তৎকালীন পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট ছিলেন সইফুল। পরে স্বাধীন বাংলাদেশের গর্বিত সৈনিক। কিন্তু ইতিহাসে তাঁর সবচেয়ে গর্বের অধ্যায় লেখা হয়েছিল ১৯৬৭ সালের সেই যুদ্ধে, যখন তিনি একাই গুলি করে নামিয়ে দিয়েছিলেন চার চারটি ইজরায়েলি যুদ্ধবিমান।
সইফুল আজম।
শেষ আপডেট: 26 June 2025 09:37
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ১৯৬৭ সালের জুন। পশ্চিম এশিয়ায় তখন ভয়ঙ্কর উত্তেজনা। একদিকে ইজরায়েল (Israel), অন্যদিকে জর্ডন, মিশর, ইরাক ও সিরিয়ার সামরিক জোট। শুরু হয়েছিল ছ’দিনের যুদ্ধ। সেই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মাঝে এক বাঙালি পাইলট (Bengali Pilot) হয়ে উঠেছিলেন আরব বায়ুসেনার আশার আলো। তাঁর নাম সইফুল আজম।
তৎকালীন পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট ছিলেন সইফুল। পরে স্বাধীন বাংলাদেশের (Bangladesh) গর্বিত সৈনিক। কিন্তু ইতিহাসে তাঁর সবচেয়ে গর্বের অধ্যায় লেখা হয়েছিল ১৯৬৭ সালের সেই যুদ্ধে, যখন তিনি একাই গুলি করে নামিয়ে দিয়েছিলেন চার চারটি ইজরায়েলি যুদ্ধবিমান। ইরান ও ইজরায়েলের সংঘাতের পরিস্থিতিতে অনেকেরই মনে পড়ে যাচ্ছে তাঁর কথা।
৫ জুন, ১৯৬৭। জর্ডনের মাফরাক বিমানঘাঁটির আকাশে হানা দেয় ইজরায়েলের চারটি ফাইটার জেট। উদ্দেশ্য, ছোট জর্ডনের বিমান-শক্তিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া। কিন্তু সেই দিনই সাইফুল আজম তাঁর হান্টার জেটে চড়ে একটি ইজরায়েলি মিস্টেয়ার ফাইটার গুলি করে উড়িয়ে দেন।
এরপর ৭ জুন, ইরাকের হয়ে লড়তে গিয়ে আরও দুটি ইজরায়েলি যুদ্ধবিমান গুঁড়িয়ে দেন তিনি। বাংলাদেশ বায়ুসেনার দাবি, তার আগে ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে ভারতীয় একটি বিমানকেও নামিয়ে দিয়েছিলেন পাক বায়ুসেনার তৎকালীন লেফটেন্যান্ট সাইফুল। যুদ্ধে দক্ষতা ও সাহসিকতার জন্য তিনি ‘সিতারা-ই-জুরাত’ পদকে সম্মানিত করা হয়েছিল তাঁকে।
পাকিস্তান, জর্ডন, ইরাক এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশ—এই চার দেশের বিমান বাহিনীতে কাজ করেছেন সইফুল আজম। তাঁর এই অনন্য কৃতিত্বের স্বীকৃতি দেয় সমস্ত আরব বিশ্ব। জর্ডন তাঁকে সম্মান জানায় 'উইসাম আল-ইসতিকলাল' পদকে, ইরাক 'নুত আল-সুজাত' এবং পাকিস্তান 'সিতারা-ই-বাসালাত' দিয়ে।
ইজরায়েলি এক পাইলট পরে স্মৃতিচারণে জানান, সাইফুল আজম যখন তাঁর বিমানকে গুলি করে নামান, তখন তিনি প্যারাসুটে নেমে আসার সময় দেখেন, সইফুল নিজের বিমানে রোল দিয়ে তাঁকে হাত নেড়ে সম্ভাষণ জানাচ্ছেন। চাইলেই তাঁকে গুলি করে হত্যা করতে পারতেন সইফুল, কিন্তু করেননি। এমন বীরত্ব এবং মানবিকতা ইজরায়েলেও প্রশংসিত হয়।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশে ফিরে সইফুল আজম যোগ দেন দেশের বিমান বাহিনীতে। ২০০১ সালে তাঁকে 'লিভিং ঈগল' উপাধিতে সম্মানিত করে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল হল অব ফেম। পরে রাজনীতিতেও সফল হন। পাবনা থেকে নির্বাচিত হয়ে সংসদ সদস্য হন তিনি।
২০২০ সালে তাঁর মৃত্যুর পরে ইজরায়েলের সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত হয় তাঁর বীরত্বের স্মরণিকা। সেই পাইলট, যিনি শুধু শত্রুকে নামিয়ে দেননি, এক আদর্শ যোদ্ধার মতো শত্রুর প্রাণও বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন।