
সমর্থকদের মধ্যে এমন ঘটনা ঘটেই থাকে। কিন্তু একজন ফুটবলার সকালে মৃত্যুশয্যায় দেখে এসেছেন, সেই ফুটবলার দুপুরে দলের হয়ে খেলতে চলে এসেছেন মাঠে, এমন দৃষ্টান্ত বেশি নেই ময়দানে।
ভারতীয় ক্রিকেটে এমন দৃষ্টান্ত দেখিয়েছিলেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। তাঁর বাবা প্রেম কোহলি মারা যাওয়ার পরেরদিনই দিল্লির হয়ে রঞ্জি ম্যাচ খেলতে চলে এসেছিলেন তিনি। কোহলি সেই ম্যাচে রান করে দিল্লিকে জেতানও। একজন ক্রীড়াবিদের মানসিক কাঠিন্য কতটা থাকা উচিত, সেটি দেখিয়েছিলেন বিরাট।
সেই ঘটনাকেও ছাপিয়ে গেল পিয়ারলেসের (Peerless) ডিফেন্ডার আকাশ মুখোপাধ্যায়। শ্রীরামপুরের এই ফুটবলারের বাবা মারা যান সোমবার সকালেই। বাবাকে মৃত্যুশয্যায় দেখার পরেও নিজের কর্তব্যের খাতিরে চলে আসেন ইস্টবেঙ্গল মাঠে। প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ ছিল পিয়ারলেসের সঙ্গে টালিগঞ্জ অগ্রগামীর। ম্যাচটিতে ৬-২ গোলে জেতে পিয়ারলেস।
স্কোর কার্ডে নেই আকাশের নাম। তবুও তিনিই যেন এই ম্যাচের মুখ হয়ে উঠেছিলেন। দলের সতীর্থরা থেকে শুরু করে কোচ, ম্যানেজার সবাই হতবাক আকাশের এহেন আচরণে। দলের অন্যতম কর্মকর্তা অশোক দাশগুপ্ত জানালেন, ‘‘আমরা সকালেই জেনেছিলাম আকাশের বাবা মারা গিয়েছেন। আমরা জানতাম ওকে আমরা ম্যাচে পাব না, কিন্তু আচমকা দুপুরে মাঠে গিয়ে দেখি আকাশও এসে গিয়েছে। আমরা ওকে দেখে অবাক হয়ে যাই, ওকে আমরা বাড়িতেও চলে যেতে বলেছিলাম, কিন্তু শোনেনি আমাদের কথা। বলল, স্যার, বাবার জন্যই আমাকে ম্যাচটা খেলতে দিন, খেললে কিছুটা কষ্ট লাঘব হবে। ওর কথা শুনে আমরাই অবাক হয়ে গিয়েছি।’’
আরও পড়ুন: ময়দানে ওভারল্যাপিংয়ের জনক মোহনবাগানের প্রাক্তন অধিনায়ক ভবানী রায় প্রয়াত
সব চেয়ে বড় কথা, আকাশ ম্যাচের মধ্যে এদিন আবার বিপক্ষ ফুটবলারের সঙ্গে সংঘর্ষে চোটও পেয়েছেন। কপালে ছয়টি সেলাই করতে হয়েছে। ইস্টবেঙ্গল মাঠের ধারে তাঁর কপালে সেলাই করার পরেও আকাশ মাঠে নামেন। যদিও এতটাই কপালে যন্ত্রনা হচ্ছিল যে, আর মাঠে নামতে পারেননি। আকাশ মাঠ থেকে উঠে যাওয়ার পরেই পিয়ারলেস দুটি গোল হজম করে রক্ষণের দূর্বলতায়।
আকাশ উঠে এসেছেন ইস্টবেঙ্গলের যুব অ্যাকাডেমি থেকে। আর সেই মাঠে এসে তিনি এমন এক নিদর্শন রেখে গিয়েছেন, লাল হলুদ কর্তারাও মুগ্ধ তাঁকে দেখে। আকাশের হাতে ক্লাবের তরফে তুলে দেওয়া হয়েছে দশ হাজার টাকা। কারণ আকাশদের পরিবারের অবস্থা ভাল নয়। দরিদ্র পরিবারে আয় বলতে আকাশের বাবাই ছিলেন, তিনি মারা যেতে পরিবারের কী হবে, তিনি জানেন না। আকাশের এক দাদাও কার্যত বেকার।
তাই বাবাকে হারানোর পরে তিনি আরও অসহায়। যদিও ময়দানের কর্তারা তাঁর পাশে থাকবেন, কথা দিয়েছেন। যে ছেলে পাহাড়ের মতো কঠিন হৃদয় নিয়ে নিজের কর্তব্যে অবিচল হতে পারেন, তাঁকে আটকাবে কার সাধ্যি।
আকাশের মতো না হলেও বিশ্বকাপ ক্রিকেটের মঞ্চে শচীন তেন্ডুলকারের ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটেছে। শচীনও বিশ্বকাপের মঞ্চে খেলতে গিয়ে জানতে পারেন তাঁর বাবা রমেশ তেন্ডুলকার মারা গিয়েছেন। শচীন বাড়ি গিয়ে ফের ভারতীয় দলে ফিরে এসে কেনিয়া ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলেন। ওই সেঞ্চুরি বাবাকে উৎসর্গও করেন।
অখ্যাত আকাশ যেন কোথাও শচীন, কোহলিদের মতো মহাতারকাদের সঙ্গে মিলে গেলেন। অন্তত মানসিক কাঠিন্যের দিক থেকে।
পড়ুন দ্য ওয়ালের সাহিত্য পত্রিকা ‘সুখপাঠ’