, সঙ্গে হরেক মিষ্টি, তেলেভাজা, পানীয়- বাঙালি খাবারের তালিকা বলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু বাঙালির একান্ত আপন যে খাবার, যা পাতে না পড়লে তার দিন কাটে না (Bengali Food), সেসবের অনেক কিছুই বাঙালি তো দূর, ভারতবর্ষের নিজস্ব খাবারই নয়। বাইরে থেকে এসব খাবার এসেছে ভারতে, তারপর ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে কালে কালে মিশে গেছে ওতপ্রোতভাবে (Indian Food Origin)।
আজকের প্রতিবেদনে রইল তেমন ১০টি খাবারের হদিশ, যেগুলি আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় অনিবার্য, অথচ ভারতীয় নয়। অজান্তেই বিদেশি খাবার আপন করে নিয়েছি আমরা।
সিঙ্গাড়া সান্ধ্য জলখাবারের একটা অতি আবশ্যক এবং অতি উপাদেয় পদ। ভিতরে আলুর পুরওয়ালা এই তেলেভাজার নাম শুনলেই ভোজনরসিকদের জিভে জল চলে আসে। বাঙালির এত আপন যে সিঙ্গাড়া, সেটা কিন্তু বাইরে থেকে এসেছে। মধ্যপ্রাচ্যের জনপ্রিয় খাবার কালেভদ্রে এদেশে এসে ঘাঁটি গেড়েছে। হয়ে উঠেছে আপন।
সন্ধ্যাবেলার জলখাবারে যদি সিঙ্গারার একচেটিয়া রাজত্ব হয়, তবে সকালে অবশ্যই লুচির রমরমা। ছাঁকা তেলে ভাজা গরম গরম লুচি আর আলুর দম যেন অমৃতকেও হার মানায়। অনেকে তো লুচির পেলে বিরিয়ানিও ভুলে যায়। অথচ লুচি এখানকার খাবার নয়। আগে এদেশে লুচি পাওয়া যেত না। পোর্তুগিজদের হাত ধরে লুচি এদেশে এসেছে। তারপর জড়িয়ে গেছে আবশ্যক খাবারের তালিকায়।
বাঙালি খাবারের একেবারে শুরুতেই পাতে পড়ে শুক্তো। শুক্তো না হলে খাওয়া অসম্পূর্ণ থেকে যায়। শুক্তো দিয়েই খাওয়া শুরু করে বাঙালি। তারপর মাছ-মাংসের উপাদেয় পদ এসে ভিড় করে। অথচ এই শুক্তোও বাঙালি খাবার নয়। পোর্তুগালের খাবার শুক্তো কালের প্রবাহে মিলেমিশে গেছে বাংলার খাদ্য সংস্কৃতির সঙ্গে।
ভোজনরসিক হোক বা না হোক, চা রোজকার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। চা না হলে সকাল শুরু হয় না। চা না হলে জমে না সন্ধ্যার আড্ডা। কাজের ফাঁকে মাথা ধরলে তো চায়ের বিকল্প নেই। তবে চা যে ভারতীয় খাবার নয় তা হয়তো অনেকেরই জানা। চায়ের উৎস চিনে। চিন দেশ থেকেই চা এবং চা তৈরির পদ্ধতি ভারতে এসেছে।
উত্তর ভারতের একটা জনপ্রিয় খাবার এই রাজমা-চাওয়াল। সেখান থেকে বাংলাতেও তা চলে এসেছে। আজকাল বাঙালিরা অনেকেই রাজমা-চাওয়াল খান। বাঙালি ঘরে নিয়মিত এই সুস্বাদু পদ রান্না হয়। কিন্তু এই খাবারটি ভারতীয় নয়। সুদূর মেক্সিকো থেকে গুয়াতেমালা হয়ে ভারতে পা রেখেছে রাজমা। ভারতীয় খাবারের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে গেছে তারপর।
বাঙালির রসনা তৃপ্তিতে জিলিপির জুড়ি নেই। সকাল হোক বা বিকেল, পাড়ার মোড়ের দোকানে জিলিপি ভাজা হলেই আনচান করে ওঠে মন। মনে হয় কখন গরম গরম জিলিপির স্বাদ পাবে জিভ। এই জিলিপিও এখানকার খাবার নয়। মধ্যপ্রাচ্যে এর উৎস। ভাজা মিষ্টির বেশিরভাগই এসেছে সেখান থেকেই।
বিয়েবাড়িতে নান মাস্ট। নান না হলে বিয়েবাড়ির মেনু জমেই না। পুরু ময়দার আবরণের আড়ালে নরম তুলতুলে রুটি যেন অমৃত। নান একেবারেই এদেশের নিজস্ব খাবার নয়। পারস্য থেকে মোগলদের হাত ধরে ভারতে এসেছে নান।
বাঙালির শীতকাল গুড় ছাড়া অসম্পূর্ণ। নলেন গুড়ের রসগোল্লা থেকে শুরু করে ঝোলা গুড় দিয়ে রুটি, শীতকালে এসবই বাঙলির একচেটিয়া খাবার। তবে এই গুড়ও ভারতের নিজস্ব নয়, খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরির কায়দা এদেশে প্রথম এসেছিল পোর্তুগিজদের হাত ধরেই।
শীতের সকালে কফির কাপে চুমুক দিয়ে দিন শুরু হয় বাঙালির। ফিল্টার কফি কিন্তু এখানকার পানীয় নয়। দক্ষিণ ভারতে কফির চাষ হয় বটে, তবে সেখানকার নিজস্ব আবিষ্কার নয় এই ফিল্টার কফি। মক্কা থেকে এই কফি এদেশে আনা হয়। নীলগিরি কফি নামেও এর খ্যাতি রয়েছে। একটা সময়ের পর কফি বাঙালির রোজকার জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে, ঠিক চায়ের মতো।
আরও পড়ুন: কলকাতায় এখন আম-উৎসব, সামার কুল স্পেশাল আইটেম কোথায় কোথায় পাবেন জানুন
লালচে বাদামি রঙের এই মিষ্টি রসে টইটুম্বুর। গুলাব জামুন শেষ পাতে পড়লে আর কিছু লাগে না। এই মিষ্টির নাম শুনেই বোঝা যায় এটা বাইরের দেশের। মধ্যপ্রাচ্য থেকেই গুলাব জামুন এসেছে ভারতে।